অফিসে কাজের শিডিউল গুছিয়ে রাখুন, অর্ধেক হয়ে যাবে
সনিয়া (ছদ্মনাম) একটা প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকরি করেন। ৬ মাস হলো তার বিয়ে হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৮টায় বের হন অফিসের উদ্দেশ্য আবার যানজট ঠেলে অফিস শেষে বাসায় আসতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। আবার প্রায়শই অফিসের কাজ বাসায় নিয়ে আসেন। রাত জেগে ওসব কাজ করেন। পরিবারের সদস্যদেরও ঠিকঠাক সময় দিতে পারেন না। এসব কারণে সনিয়ার শ্বশুর বাড়ির লোকজন ভালো চোখে দেখছে না। অন্যদিকে সনিয়া এসবের কারণে খুবই মানসিকভাকে কষ্টে আছেন। সনিয়ার মত অনেকেরই এমন অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়। আপনি যদি কর্মজীবী হন, তাহলে এমতাবস্থায় আপনি কিভাবে অফিসের সময় ব্যবস্থাপনা করবেন। তা নিয়েই আজকের আয়োজন।
সঠিক সময়ে অফিসে: আপনি যদি একজন কর্মজীবি মানুষ হয়ে থাকেন। তাহলে আপনাকে সর্বপ্রথম সময় ব্যাবস্থাপনা সম্পর্কে জানতে হবে। একদিকে অফিসের বস খুশি থাকবেন। অন্যদিকে আপনার পরিবারের সদস্যদেরও সময় দিতে পারবেন। আপনার অফিস যদি ১০টায় হয় তাহলে এমন সময় হাতে নিয়ে বাসা থেকে বের হবেন, যাতে ৯টা ৫০ মিনিটে অফিসে উপস্থিত হতে পারেন। এক্ষেত্রে ঢাকা শহর হলে যানজটের কথা ও আপনাকে মাথায় রাখতে হবে।
কাজের শিডিউল আগেই তৈরি: আগামীকাল কী কী কাজ করতে হবে তা আগেই ঠিক করে নিতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ তালিকার প্রথম দিকে রাখবেন। তারপর একটু কম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এভাবে পর্যায়ক্রমে তালিকা তৈরি করলে গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ বাকি থাকবে না। সপ্তাহের প্রতিদিন অফিসে এক রকম কাজ থাকে না। তাই আগামীকাল কী কী কাজ করতে হবে তা যদি আগেই ঠিক করে রাখা যায়। তাহলে কাজের গতি ঠিক থাকে। অন্যদিকে সময়ও বাঁচানো যায়। এ সময় অন্য কাজে লাগানো যায়। যদি একদিন আগে কাজের শিডিউল তৈরি করা সম্ভব না হয়; তাহলে অফিসে সকালে প্রবেশ করে সর্বপ্রথম গুরুত্বানুসারে কাজের তালিকা তৈরি করে নিতে হবে। সম্ভব হলে কাজটা করতে কত সময় লাগবে সেটাও লিখে রাখতে হবে। কাজের তালিকা তৈরি করলে গুরুত্বপূর্ণ কাজ গুলো ঠিকমত করা যায়।
অফিসে খাবার দাবার: সকালের নাশতা যেমন শরীরের জন্য উপকারী ঠিক তেমনি দুপুরের খাবারও গুরুত্বপূর্ণ। তাই দুপুরে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত। খাবার যদি বাসা থেকে নিতে হয় তাহলে এমন খাবার নেয়া উচিত যা সহজে বহন যোগ্য,নষ্ট হবেনা,খুব বেশি ঘ্রান ছড়াবে না। আবার এতে পেটের ক্ষুধা ও মেটাতে হবে। অফিসে ভাত অল্প খেলে ভালো হয়; এতে ঘুম ঘুম ভাব আসবে না। অফিসের দুপুরের খাবারের নির্দিষ্ট সময়েই খাবার খাওয়া উচিত। আর অফিসের অন্য সময় শুকনা খাবার খাওয়ার প্রয়োজন হলেও খাবার খাওয়ার নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে খাবেন। কখনোই কাজের ডেস্কে বসে খাবেন না। এতে অফিসের সহকর্মীরা ভালো চোখে দেখে না।
অফিসে আড্ডার সময়: অফিসে অতিরিক্ত গল্প করা কখনোই ভালো কিছু বয়ে আনে না। আবার সারাদিন একাধারে কাজ করে কারোর সাথে গল্প না করলে,আড্ডা না দিলে কাজে একঘেঁয়েমি চলে আসে। কাজের গতি ঠিক রাখার জন্য আড্ডা দেয়া, কাজের ফাঁকে গল্প করা উচিত। এতে শরীর মন ভালো থাকে আর কাজেও গতি আসে।
যথাসময়ে অফিস থেকে ফেরা: অফিসে সঠিক সময় উপস্থিত হওয়া যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনি যথা সময়ে অফিস থেকেও ফেরা উচিত। অফিসে সহকর্মীদের সাথে পারস্পরিক সম্পর্ক তৈরি করে নিতে হবে। অতিরিক্ত কাজ থাকলে অন্য সহকর্মীদের সাথে ব্যবস্থা করে নেয়া যেতে পারে। কাজ ভাগ করে নিবে যাতে প্রতিদিন অফিস থেকে ফিরতে দেরি না হয়। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে অফিস থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আর আপনি যদি নারী হন তাহলে যদি কোনো কারণে অফিসে রাতে কাজ করতে হয় সেদিন আগেই সিকিউরিটিকে জানিয়ে রাখতে হবে। সিকিউরিটি যেনো কিছু সময় পরপর আপনাকে দেখে যেতে পারে। আর বাসায় ও আধাঘন্টা পর পর ফোন দিয়ে খবর নিতে হবে। তাহলে পরিবারের সদস্যরা স্বস্তিতে থাকবেন।
অফিসের কাজ বাসায় নয়: অফিসের কাজ যাতে বাসায় না নিয়ে আসতে হয় এজন্য অফিসের কাজ অফিসেই শেষ করে আসা উচিত। অফিসের কাজ বাসায় না আনার যথাসম্ভব চেষ্টা করতে হবে। বাসায় এসে পরিবারের সদস্যদের পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। তাহলে আপনার চাকরিটা কখনোই বোরিং মনে হবে না। চাকরিটাকে উপভোগ করতে পারবে। আর পরিবারের সদস্যরা ও তাদেরকে সময় দাও না; দিনভর কাজ, চাকরি নিয়ে পড়ে থাকো এমন অভিযোগ করবে না। মনে রাখবেন জীবনের সময় অনেক কম; এ সময়ে অনেক কাজ করতে হবে। আর তা অবশ্যই পরিকল্পনামাফিকও আনন্দদায়কভাবে করতে হবে। তাহলে জীবন উপভোগ্য হবে। সুন্দর হবে।