৪১তম বিসিএস: শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি ও পরীক্ষার হলে করণীয়

মাহমুদ উল হাসান মিজু (বায়ে), আনন্দ কিশোর (মাঝে) ও মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম (ডানে)
মাহমুদ উল হাসান মিজু (বায়ে), আনন্দ কিশোর (মাঝে) ও মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম (ডানে)  © টিডিসি ফটো

কয়েকদিন পরই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৪১তম বিসিএস’র প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। সে লক্ষ্যে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন বিসিএস পরীক্ষার্থীরা। অনেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ঝালিয়ে নিচ্ছে। এজন্য তাদের আলাদা আলাদ পরিকল্পনাও রয়েছে। তবে এসময়ে অনেকে ভুল পরিকল্পনা নিয়ে পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল করে বসেন। এই বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মরত কয়েকজন ক্যাডার।

প্রিলিমিনারি নামক প্রতিযোগিতায় কীভাবে টিকে থাকবো

আগামী ১৯ মার্চ ৪১তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। হাতে সময় নেই বললেই চলে। এই সময়ে অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েন যে কোনটা রেখে কোনটা পড়বো। আমি বলবো শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতিই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শেক্সপিয়ার’র নাটক ‘All's Well that Ends Well’ এর মতো। সকল বই ঘাটাঘাটি করার সময় এখন অতীত। এখন প্রয়োজন আত্নবিশ্বাস ও মানসিক দৃঢ়তা দিয়ে প্রিলিমিনারি নামক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা।

আমি বলবো শুধু একটি ডাইজেস্ট টেবিলে রাখুন এবং বারবার রিভিশন দিন। ‘Budget your time with 200 questions’ এর জন্য কয়েকটা মডেল টেস্ট দিয়ে নিজেকে যাচাই করে নিন। আপনার প্রস্তুতি, আত্নবিশ্বাস ও সময়-জ্ঞানই হোক প্রিলিমিনারি নামক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মূলমন্ত্র। সকলের জন্য রইলো শুভ কামনা।

মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম (৩৬তম বিসিএস এডমিন)
সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, নোয়াখালী

বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ও শেষ সময়ের প্রস্তুতি

৪১তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার মাত্র কিছুদিন বাকি। এ পরীক্ষাই হচ্ছে বিসিএসের সবচেয়ে কঠিন ধাপ। এই কঠিন ধাপ পার হওয়ার জন্য শেষ দিনগুলোর প্রস্তুতি অনেক গুরুত্ব বহন করে। শেষ সময়ে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে অনেকেই হিমশিম খায় কি পড়বো আর কি পড়বো না এটা ভেবে। এ সময়ে একটা গোছানো প্রস্তুতি প্রিলি পাস করার জন্য অনেক বেশি সহায়ক।

এমন অনেক পরীক্ষার্থী দেখেছি যারা সারাবছর প্রচুর পড়াশুনা করেও শেষ সময়ে কৌশলগত ভুলের কারণে পরীক্ষায় পাস করতে পারে না। তাই পরীক্ষার কয়েকদিন আগে নিচের বিষয়গুলো মেনে প্রস্তুতি নিলে বিসিএস প্রিলিতে ভালো করা যাবে বলে আমার বিশ্বাস।

রিভিশন: বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় রিভিশনের কোন বিকল্প নেই। যা কিছু পড়া হোক না কেন এই সময়ে সেই পড়া বিষয়গুলো বার বার রিভিশন দিতে হবে। অনেকে রিভিশনের প্রতি গুরুত্ব কম দেন কিন্তু প্রিলি পাস করার জন্য রিভিশন খুবই প্রয়োজন।

নতুন কোন বিষয় না পড়া: বিসিএস পরীক্ষার অল্প কিছুদিন বাকি থাকতে নতুন কিছু না পড়াই সমীচীন। কারণ নতুন বিষয় পড়তে গিয়ে পুরোনো বিষয়গুলো রিভিশন দিতে না পারলে পরীক্ষার হলে কনফিউশনের সৃষ্টি হয়, আর ভুল উত্তর দাগানোর সম্ভাবনা বাড়ে।

সহজ বিষয়গুলোর প্রতিও সমান গুরুত্ব দেওয়া: বিসিএস প্রিলি পরীক্ষার আগে সহজ বিষয়গুলো পারি এটা ভেবে সেগুলো ভালোভাবে অনেকেই আর পড়ে না। যার ফলে অনেক সময় সেই সহজ প্রশ্নের ভুল উত্তর দাগিয়ে দিয়ে আসে। আর এটা সব সময় মনে রাখতে হবে, একটি কঠিন প্রশ্নের উত্তর পারলে যতখানি এগোনো যায় একটি সহজ প্রশ্নের ভুল উত্তর করলে তার চেয়ে অনেক পিছিয়ে পড়তে হয়। সেজন্য সহজ বিষয়গুলোও সমান গুরুত্ব সহকারে পড়তে হবে।

প্রতিদিন গণিত ও মানসিক দক্ষতা অনুশীলন করা: গণিত ও মানসিক দক্ষতা যত বেশি চর্চা করা যাবে তত বেশি ভুল এড়ানো সম্ভব হবে। তাই প্রতিদিন কিছু সময় এ দুটো বিষয় অনুশীলন করতে হবে।

নিজের দক্ষতা এবং দুর্বলতা সম্পর্কে ভালো ভাবে ধারণা রাখা:  নিজের দক্ষতা এবং দুর্বলতা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে পরীক্ষার হলে যেতে হবে এবং সেভাবেই পরীক্ষা দেওয়ার কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।

নেগেটিভ মার্কিং সম্পর্কে সচেতন থাকা: বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় নেগেটিভ মার্কিং একটা বড় ফাঁদ। এর কারণে অনেক ঠিক উত্তর দাগিয়েও নম্বর অনেক কম পেতে হয়। তাই শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে কোন প্রশ্নের উত্তর দাগানো উচিত না।

মডেল টেস্ট দেওয়া: পরীক্ষার শেষ কয়েকদিন নিয়মিত মডেল টেস্ট দিলে ভালো হয় এতে সময় জান আর পরীক্ষা দেওয়ার দক্ষতা দুটোই বৃদ্ধি পাবে।

আত্মবিশ্বাসী হওয়া এবং টেনশন মুক্ত থাকা: বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার শেষ সময়ে আত্মবিশ্বাসী থাকা আর মনোবল ধরে রাখা খুবই প্রয়োজন। অনেক সময় এ রকম হয়, দুই একটা মডেল টেস্টে কম নম্বর পেয়ে অনেকে ধরে নেন যে আর পাস করা হবে না। কিন্তু এ মনোভাব থেকে বের হয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করার মানসিকতা রাখতে হবে। প্রস্তুতি যাই থাকুক না কেন টেনশন কখনো করা যাবে না।

শরীরের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া: পরীক্ষার শেষ সময়ে পড়াশুনা করতে করতে শরীরের প্রতি খেয়াল রাখতে অনেকে ভুলে যায়। কিন্তু এ সময়ে শরীরের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে হবে। শরীর ভালো না থাকলে প্রস্তুতি যত ভালোই থাকুক না কেন পরীক্ষার হলে নিজের সেরাটা দেওয়াটা কঠিন হয়ে যাবে। আর করোনাকালীন এ সময়ে সর্বোচ্চ সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। যার যতটুকু প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে এই শেষ সময়ে সেটুকুই আরও বেশি শাণিত করুন। সবার জন্য শুভ কামনা রইল।

জেরিদা ওয়াজিফা ফেমী
৩৮তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা

প্রিলির আগে আমার ইন্টার্নশীপ চলছিল। ইন্টার্নশীপ শেষ করে আমি এক মাস পাঁচ দিন ফ্রি টাইম পেয়েছিলাম। ওই টাইমে আমার মনে হয় পুরোটা পড়তে পারব না। আমার টিউশনি করার অভ্যাস থাকায় ম্যাথ, বাংলা গ্রামার, ইংলিশ গ্রামার, বিজ্ঞান এগুলাতে ভালই দখল ছিল। তাই এগুলো কম দেখে মুখস্ত করার টপিক অর্থাৎ বাংলা সাহিত্য, ইংলিশ লিটারেচার, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, বিজ্ঞান, ভূগোল, মূল্যবোধ ও সুশাসন এইসব ডাইজেস্ট থেকে পড়েছি। ম্যাথ-মানসিক দক্ষতায় ভাল দখল থাকায় এটাতে ম্যাক্সিমাম মার্ক তোলার লক্ষ্য ছিল।

মাহমুদ উল হাসান মিজু
৩৮ তম বিসিএস, স্বাস্থ্য ক্যাডার
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সদরপুর,ফরিদপুর

পরিক্ষার হলে কোন কোন কাজটি করা উচিত বা উচিত নয়?

১. শুরুতেরই যেন কঠিন বিষয়ের উত্তর না দেওয়া হয়। এতে করে টেনশন গ্রো হয়। স্নায়ুচাপ বাড়ে এবং পরবর্তীতে পরীক্ষার্থী ভীষন চাপে পড়ে। এজন্য সব সময় সহজ ও জানাশোনা বিষয়ের উত্তর দিয়ে শুরু করা ভালো।

২. বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সাধারণ জ্ঞানের মধ্যে পরীক্ষার্থীর যে বিষয়ে দুর্বল, সেই বিষয়ে সবার শেষে মনযোগ দেওয়া উচিৎ।

৩. আবার ওভার কনফিডেন্ট হওয়াও উচিৎ নয়। যেমন প্রশ্ন একটু সহজ মনে করে সবগুলো গণহারে উত্তর করা উচিৎ নয়। যেহেতু নেগেটিভ মার্কিং রয়েছে সেহেতু আন্দাজের উপর ভর করে বেশি দাগাতে গিয়ে নেগেটিভ মার্কিং এর খপ্পরে পড়ে নাম্বার কাটা যাওয়ার রিস্কে পড়তে হবে।

যেহেতু ২০০ নম্বরের পরীক্ষা, সেহেতু মোট সময়কে মোট প্রশ্নের সংখ্যা দিয়ে ভাগ দিয়ে প্রতিটি প্রশ্নের জন্য কত সময় পাওয়া যাবে তা আগে থেকেই পরীক্ষার্থীর নির্ধারন করে রাখা ভালো। এতে করে সবগুলো প্রশ্ন টাচ করার সুুযোগ নষ্ট হবে না। অন্যথায় যে কোন এক বিষয়ে বেশি সময় দিলে অন্য বিষয়ে সময় প্রয়োজন অনুযায়ী দেওয়া যাবে না।

৫. সাধারণ জ্ঞান, বাংলা এগুলো দাগাতে বেশি সময় লাগেনা। সুতরাং পরীক্ষার আগে থেকেই পরকীক্ষার্থীকে অংক এবং ইংরেজির জন্য সময় নির্ধারিত রাখতে হবে এবং পরীক্ষা হওয়ার অন্তত পক্ষে এক সপ্তাহ আগ থেকে নিজ বাড়িতে প্র্যাকটিস করা উচিৎ।

আনন্দ কিশোর
৩৪তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা
প্রভাষক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, নোয়াখালী সরকারী কলেজ