বিসিএসের ফরম সঠিকভাবে পূরণ করবেন যেভাবে

সরকারী কর্ম কমিশন
সরকারী কর্ম কমিশন  © ফাইল ফটো

গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪৩তম বিসিএসের জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু হয়েছে। চলবে আগামী ৩১ জানুয়ারি সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত। আপনারা যাতে জেনে-বুঝে সঠিকভাবে আবেদন ফরম পূরণ করতে পারেন, সেজন্যই আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে আপনাদের জন্য এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।

প্রথমেই আবেদন সংক্রান্ত ওয়েবসাইটে (bpsc.teletalk.com.bd) গিয়ে ৪৩তম বিসিএসের অনলাইন আবেদন লেখাটাতে ক্লিক করুন। আপনার সামনে সাধারণ ক্যাডার, কারিগরি ক্যাডার এবং উভয় ক্যাডার রেডিও বাটন সম্বলিত তিনটি অপশন দৃশ্যমান হবে। আপনি আপনার যোগ্যতা ও পছন্দ অনুসারে যেকোন একটি রেডিও বাটন সিলেক্ট করে এপ্লাই বাটনে ক্লিক করলে আপনার সামনে পার্ট-১ : ব্যক্তিগত তথ্য সম্বলিত একটা পেজ ওপেন হবে। এবার ফরম পূরণ করা শুরু করুন।

আবেদনকারীরর নাম: এস.এস.সি সার্টিফিকেটে আপনার নাম যেভাবে দেওয়া আছে, ঠিক সেভাবে ক্যাপিটাল লেটারে নিজের নাম লিখুন।
মাতার নাম: এস.এস.সি সার্টিফিকেটে আপনার মাতার নাম যেভাবে দেওয়া আছে, ঠিক সেভাবে ক্যাপিটাল লেটারে মাতার নাম লিখুন।
পিতার নাম: এস.এস.সি সার্টিফিকেটে আপনার পিতার নাম যেভাবে দেওয়া আছে, ঠিক সেভাবে ক্যাপিটাল লেটারে পিতার নাম লিখুন।
জন্ম তারিখ: এস.এস.সি সার্টিফিকেটে আপনার জন্মতারিখ যেটা উল্লেখ আছে, সেটাই লিখুন। জন্মতারিখ লিখতে ভুল করলে আপনার প্রার্থীতা বাতিল হবে।
লিঙ্গ: পুরুষ হলে Male, মহিলা হলে Female, হিজড়া হলে Third Gender রেডিও বাটন চাপুন।
চাকরির তথ্য: যার ক্ষেত্রে যেটা প্রযোজ্য, সেটা সিলেক্ট করুন। উদাহরণস্বরূপ, বেকার হলে Not Employment, রাজস্ব খাতের সরকারি চাকরি হলে Regular Basis under Revenue Budget, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে হলে Autonomous or Semi-autonomous Organization, বেসরকারি হলে Private Organization সিলেক্ট করুন। চাকরিতে আছেন উল্লেখ করলে পরবর্তী সময়ে কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে Non Objection Certificate (NOC) নিয়ে সেটা পিএসসিতে জমা দিতে হবে। অন্যথায় জমা দেওয়া লাগবে না।
উপজাতীয়/সংখ্যালঘু: উপজাতি হলে Yes রেডিও বাটন চাপুন। অন্যথায় No বাটন চাপুন।
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান: মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হলে Child of Freedom Fighter, নাতি বা নাতিনী হলে Grand Child of Freedom Fighter, মুক্তিযোদ্ধা কোটা না থাকলে Non Freedom Fighter সিলেক্ট করুন। যতটুকু জানি, কোটা সুবিধা নাই। এই অপশনটা রাখা হয়েছে শুধু বয়সের জন্য। যে সুবিধাটা ডাক্তাররাও ভোগ করেন।
বৈবাহিত অবস্থা: বিবাহিত হলে Married রেডিও বাটন চাপুন। তারপর স্বামী বা স্ত্রীর নাম লিখুন। বিবাহিত ছাড়া অন্য যাই কিছু হোন না কেন, Single বাটন চাপুন।
জাতীয়তা: বাংলাদেশি। তবে এই অপশনটা সিলেক্ট করাই থাকবে।
জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর: জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলে Yes রেডিও বাটন চাপুন এবং পরিচয়পত্র নম্বর দিন। পরিচয়পত্র না থাকলে No রেডিও বাটন চাপুন। পরবর্তীতে পরিচয়পত্র পেলে আবেদন করে পিএসসিতে জমা দিবেন।
প্রতিবন্ধী: প্রতিবন্ধী না হলে None বাটন চাপুন। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হলে Visually Disabled বাটন চাপুন। শারীরিক প্রতিবন্ধী হলে Physically Disabled বাটন চাপুন।
উচ্চতা: উচ্চতা সেন্টিমিটারে লিখুন। উদাহরণস্বরূপ, আপনার উচ্চতা ৫ ফিট ৭ ইঞ্চি হলে ৫ কে ১২ দিয়ে গুন করে ৭ যোগ করুন। তাহলে আপনার উচ্চতা হলো ৬৭ ইঞ্চি। এখন ৬৭ কে ২.৫৪ দিয়ে গুন করলেই আপনার উচ্চতা সেন্টিমিটারে পরিণত হবে।
ওজন: যেকোন ওজন মেশিনে ওজন মেপে ওজন কিলোগ্রামে (Kg) লিখুন।
বর্তমান ঠিকানা: আপনি যে ঠিকানায় চিঠিপত্র পেতে চান, সেই ঠিকানার প্রযত্নে, গ্রাম, জেলা, উপজেলা, ডাকঘর এবং ডাকঘরের কোড ক্যাপিটাল লেটারে লিখুন। চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পাওয়ার পর বর্তমান ঠিকানায় পুলিশ ভেরিফিকেশন হবে।
স্থায়ী ঠিকানা: স্থায়ী ঠিকানার প্রযত্নে, গ্রাম, জেলা, উপজেলা, ডাকঘর এবং ডাকঘরের কোড ক্যাপিটাল লেটারে লিখুন। চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পাওয়ার পর স্থায়ী ঠিকানায় পুলিশ ভেরিফিকেশন হবে।
যেহেতু বর্তমান ও স্থায়ী উভয় ঠিকানায়ই হয়, তাই বর্তমান ঠিকানা আর স্থায়ী ঠিকানা এক দেওয়া ভালো। তাতে ঝামেলা কম হবে। মেয়েরা নিজের সুবিধামতো বাবার বাড়ি বা স্বামীর বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করতে পারেন।
যোগাযোগের নাম্বার: যে মোবাইল নম্বরে পরীক্ষা সংক্রান্ত এসএমএস পেতে চান, সেই মোবাইল নম্বর লিখুন। কোন সমস্যা হলে কর্তৃপক্ষ যাতে আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারে সেজন্য নিজের নম্বর ব্যবহার করাই ভালো।
Re-type Mobile: আবার একই মোবাইল নম্বর দিন।
পরীক্ষা কেন্দ্র: আপনি যে কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে চান, সেই কেন্দ্র সিলেক্ট করুন। এখন এক্সাম সেন্টার যেটা দিবেন, সেই সেন্টারেই প্রিলিমিনারি ও রিটেন পরীক্ষা দিতে হবে। পরবর্তী সময়ে কেন্দ্র পরিবর্তন করার কোন সুযোগ নাই।
প্রশ্নপত্রের ধরণ: প্রিলিমিনারি পরীক্ষা যদি ইংরেজি মাধ্যমে দিতে চান, তাহলে এই ঘরে ক্লিক করুন। অন্যথায় ক্লিক করবেন না। কারণ পরবর্তী সময়ে ভার্সন পরিবর্তন করতে পারবেন না।

উপরের সকল তথ্য সঠিক দিয়েছেন মর্মে প্রত্যয়ন দিয়ে Next বাটন চাপুন। আপনার সামনে পার্ট-২ : শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্বলিত একটা পেজ ওপেন হবে। আবার পূরণ করা শুরু করুন।

এসএসসি ও সমমান: সার্টিফিকেট অনুসারে পরীক্ষার নাম, বোর্ড, রোল, রেজাল্ট, গ্রুপ এবং পাসের সাল লিখুন।
এইচএসএসসি ও সমমান: সার্টিফিকেট অনুসারে পরীক্ষার নাম, বোর্ড, রোল, রেজাল্ট, গ্রুপ এবং পাসের সাল লিখুন।
মনে রাখবেন, এসএসসি এবং এইচএসসি এর ক্ষেত্রে বোর্ড ও গ্রুপের ঘরে যদি কেউ Others অপশন পূরণ করে তাহলে লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর পিএসসি’র পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার) কে লিখিতভাবে জানাতে হবে।
স্নাতক: সার্টিফিকেট অনুসারে পরীক্ষার নাম, বিষয়, রেজাল্ট, পাসের সাল এবং কত বছর মেয়াদী কোর্স সেটা লিখুন। যারা অ্যাপিয়ার্ড দিয়ে আবেদন করছেন, তারা পরীক্ষা শুরু ও শেষের তারিখ লিখুন। মনে রাখবেন, ২০১৭ সালের পরীক্ষা সেশনজটের কারণে ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত হলেও আপনার পাসের সাল ২০১৭।
স্নাতকোত্তর: প্রযোজ্য হলে টিক চিহ্ন দিন। তারপর সার্টিফিকেট অনুসারে পরীক্ষার নাম, বিষয়, রেজাল্ট, পাসের সাল এবং এবং কত বছর মেয়াদী কোর্স সেটা লিখুন।
মনে রাখবেন, স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর এর ক্ষেত্রে বিষয়ের ঘরে যদি কেউ Others পূরণ করেন তাহলে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরপর পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে পিএসসি'র পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার) কে লিখিতভাবে জানাতে হবে।
Additional Qualification for Teachers’ Training College: প্রযোজ্য হলে টিক চিহ্ন দিন। তারপর সার্টিফিকেট অনুসারে পরীক্ষার নাম, প্রতিষ্ঠানের নাম, রেজাল্ট এবং পাসের সাল লিখুন।
Post Related Subjects: শুধু টেকনিক্যাল ও বোথ ক্যাডারদের জন্য এই অপশনটা প্রযোজ্য, জেনারেলদের জন্য না। আপনার সাবজেক্ট সিলেক্ট করুন।

উপরের সকল তথ্য সঠিক দিয়েছেন মর্মে প্রত্যয়ন দিয়ে Next বাটন চাপুন। আপনার সামনে পার্ট-৩ : Cadre Option সম্বলিত একটা পেজ ওপেন হবে। ক্যাডার চয়েস দেওয়া শুরু করুন।

আপনার যোগ্যতা, পছন্দ ও স্বপ্ন অনুযায়ী ক্যাডার চয়েস দিন। যতগুলো ক্যাডার চয়েস দেওয়া যায়, সবগুলোই দেবেন। তবে যে ক্যাডারে চাকরি হলে যোগদান করবেন না, সেই ক্যাডার চয়েস দেওয়ার কোন দরকার নাই। ক্যাডার চয়েস সম্পর্কিত আপনার তথ্য সঠিক দিয়েছেন মর্মে প্রত্যয়ন দিয়ে Next বাটন চাপুন। আপনার সামনে Application Preview লেখা সম্বলিত একটা পেজ ওপেন হবে।

এতোক্ষণ যেসব তথ্য দিয়েছেন সেগুলো এই পেজে দেখাবে। তথ্যগুলো যাচাই করুন। কোথাও সংশোধনের দরকার হলে সংশোধন করুন। পরবর্তী সময়ে আর সংশোধন করতে পারবেন না।
Validation Code: যেসব ডিজিট বা লেটার দেখা যায়, সেগুলো পাশের বক্সে লিখুন।
ছবি আপলোড করুন: তিন মাসের আগের তোলা নয় এমন ৩০০×৩০০ পিক্সেলের এক কপি রঙিন ছবি আপলোড দিন। ছবির সাইজ যেন ৮০ কিলোবাইটের বেশি না হয়। মনে রাখবেন, সানগ্লাস পড়া, মুখ ও কান ঢাকা ছবি গ্রহনযোগ্য নয়।
নিজের স্বাক্ষর আপলোড করুন: ৩০০×৮০ পিক্সেলের যেমন ইচ্ছা তেমন একটা স্বাক্ষর আপলোড দিন। স্বাক্ষরের সাইজ যেন ৬০ কিলোবাইটের বেশি না হয়। মনে রাখবেন, এখন যেই স্বাক্ষর দিচ্ছেন, চুড়ান্ত সুপারিশের আগে পর্যন্ত একই স্বাক্ষর দিতে হবে সব ডকুমেন্টেই।

সকল তথ্য সঠিক এই মর্মে প্রত্যয়ন দিয়ে Submit the Application বাটনে ক্লিক করুন। এতে আপনি USER ID সম্বলিত একটি Applicant's Copy পাবেন। ডাউনলোড করে সংরক্ষন করুন।
উক্ত USER ID ব্যবহার করে নির্দেশনা অনুযায়ী টেলিটক সিম ইউজ করে পরীক্ষার ফি জমা দেবেন। পরীক্ষার ফি জমা দেওয়া হলে আপনাকে ফিরতি এসএমএসে একটি Password দেওয়া হবে। উক্ত USER ID এবং Password ব্যবহার করে প্রবেশপত্র ডাউনলোড করে নিবেন এবং সংরক্ষণ করবেন।

মনে রাখবেন, ভুলের কারণে বা অন্য যেকোনো কারণে কোন প্রার্থী একাধিকবার ফরম পূরণ করলে এবং ভুল কোন তথ্য দিলে সেই প্রার্থীর সকল আবেদনই বাতিল হবে। এমনকি পিএসসির সকল পরীক্ষায় অযোগ্যসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে। একান্তই যদি নতুন করে ফরম পূরণ করতে হয় তাহলে পিএসসি’র পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার) বরাবর আবেদন দিয়ে আগেরটা বাতিল করতে হবে।

লেখক: বিসিএস ক্যাডার (সাধারণ শিক্ষা)


সর্বশেষ সংবাদ