বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্ন পূরণে করতে হবে যে ১০টি কাজ

হাবিপ্রবিতে প্রায় দুই হাজার আসন রয়েছে। ইনসেটে লেখক
হাবিপ্রবিতে প্রায় দুই হাজার আসন রয়েছে। ইনসেটে লেখক  © ফাইল ফটো

একজন শিক্ষার্থীর জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলো ভর্তি পরীক্ষা। সারা জীবনের লালন করা স্বপ্ন পূরণ হয় ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে। বিগত বছরগুলোয় লক্ষ্য করলে দেখা যায়, হাজী মোহাম্মাদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) প্রায় দুই হাজার আসনের বিপরীতে আবেদন জমা পড়ে এক লাখ ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার। তীব্র এ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় টিকে থাকতে হলে অধ্যবসায়ী ও কৌশলী হওয়ার বিকল্প নেই।

স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ এ সময়টিতে যে কাজগুলো করতে হবে-

১. সুস্থ থাকা: বর্তমান সময়ের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার হলো সুস্থ থাকা। মহামারির এ সময়টিতে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যেমন- মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, ভিড় এড়িয়ে চলা ইত্যাদি। সফলতার জন্য সুস্থতা অপরিহার্য।

২. কী পড়বো, কোথা থেকে পড়বো: প্রথমে ভর্তি পরীক্ষার সিলেবাস ও মানবন্টন সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। এজন্য তোমরা যে কাজটি করতে পারো, সেটি হলো হাবিপ্রবির ওয়েবসাইট (hstu.ac.bd.com) থেকে বিগত সালের ভর্তি পরীক্ষার সার্কুলার ডাউনলোড করবে। সেখানেই বিষয়ভিত্তিক নম্বর বন্টন পেয়ে যাবে। এরপর বিগত সালের প্রশ্নগুলো অবশ্যই ভালো করে দেখে নেবে। তাহলে পরীক্ষা সম্পর্কে তোমার একটি প্রাথমিক ধারণা হয়ে যাবে।

৩. সিলেবাস ভাগ করে নাও: কোনো বিষয় পড়া শুরুর পূর্বে রুটিন করে নাও সপ্তাহের কোনদিন কোন কোন বিষয় পড়বে। তাহলে অল্প সময়ে সিলেবাস শেষ করা সহজ হবে।

৪. পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতে জোর দাও: ভর্তি পরীক্ষায় পদার্থবিজ্ঞানের ওপর ভালো প্রস্তুতি তোমাকে একধাপ এগিয়ে রাখবে। যেহেতু হাবিপ্রবি ভর্তি পরীক্ষায় ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যায় না, সেহেতু এ অংশে তেমন জটিল ক্যালকুলেশনের ম্যাথ খুব একটা আসে না। থিওরি ও সূত্রগুলো ভালোভাবে বুঝতে হবে। শর্ট টেকনিকে কিছু ম্যাথ করার কৌশল আয়ত্ত করতে হবে।

গণিত তোমার জন্য হতে পারে ট্রাম্প কার্ড। গণিতের জন্য ভেক্টর, সরলরেখা, বৃত্ত, জটিল সংখ্যা, বিন্যাস, সমাবেশ, অন্তরীকরণ, যোগজীকরণ অধ্যায়গুলোর ওপর বিশেষ জোর দিতে হবে।

৫. রসায়ন ও জীববিজ্ঞানের জন্য পর্যাপ্ত সময় রাখো: হাবিপ্রবি ভর্তি পরীক্ষায় এ অংশটুকু অনেকে মুখস্থ বিষয় মনে করে থাকেন। কিন্তু আমার কাছে পুরোপুরি মুখস্থ বলে মনে হয় না। রসায়নের বিক্রিয়া বুঝে পড়তে হবে এবং ছোট অংকগুলো সতর্কতার সাথে সমাধান করতে হবে।

জীববিজ্ঞান অনেক ক্ষেত্রে রিপিট হলেও তা পুরোপুরি হয় না। এজন্য বিগত সালের প্রশ্ন পড়ার পাশাপাশি মূল বইও পড়তে হবে।

৬. ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞানকে অবহেলা করো না: একটি মজার বিষয় হলো হাবিপ্রবি ভর্তি পরীক্ষায় সকল ইউনিটেই ইংরেজি থেকে প্রশ্ন হয়। সি ও জি ইউনিটের পরীক্ষার্থীদের জন্য এ অংশটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ অংশে ভালো করতে Parts of speech, appropriate preposition, idioms & phrase, synonym, antonym, analogy, voice change, one word substitution, translation, proverbs -এ টপিকগুলোই যথেষ্ট।

সাধারণ জ্ঞানের জন্য সাম্প্রতিক বিষয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির ওপর সম্যক ধারণা থাকা চাই।

৭. পরীক্ষার আগে মডেল টেস্ট: পরীক্ষা প্রস্তুতিকে পরিপূর্ণ করতে বেশি বেশি মডেল টেস্ট দিতে হবে। এতে তোমার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে। এক্ষেত্রে বাজারে অনেক ধরনের বই পাওয়া যায়, যেগুলো তোমাদের মেধাকে শাণিত করতে পারে। তবে ভুলে ভরা বই থেকে সাবধানে থেকো।

৮. পরীক্ষার কৌশল: আসলে পরীক্ষার কৌশলটি একেকজনের কাছে একেক রকম হতে পারে। কেউ গণিত আগে উত্তর করতে চায় কেউ পরে উত্তর করে স্বাচ্ছন্দবোধ করে। তবে সময় বিষয়টি খেয়াল রেখে অবশ্যই প্রশ্ন উত্তর করতে হবে। মনে রেখো, প্রতিটি প্রশ্নের মান সমান। এক্ষেত্রে বড় অংকের সমাধান করে অবশ্যই তুমি বেশি নম্বর পাবে না।

৯. মানসিকভাবে শক্ত থাকা: ভর্তি পরীক্ষার এ সময়টিতে আত্মপ্রত্যয়ী থেকো। খুব বেশি মানসিক চাপ নেয়ার প্রয়োজন নেই। রুটিন মাফিক চললে অবশ্যই সবকিছুই সহজ হয়ে যাবে। সর্বোপরি মানসিকভাবে শক্ত থেকো।

১০. ফেসবুক, ইন্টারনেট থেকে বিরত থেকো: ফেসবুক, ইন্টারনেট আসক্তি অনেক মূল্যবান সময়কে নষ্ট করে।সামনে সময় খুব বেশি পাবে না। অন্তত আগামী দু’মাস এগুলো থেকে বিরত থেকো। বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলে তখন আর কেউ বাধা দেবে না।

তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, এবার সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা হলে এ-ইউনিট কৃষিবিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন হবে। আর অন্যান্য ইউনিটগুলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইউনিটের আওতাধীন হবে।

পরীক্ষা যেভাবেই হোক না কেন, তোমরা প্রস্তুতি চালিয়ে যাও। সর্বোপরি ভালো থেকো সবসময়। আগামী দিনগুলো তোমাদের হোক। হাবিপ্রবি তোমাদের অপেক্ষায়।

লেখক: শিক্ষার্থী, কৃষি অনুষদ, হাবিপ্রবি


সর্বশেষ সংবাদ