কীভাবে নেবেন গুচ্ছ ভর্তি প্রস্তুতি (বিজ্ঞান)
এ বছর ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় একসঙ্গে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষার নির্দিষ্ট কোন তারিখ ঘোষণা না করলেও মে থেকে জুনের মধ্যে হওয়ার সম্ভাবনা আছে৷ মে মাসের শেষের দিকে হলেও এখনো হাতে ৩ মাসের মত সময় আছে। এই তিন মাসে প্লান মাফিক পড়লে একটি সিট দখলে নেওয়া সম্ভব। আমি আজকে বিজ্ঞান ইউনিটে কিভাবে ভালো করা যায় তা নিয়েই আলোচনা করবো—
আলোচনার আগে দেখে নেয়া যাক গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার মানবন্টন-
মোট নম্বর- ১০০
বাংলা- ১০ নম্বর
ইংরেজী- ১০ নম্বর
রসায়ন- ২০ নম্বর
পদার্থ- ২০ নম্বর
উচ্চতর গণিত /জীববিজ্ঞান /আইসিটি (যেকোন ২ টির উত্তর করতে হবে)- ৪০ নম্বর।
বিজ্ঞান ইউনিটে ভালো করতে হলে প্রথমেই গুরুত্ব দিতে হবে পাঠ্যবইয়ের বেসিক ধারণাগুলো এবং সময় ব্যবস্থাপনার প্রতি। ভর্তি পরীক্ষায় গণিতে ভালো মার্ক পেতে হলে জোর দিতে হবে, শর্টকাট পদ্ধতিতে প্রশ্ন সমাধানের ওপর। পদার্থ ও রসায়নে অনেক ছোট প্রশ্ন দেওয়া থাকে, যেগুলো দ্রুত ও নির্ভুলভাবে সমাধান করতে পারলে ভর্তিযুদ্ধে নিজেকে অনেক দূর এগিয়ে নেওয়া যায়।
প্রথমবার গুচ্ছ হওয়ায় কোনো প্রশ্ন ব্যাংক বাজারে পাওয়া যায় না তাই প্রশ্ন প্যাটার্ন নিয়ে অনেকের হাজারো প্রশ্ন । ভীত হওয়ার কিছু নাই আমি আস্তে আস্তে একে একে সবগুলো বিষয় নিয়ে কিভাবে প্রিপারেশন নিতে হবে সেটা বিস্তারিত ভাবে লিখছি-
বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি
বাংলা- ১০ নম্বর
বিগত বছরগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গদ্য ও কবিতা অংশ থেকে বেশ কিছু প্রশ্ন প্রতিবার আসে। সেক্ষেত্রে গদ্যের মূল বিষয়, গদ্য লেখক পরিচিতি, তাঁর সাহিত্যকর্ম, জীবনী ইত্যাদি বিষয় জানতে হবে। কবিতা ও উপন্যাসের ক্ষেত্রেও তাই।
ব্যাকরণ অংশের জন্য ভাষা, বাংলা ভাষা, ব্যাকরণ, শব্দ, কারক, সমাস, সন্ধি, বিভক্তি, বচন, বাক্য সংকোচন, বাগধারা, উপসর্গ, অনুসর্গ বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোর ভালো অনুশীলন দরকার।
ইংরেজি- ১০ নম্বর
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে ইংরেজির ক্ষেত্রে গ্রামার অংশে অধিক জোর দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে Parts of speech, Article, Tense, Voice, Narration, Correction, Right form of verbs, Translation, Synonyms, Antonyms, Transformation of sentences, Joining sentence, Comprehension প্রভৃতি বিষয় ভালোভাবে পড়তে হবে। পাশাপাশি ইংরেজ কবি ও সাহিত্যিক, বিশেষ করে যাদের লেখা এইচএসসির সিলেবাসে রয়েছে তাদের জীবনও সাহিত্যকর্ম, লেখার বিষয়, উদ্ধৃতি ইত্যাদি খুঁটিনাটি বিষয়ও মনে রাখতে হবে।
রসায়ন -২০ নম্বর
উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীর রসায়ন মূল পাঠ্য বইয়ের মধ্যে থেকে পদার্থের বিভিন্ন অবস্থা, পর্যায় সারণী, রাসায়নিক গণনা, জারণ-বিজারণ, রাসায়নিক বন্ধন, রাসায়নিক বিক্রিয়া, প্রতীক, সংকেত, যোজনী, গাঠনিক সংকেত, আণবিক সংকেত, রাদারফোর্ড, বোরের পরমাণু মডেল বিষয়গুলো ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে।
একটি বিষয় সবসময়ই মনে রাখতে হবে, এইচএসসির সিলেবাস তো বটেই, ভর্তি পরীক্ষায় সফল হতে হলে বইয়ের সব অধ্যায়ই ভালোভাবে পড়তে হবে। ভর্তি পরীক্ষায় সফল হতে হলে বইয়ের কোনও অধ্যায় এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই।
পদার্থ- ২০ নম্বর
পদার্থবিজ্ঞানে প্রস্তুতির জন্য উচ্চমাধ্যমিক পাঠ্যবইয়ের প্রথম পত্র থেকে গতির সূত্র, মহাকর্ষ ও অভিকর্ষ, স্থিতিস্থাপকতা, তাপ, গতিবিদ্যা, ভেক্টর ও স্কেলার রাশি, বেগ, ত্বরণ, বল ও বলের প্রকারভেদ, মাত্রা ও বিভিন্ন পদ্ধতিতে একক ইত্যাদি পড়তে হবে।
পদার্থ দ্বিতীয় পত্র থেকে স্থিরবিদুৎ, বিদুৎপ্রবাহের তাপীয় ও রাসায়নিক ক্রিয়া, চৌম্বক পদার্থ, আলোর প্রতিফলন, প্রতিসরণ, ইলেক্ট্রন, প্রোটন, পরমাণুসহ ইলেক্ট্রনের প্রতিটি অধ্যায় থেকে গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা, সূত্রাবলি, ঘটনা ও কারণ, প্রভাব, পার্থক্য, গাণিতিক সমস্যার সমাধান জানতে হবে। পদার্থ বিষয়ে কিছু প্রশ্ন গাণিতিক হয়। সে কারণে গাণিতিক সমস্যার সমাধানগুলো ভালোভাবে করতে হবে। এর সঙ্গে গাণিতিক সমাধান দ্রুত করতে পারার বিষয়টিও আয়ত্ত করতে হবে।
আইসিটি- ২০ নম্বর
আইসিটি প্রস্তুতির জন্য উচ্চমাধ্যমিক পাঠ্যবইয়ের গ্লোবাল ভিলেজের উপাদান, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, ক্রায়োসার্জারি, বায়োমেট্রিক্স, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ন্যানো টেকনোলোজি। ডেটা ট্রান্সমিশন (মোড, মাধ্যম, এলিমেন্ট), ওয়াইফাই, ওয়াইম্যাক্স, হাব ও সুইচ, নেটওয়ার্ক, ক্লাউড কম্পিউটিং।
এর পরিপূরক, লজিক গেইট, সার্বজনীন গেইট, এনকোডার, ডিকোডার, হাফ/ফুল এডার বাস্তবায়ন। ওয়েবসাইট কাঠামো, HTML, কম্পাইলার, ইন্ট্রারপোলার, ডেটা টাইপ, অ্যালগরিদম ও ফ্লোচার্ট সেলেসিয়াস ও ফারেনহাইট, লিপ ইয়্যার, সমান্তর ধারা, DBMS ভালো করে পড়লেই এনাফ।
উচ্চতর গণিত- ২০ নম্বর
ইন্টারে যেই বই পড়েছ সেই বই দরকার। ম্যাথ প্রশ্ন একটু মাথা খাটিয়ে সহজেই আনসার করা সম্ভব।গুচ্ছতে জটিল জটিল ম্যাথ করতে দিবে না তোমার ব্যাসিক যাচাই করার জন্য যেসব ম্যাথ লাগে সেগুলাই দিবে। যেমন যদি বুয়েট অথবা বিভিন্ন বিজ্ঞান প্রযুক্তির তুমি যদি প্রশ্নব্যাংক ঘাটো দেখবে ভেক্টরের জন্য সমান্তরাল ভেক্টর আর কোন শর্তে লম্ব হয় সেটা যাচাই করতে দেয় সবসময় তাহলে বাকি টাইপ ম্যাথগুলা একটু কম প্রয়োজনীয় বুঝতেই পারছো। এখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কিভাবে ৩০-৪০ সেকেন্ডে আনসার করা যায় সেটা করাই তোমার কাজ। এরপর সরলরেখা বৃত্ত বলো না কেন কিছু সিলেক্টিভ ম্যাথই দিবে অর্থাৎ টাইপ রিপিট করার সম্ভবনা আছে। ওই ধরণের ম্যাথ করা তোমার দরকার। এরপর ইন্টিগ্রেশনে যদি যাও তাহলে একই জিনিস দেখবে সেটা হলো ক্ষেত্রফল বের করতে দিবে না হয় ছোট খাট ইন্টিগ্রেশন করতে দিবে তবে একটু মাথা খাটানো লাগবে। ডিফারেন্সিয়েশন একই রকমের। বিন্যাস সমাবেশও দেখবে কিছু নিদির্ষ্ট ধরনের প্রশ্ন হয় আর যেহেতু ক্যাললকুলেটর নেই তাই এমন ম্যাথ দিবে না যা হাতে হাতে ক্যালকুলেশন না করতে পারো। ২য় পত্রে স্থিতিবিদ্যা গতিবিদ্যা অনেকের ভয়ের বিষয় তবে ভয় পাবার কারণ নেই এখান থেকে তেমন আহামরি প্রশ্ন হয় না সাধারণ কিছু নিদির্ষ্ট জায়গা থেকে হয়।তবে এখানে সময় নষ্ট করার মত ম্যাথ দেয় যোগাশ্রয়ী প্রোগ্রামিং থেকে কারণ এগুলা সহজ হলেও সময়সাপেক্ষ। তাই এগুলা দেখলে পরে আনসার করার মানসিকতা রাখবে আর অবশ্যই বাসায় প্রচুর প্রাকটিস করবে।জটিলসংখ্যা বাস্তবসংখ্যা প্রশ্ন কিছুটা নিদির্ষ্ট ধরণের হবে এগুলা সহজেই আনসার করতে পারবে।
দ্বিপদী থেকে কোনটি x বর্জিত পদ আর n তম পদ কি এই টাইপের প্রশ্নই আসতে দেখা যায় এবং এগুলার শর্টকাট আছে সেগুলা দেখবে।কনিকে সাধারণত এক স্টেপের অংক দেয় এবং তোমার কাজ হলো শুদ্ধি পরীক্ষা মানে কিছু একটা শর্ত দিবে সে অনুযায়ী যাচাই করে যাবে যে সম্ভব না সেই অপশন বাদ দিয়ে যাবে এবং একই কাজ বৃত্তের জন্য করবে সমীকরণ বের করার কোন দরকার নাই।প্রশ্নব্যাংক সলভ করলেই কথাটা বুঝবে। ত্রিকোনমিতি ১ম+২য় পত্রের থেকে মূলত সূত্রের উপর ভিত্তি করেই ম্যাথ করতে দেয় তবুও বোর্ডে বেশি বার আসা প্রমাণগুলোর আনসার কি সেটা জানা থাকলে পরীক্ষার হলে হয়তো অংক না করেই আনসার করে আসতে পারবে না হলে সূত্রের মারপ্যাঁচের মাধ্যমে নিদিষ্ট উত্তর বের করতে পারবে। সম্ভবনা থেকে মূলত প্রশ্ন আসার সম্ভবনা বেশি সেখান থেকে কথার যে প্যাঁচ দেয় সেগুলো খেয়াল করবা এবং সে অনুযায়ী আনসার করবা। প্রশ্নব্যাংক ঘাটলেই বুঝতে পারবা। পরিশেষে ম্যাথ মূলত প্রচুর প্রাকটিস এর বিষয় এবং এটা করতেও তোমার ভাল সময় লাগবে তাই টাইম ইফিসিয়েন্সি বাড়ানোর জন্য যতবার পারো প্রশ্নব্যাংক সলভ করার বিকল্প নাই।
জীববিজ্ঞান- ২০ নম্বর
জীববিজ্ঞানের দুটি অধ্যায়। উদ্ভিদবিজ্ঞান ও প্রাণীবিজ্ঞান। উদ্ভিদবিজ্ঞান থেকে পাঠ্যবইয়ের সব অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার, আবিষ্কারকের নাম, প্রয়োজনীয় সংজ্ঞা, উদাহরণ, পার্থক্য, উদ্ভিদের শ্রেণীবিন্যাস, মূল, পাতা, গোত্র পরিচিতি, সালোক সংশ্লেষণ, শ্বসন, প্রস্বেদন, টিস্যু, টিস্যুতন্ত্র বিষয়গুলো পড়তে হবে।
প্রাণীবিজ্ঞান অংশের ম্যালেরিয়ার জীবাণু, হাইড্রা, দেহপ্রাচীর, কলা, কোষ, প্রাণীর বৈজ্ঞানিক নাম, পরিপাকতন্ত্র, রক্ত ও রক্ত সংবহনতন্ত্র, রেচনতন্ত্র, পেশিতন্ত্র, প্রাণীর প্রজননতন্ত্র ইত্যাদি বিষয় পড়তে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, প্রতিটি বিষয়ের যতটা সম্ভব খুঁটিনাটি বিষয় যেন আপনার আয়ত্তে থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির সুবিধার্থে বাজারে বিভিন্ন সহায়ক বই পাওয়া যায়। পরীক্ষা ও প্রশ্নপত্রের ধরন জানার জন্য সেগুলো সহায়ক। তবে সঠিক উত্তরগুলো অন্য উৎস থেকেও যাচাই-বাছাই করে নিন। অনেক সময় ছাপার ভুল থাকে।
শেষ করার আগে আবারও বলি, এসএসসি ও এইচএসসির মূল পাঠ্য বিষয় যদি ভালোভাবে পড়ে থাকো তাহলে ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করা সম্ভব।
লেখক: সিইও, ডিইউ মেনটরস