প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: এক মাসের প্রস্তুতিই যথেষ্ট
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১২ হাজার সহকারী শিক্ষক পদের জন্য আবেদন করেছেন ২৪ লাখ পাঁচজন প্রার্থী। অর্থাৎ প্রতিটি পদের বিপরীতে প্রতিযোগিতা করবেন ২০০ জন প্রার্থী। জেনে নিন পরীক্ষার আদ্যোপান্ত ও কলা-কৌশল। তবে শুরুতেই বলা রাখা ভাল, আত্মবিশ্বাসী হোন, প্রিলিতে উতরে যাওয়ার জন্য এখনও পর্যাপ্ত সময়। শুধু আজ থেকেই লেগে পড়তে হবে। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস’র এই নিবন্ধে তারই ধারণা তুলে ধরেছেন ৩৫তম বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডার গাজী মিজানুর রহমান।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রথম ধাপে ১২ জেলার প্রার্থীদের পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ এপ্রিলে। সে হিসেবে সময় আছে মাত্র ১ মাস। স্বল্প এ সময়ে কীভাবে নিজেকে প্রস্তুত করবেন?
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে দুই ধাপে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। নিয়োগ পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে প্রার্থীদের মূল্যায়ন করা হয়। প্রথমে নেওয়া হয় এমসিকিউ বা বহুনির্বাচনী পরীক্ষা। এমসিকিউ পরীক্ষায় ৮০ নম্বরের প্রশ্ন আসে। বাংলা, ইংরেজি, গণিত এবং সাধারণ জ্ঞানের প্রতিটি বিষয় থেকে ২০টি করে মোট ৮০টি প্রশ্ন থাকে। প্রতিটি সঠিক উত্তরের জন্য ১ নম্বর যোগ হবে। প্রত্যেক ভুল উত্তরের জন্য কাটা যাবে ০.২৫ নম্বর। পরীক্ষার জন্য বরাদ্দ সময় ৮০ মিনিট বা ১ ঘন্টা ২০ মিনিট। গড়ে প্রত্যেক প্রশ্নের উত্তরের জন্য ১ মিনিট সময় পাওয়া যাবে। এমসিকিউ পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ডাকা হয় মৌখিক পরীক্ষায়। এ ধাপে থাকে ২০ নম্বর। ভাইভায় টিকলে পরবর্তী যাচাই বাছাই শেষে চূড়ান্তভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার (লিখিত) মানবণ্টন আগের মতো থাকলেও এবার কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। প্রশ্নপত্রের সেট নির্ধারণ করা হবে প্রার্থীর রোল নম্বর অনুসারে ডিজিটালাইজড পদ্ধতিতে। যাতে পাশাপাশি বসা প্রার্থীদের সেট না মিলে যায়। পরীক্ষার আগের রাতে জেলা প্রশাসকের কাছে অনলাইনে প্রশ্নপত্র পাঠানো হবে।
এখন অনেকের মনে এমন প্রশ্ন উদয় হতে পারে-
১। ‘এতো জনের মাঝে আমার এই চাকরিটা কি পাওয়া সম্ভব?’
(আবার, কেউ কেউ এটাও ভাবতে পারেন, ‘এতো জনের মাঝে এই চাকরিটা আমার হবেই না!’)
২। আবার কারো মনে এই প্রশ্ন উদিত হতে পারে, ‘এই এতো অল্প সময়ে প্রাইমারি সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব?’
৩। আবার কেউ কেউ বলতে পারেন, ‘যদি এতো অল্প সময়ে প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া সম্ভবপর হয়, তাহলে সেটা কীভাবে নিবো?’
* আমি চেষ্টা করবো উপরিউক্ত প্রশ্নগুলো উত্তর ধারাবাহিকভাবে দেয়ার জন্য-
১। আপনি ভুলে যান কতজন চাকরির পরীক্ষা দিবে সেই সংখ্যাটির কথা। আপনি শুধু নিজের প্রতি এই আস্থা রাখুন যে, ১২ হাজার নয় যদি ১২ জনও নেয় তাহলে তাদের মধ্যে আমি একজন থাকবো।
এই কথা বলছি এই জন্য যে, মোট যে ২৪ লাখ প্রার্থী চাকরি জন্য আবেদন করেছে তার অধিকাংশই আছে এমন যে, কেবল চাকরি পরীক্ষার অভিজ্ঞতা জন্য শুধু এই পরীক্ষাটা দিচ্ছে; চাকরি পাওয়ার জন্য নয়। আবার কিছু এমন আছে শুধু পরীক্ষার জন্যই পরীক্ষা দেয়া, তেমন কোনো প্রস্তুতি নেই বা প্রস্তুতি নিবে না। আবার কিছু এমন আছে যে, প্রস্তুতি নিয়ার ইচ্ছে আছে এবং চাকরিটা পাওয়ার ইচ্ছে আছে কিন্তু কী পড়বে আর কী বাদ দিবে; কোন টপিকটি বেশি Important আর কোন টপিক কম Important যেটি না বোঝার কারণে ১ মাসে এই পরীক্ষাটির ভালো প্রস্তুতি নিতে পারবে না। অর্থাৎ কী পড়বে আর কী বাদ দিবে সেটা বুঝে ওঠতে ওঠতেই পরীক্ষার ডেট চলে আসবে!
তাহলে বোঝা গেলে এই ২৪ লাখ চাকরি-প্রার্থীর মধ্যে মূলত ৫০-৬০ হাজারের মধ্যে মূল প্রতিযোগিতা হবে। এবং সেখান থেকে প্রায় ২৫-৩০ হাজার ভাইভার জন্য কল পাবে বলে আশা করা যায়।
২। হ্যাঁ, এতো অল্প সময়ের মাঝে প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব! (মূলত, যাদের বাংলা ব্যাকরণ, English Grammar ও গণিতের উপর কিছুটা পড়াশোনা আছে তাদের জন্য এই বিষয়টা সহজসাধ্য।)
৩। এবার আসি মূল কথায়, যেভাবে ১ মাসে প্রাইমারি সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি শেষ করবেন-
প্রথমে আপনি ‘প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ Analysis’ বই থেকে ৬****** (6 Star), ৫*****(5 Star) ও ৪**** (4 Star) দেয়া টপিকগুলো কমপক্ষে ৩বার ভালো করে শেষ করুন। কারণ এই টিপকগুলো থেকে পরীক্ষায় অধিকাংশ প্রশ্ন কমন আসবে। বাংলাদেশের প্রথম সাজেশন-ভিত্তিক প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ গাইড ‘প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ Analysis’ বইয়ে প্রাইমারি সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন Analysis করে দেয়া হয়েছে কোন টপিক বেশি Important আর কোন টপিক কম Important ; কোন টপিক থেকে প্রশ্ন বেশি আসে আর কোন টপিক থেকে প্রশ্ন কম আসে।
*মনে রাখবেন, এইবার প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার জন্য সময় একেবারেই কম। এতো বেশি পড়ার সময় নেই। এখন শুধু Important বিষয়গুলো বারবার পড়ে পরীক্ষায় বেশি নাম্বার পেতে হবে। Important বিষয়গুলো বারবার এইজন্য পড়তে হবে যে, যেন পরীক্ষায় কমন পড়লে সঠিক উত্তর মিস না হয়। বিগত সালের প্রশ্ন Analysis করে দেখা গেছে ম্যাক্সিমাম প্রশ্নই কমন টপিক থেকে আসে। কিন্তু পরীক্ষার হলে কনফিউজড হওয়ার কারণে ভুল উত্তর দিয়ে আসে; আর পরীক্ষায় পাশ না করতে পারার আফসোস থেকে যায়! আফসোস করে আর বলে, ‘ইশ! এতো সহজ প্রশ্ন আসলো তারপরও ভালোভাবে উত্তর করতে পারলাম না!
প্রশ্ন কিন্তু সবসময় সহজই হয় দুই-একটা ব্যতিক্রম ছাড়া, কিন্তু পরীক্ষার আগে উলটো-পালটা সব পড়ে পরীক্ষার হলে যাওয়ার পর মাথা ঘুলিয়ে যায় তখন প্রশ্ন কঠিন মনে হয়, পরীক্ষার হল থেকে বের হওয়ার পর আবার সেই প্রশ্নই অনেক সহজ মনে হয়!
এরপর পর্যায়ক্রমে ৩*** (3 Star), ২** (2 Start) টপিকগুলো ভালোভাবে শেষ করুন কমপক্ষে ২ বার।
*এরপর বিসিএস প্রিলির ৩৯তম-৩৫তম পর্যন্ত প্রশ্নের উত্তরগুলো ব্যাখ্যাসহ ভালো করে পড়বেন (তবে ৩৯তম -১০তম পর্যন্ত পড়তে পারলে আরো ভালো হয়)। কারণ বিসিএস প্রিলির বিগত সালের প্রশ্ন থেকে প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন আসে।
*প্রতিমাসে আপডেট থাকার জন্য কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়বেন। বিশেষ করে গত তিন মাসের ৩ মাসের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়বেন।
*এরপর আপনি বইয়ের শেষে অংশে থাকা মডেল টেস্টগুলো ১ ঘণ্টা সময় ধরে দিন। পরীক্ষার হলে যদিও সময় ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট, সেখানে কিছু সময় নষ্ট হয়। তাই বাসায় আরেকটু কম সময় ধরে পরীক্ষা দিতে হবে। পরীক্ষা দেয়ার পর উত্তরপত্রের সাথে মিলিয়ে দেখুন আপনি মোট কত নাম্বার পান নেগেটিভ নাম্বার মাইনাস করার পর। যদি আপনি দেখেন যে মডেল টেস্টে ৭০ বা তারও বেশি নাম্বার পান তাহলে আপনার প্রস্তুতি ভালো হয়েছে বলে ধরে নিবেন। এবং পরীক্ষায় ভালো করবেন বলে বিশ্বাস রাখা যায়।
*যদি মডেল টেস্টে ৫০ থেকে ৬৯ নাম্বার পান তাহলে ধরে নিবেন প্রস্তুতি মোটামুটি হয়েছে, চাকরি পেতে হলে আরো ভালো করতে হবে।
*আর যদি মডেল টেস্টে ৫০ নাম্বারের কম পান ধরে নিবেন আপনার প্রস্তুতি অনেক খারাপ, আরো ভালো করে পড়তে হবে। আর মডেল টেস্টে যে সাবজেক্টে কম নাম্বার পাচ্ছেন সেখানে জোর দিবেন, বেশি বেশি খাতায় লিখে লিখে পড়বেন।
*পড়ার টেবিলে বসে ফেইসবুক, মেসেঞ্জার বা ইন্টারনেট ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবেন। তাহলে পড়ায় মনোযোগ বেশি আসবে এবং পড়া মনে বেশি থাকবে।
প্রাথমিকে পরীক্ষার জন্য ৩০দিন প্রস্তুতির জন্য অনেক সময়। শুধুমাত্র আপনি মুখস্ত করে প্রিলি পাস করে আসবেন এটা সবার জন্য হয় না। বুদ্ধি খাটান; তবে মনে রাখবেন প্রাথমিকের প্রিলিতে আপনি ভুল দাগালে কিন্তু মার্ক কাঁটা যাবে, সুতরাং ক্যালকুলেটেড রিস্ক নিতে হবে। আরেকটা কথা, এই মার্ক যেহেতু আপনার মূল মার্কের সাথে যোগ হবে না, সুতরাং এখানে উতরে যাবার জন্য আপনাকে দুনিয়ার সব কিছুই পারতে/ জানতে হবে না। আর উপরোক্ত পদ্ধতিতে প্রস্তুতি নিলে আশা করি ভালো ফল পাবেন।
আরও পড়ুন:প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রস্তুতি
লেখক: গাজী মিজানুর রহমান, ৩৫তম বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডার।