বুয়েট ভর্তি পরীক্ষা: যেভাবে নেবে শেষ ৩ মাসের প্রস্তুতি
বুয়েটের (বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি পরীক্ষা আগামী ১০ জুন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে প্রাথমিকভাবে আবেদনকৃত শিক্ষার্থীদের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেয়া হবে। তাই ৩ মাসের মতো সময় আছে ভর্তিযুদ্ধে নামার। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কাছে এই সময়টুকু অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই ৩ মাসে ভর্তি প্রস্তুতি কেমন হবে তা নিয়েই আজকের আলোচনা—
ভর্তি প্রস্তুতি
বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় উচ্চতর গণিত, পদার্থবিজ্ঞান এবং রসায়ন— এই তিন বিষয়ে ২০০ করে মোট ৬০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা নেয়া হয়ে থাকে। পরীক্ষায় প্রতি বিষয় থেকে ২০টি করে মোট ৬০টি প্রশ্ন আসে, যার প্রতিটির পূর্ণমান থাকে ১০ করে। আর সময় থাকে মোট ৩ ঘণ্টা।
তবে প্রতিবারই প্রশ্নপদ্ধতির কিছু পরিবর্তন আসে। অর্থাৎ সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয় থেকে প্রতিবার প্রশ্ন হয় না। তাই কমন বলে কোনো কিছু নেই। এই চিন্তা ভর্তিচ্ছুদের দূর করতে হবে। তবে কিছু কৌশল অবলম্বন করলে তুমিও এই ভর্তিযুদ্ধে হতে পারো একজন বিজয়ী বীর। এসো জেনে নেয়া যাক বিষয়ভিত্তিক কৌশলগুলো।
পদার্থবিজ্ঞান
পদার্থবিজ্ঞানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তুমি থিওরিগুলো কতটুকু ভালোভাবে বুঝেছ এবং সেগুলো কিভাবে কাজে লাগাচ্ছ। মূলত এই স্বল্পসময়ে থিওরি মুখস্থ করার দরকার নেই, প্রয়োজন সেগুলো কাজে লাগানোর। আমাদের বইগুলোতে কিছু নির্দিষ্ট প্রমাণের জন্য আলাদা করে কিছু সূত্র রয়েছে। তোমার কাজ হচ্ছে শুধু সেই সূত্রগুলো কোন প্রেক্ষিতে আসছে, সেটা ভালোভাবে আয়ত্ত করা। মনে রাখবে বুয়েট ভর্তি পরীক্ষা কখনোই একসূত্রের অংক আসে না। তোমাকে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সেগুলো সমাধান করে উত্তর বের করতে হবে। এজন্য সমস্যাগুলো যেমন বুঝতে হবে, সাথে চর্চাও করে যেতে হবে।
সাধারণত ১ম পত্রে অংক বেশি করে দেয়া থাকে, ২য় পত্রে থিওরি বেশি থাকে। শাহজাহান তপন স্যারের বই এবং ইসহাক স্যারের বইয়ের সমাধানের অংকগুলো অবশ্যই ভালো করে করতে হবে। কারণ দেখা গেছে, এই বইগুলোতে করে দেয়া অংকগুলো এইচএসসির যেকোনো বইয়ের মাঝেই ঘুরে ফিরে করে দেয়া আছে। আর পরীক্ষায় অনেক সময় এই অংকগুলো হুবহু চলে আসে শুধু মান আলাদা থাকে। আর এই সময়ে যে জিনিসটা বুঝতে পারছ না,অবশ্যই যে জানে তার কাছ থেকে বুঝিয়ে নেবে। অংকগুলোর উত্তর বিভিন্ন এককে রূপান্তর করার বিষয়গুলো এখন থেকেই ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে। কেননা একই অংকের ভিন্ন এককে মান আলাদা হয়ে থাকে। আর একটা বিষয় মাথায় রাখবে, অনেক বড় লেখার অংক দেখে ঘাবড়ে যেও না। কারণ অপেক্ষাকৃত সেই অংকগুলোই বেশি সহজ হয়ে থাকে। তবে তুমি কোনো কিছু সম্পূর্ণ না পারলেও সূত্র জেনে থাকলে লিখে দিয়ে আসবে।
রসায়ন
রসায়ন হচ্ছে ভর্তি পরীক্ষায় তোমাকে এগিয়ে দেয়ার অন্যতম এক হাতিয়ার। অনেকেই ভাবছ এটা কিভাবে সম্ভব? আসলেই তাই। একটু মাথা খাটিয়ে পড়লেই তুমি রসায়নে ভালো করবে-এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়। রসায়নের দুই পেপারেই ১ম এবং ৫ম অধ্যায়ের পড়াগুলো প্রায় একইভাবে পড়তে হয়। এখানে বেশিরভাগই জ্ঞাননির্ভর প্রশ্ন থাকে। তাহলে ১০ নাম্বারের প্রশ্নে সেগুলো কিভাবে আসবে? আমাদের যেমন ৪টি আলাদা আলাদা বস্তুর pH লিখতে বলা হয়েছিল। আবার কোন রাসায়নিক বস্তু কিভাবে তৈরি হয় সেটার উপাদানসহ লিখতে বলা হয়েছিল। তাই খুব ভালোভাবে দেখে নিতে হবে। ১ম পত্রে বেশিরভাগ হচ্ছে বিভিন্ন ধরণের বৈশিষ্ট্যভিত্তিক আচরণ মনে রাখা। এই বৈশিষ্ট্যগুলো খুব ভালো করে আত্তস্থ করতে হবে। বারবার লিখে মনে রাখতে হবে। রাসায়নিক সমীকরণ, বিভিন্ন মৌল,যৌগের সংকেত,তাদের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ২য় পত্রে জৈবযৌগের প্রতি ভীতি রয়েছে অনেকেরই। তবে চিন্তা নেই। এখনো অনেক সময় হাতে আছে। এখন থেকেই নোট করে পড়া শুরু করতে হবে। কোন যৌগ থেকে অন্য যৌগ উৎপন্ন হয়, কোন অবস্থায় এক যৌগের পরিবর্তে অন্য যৌগ তৈরি হয়, কোন যৌগের সাথে অন্য যৌগের কি বিক্রিয়া হয় এবং সেই যৌগ থেকে আর কি কি উৎপাদ পাওয়া যায়, বিভিন্ন রাসায়নিক যৌগের রাসায়নিক গঠন,নাম বিক্রিয়া ইত্যাদি তুমি নোট করে পড়ার অভ্যাস রাখলে পরীক্ষার আগে চোখ বুলিয়ে নিলেই হবে। এরপর তোমাকে কিছু অঙ্ক করতে হবে রসায়নের। যেমন তরঙ্গদৈঘ্যের, pH বের করার,রাসায়নিক সাম্যাবস্থার আরো বেশ কিছু। সেক্ষেত্রে সূত্র মনে রাখলেই হয়, বেশি কঠিন আসার সম্ভাবনা খুবই কম।
উচ্চতর গণিত
গণিত বিষয়টা সবটুকু তোমার চর্চার উপর নির্ভর করে। চর্চা ছাড়া এখানে ভালো করার অবকাশ নেই। প্রথমেই বলে নেই, অংক বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বই থেকেই আসে। তাই ঘাবড়ে যেও না। এখন প্রশ্ন হলো কোন বই থেকে? তুমি যদি এস ইউ আহমেদ স্যারের বইয়ের অংক করে থাকো, তাহলেও ঠিক আছে আবার যদি কেতাব স্যার বা বোর্ডের অনুমতিপ্রাপ্ত অন্য বইয়ের অংক করে থাকো তাহলেও কোনো সমস্যা নাই। অংক বোর্ড প্রদত্ত বই থেকেই হয়ে থাকে। তবে একটা কথা মাথায় রাখতে পারো যে, কেতাব স্যারের বইয়ে কিছু বেশি নিয়মের অংক করে দেয়া আছে, যেগুলো মাঝে মাঝে খুব উপকার দেয়।
এবার আসি, কিভাবে পড়লে ভালো করা যেতে পারে?
বুয়েটে মোটামুটি সব অধ্যায় থেকেই প্রশ্ন হয়ে আসে। তাই এটা বলা যাবে না যে এখান থেকে আসবেই। ধরে নিচ্ছি তুমি কলেজে মোটামুটি অনুশীলনীর সব অংক করে এসেছ। তাই এখন তোমার কাজ হচ্ছে সেই অংকগুলো একবার চোখ বুলিয়ে বুয়েটের বিগত প্রশ্নগুলো সলভ করা। কেননা প্রশ্নগুলো তোমার জানাশোনার মধ্যেই আসবে। কিন্তু কিছু ব্যতিক্রম ব্যাপার থাকে এখানে, তোমার কাজ হচ্ছে সেটা খুঁজে বের করে সমাধান করা। তাই যত বেশি প্রশ্নব্যাংকের অংক সলভ করবে ততই তুমি দক্ষ হয়ে উঠবে। তবে অবশ্যই আগে বইয়ের অংক তোমাকে করতে হবে। আর একটি ব্যাপার, অনেক সময় তোমার জানার মাঝে প্রশ্ন আসবে কিন্তু দেখবে যে প্রশ্নের উত্তর দেখতে একটু আলাদা রকমের। ভয় নেই। আগে চেনা উত্তর বের করে সেটা থেকে তুমি চাওয়া উত্তর আনার চেষ্টা করবে। আর ক্যালকুলাসের উপর জোর দিবে। কেননা ক্যালকুলাসের অঙ্ক পারলে ভর্তি পরীক্ষায় তা তোমাদের জন্য অনেক সহায়ক হবে বলে আশা রাখি।
কিছু ব্যাপার যা তোমাকে মাথায় রাখতে হবে
১) হাজার হাজার জনের মাঝ থেকে তোমাকে টিকে থাকতে হবে। সেই মানসিকতা তৈরি করতে হবে এখন থেকেই। কিন্তু তোমাকে ঘাবড়ে গেলে হবে না। তোমাদের নিজের জায়গা নিজের মেধা দিয়ে তা অর্জন করতে হবে।
২) সময় একদম অপচয় করা যাবে না।
৩) কে কত ভালোভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে সেটা একদমই খেয়াল রাখবে না। তুমি শুধু নিজের প্রস্তুতি ভালো করে নিবে।
৪) কোনো কিছু না বুঝলে তা ভবিষ্যতের জন্য রেখে দিবে না। অবশ্যই সময় থাকতে তা বুঝে নিবে।
৫) বুয়েটের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছ,তাই অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে কিভাবে চান্স পাব এসব কখনো ভাববে না। তোমার লক্ষ্য অটুট রাখবে সবসময়।
৬) পড়ার মাঝে হতাশা আসে, সেটা খুব স্বাভাবিক। এই হতাশা কাটিয়ে উঠতে আবার পড়ালেখা ছেড়ে দিও না। একটু অবসর কাটিয়ে আবার পুরোদমে শুরু করবে।
৭) তোমাকে চান্স পেতেই হবে-এই চিন্তা করে পরীক্ষা দিতে যাবে না। তোমাকে নিজের সেরাটা দিতে হবে,এটাই তোমার মূলমন্ত্র।
৮) স্বাস্থ্যের প্রতি অবশ্যই যত্নবান হও।
সকলের প্রতি শুভকামনা থাকল।
লেখক: সিইও, ডিইউ মেনটরস