বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যুদ্ধ: নেট আসক্তি যখন আশীর্বাদ!
পড়াশোনার প্রচন্ড চাপ কিন্তু হাতের নাগালে থাকা মোবাইল-ল্যাপটপটা যেন কোন ভাবে বসতেই দিচ্ছে না পড়ার টেবিলে। ইচ্ছে না থাকলেও যেন পিছু ছাড়ছে না ফেসবুক, মেসেঞ্জার আর ইউটিউবের আসক্তি। ফলে প্রতিনিয়তই জলাঞ্জলী যাচ্ছে নিজের মূল্যবান সময়টুকু। সংকীর্ণ হয়ে আসছে সফলতার দ্বার।
প্রতিদিন ফোনটা থেকে দূরে থাকার শপথ নিয়েও বার বার হচ্ছে সেই একই ভুল। কঠিন মনোযোগ নিয়ে পড়ার টেবিলে বসার পর, পথিমধ্যেই মেসেঞ্জারে টুং করে আসা মেসেজের শব্দে ভেঙে যাচ্ছে মনোযোগ। এক পলকে ফেসবুকটা ঘুরে আসতে গিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আবার ভিডিও দেখে কিংবা ফেসবুকে চ্যাটিং করতে গিয়ে ঘুমাতে হয় গভীর রাতে। এদিকে ঘুম থেকে উঠতে আবার হয়ে যায় দুপুর। ফলে সকালে পড়বো বলে রাখা টপিকটা আর হয় না শেষ!
তাছাড়া আজকাল সময়টা এমন হয়েছে যে, ল্যাপটপ কিংবা মোবাইল ফোনটা ছাড়া একটি দিন কাটাতে হবে অথবা দু’দিন ফেসবুক/ মেসেঞ্জারে ঢোকা যাবে না এমন কথা কল্পনাও করা যায় না। এটা যেন এখন হয়ে পড়েছে দেহের এক অবিচ্ছেদ্য অংশের মতোই। আর এই আসক্তি এখন ছোট্ট কোন পরিসরে আবদ্ধ নয়, দুর্ভাগ্যক্রমে আজ দেশে বৃহৎ একটি অংশ এই সমস্যায় জর্জরিত। সেখানে বাদ যায়নি শিক্ষার্থীরা।
ফলে ডিজিটাল টেকনোলজির মাত্রাতিরিক্ত এই ব্যবহার প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীদের করছে পড়ার টেবিল থেকে বিচ্ছিন্ন। বিশেষ করে অল্প সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিশাল ভর্তি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জন্য এই আসক্তি যেন মরার উপর ফোঁড়ার ঘা!
আবার শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ দিনের এই অভ্যাস ছেড়ে হঠাৎ-ই বের হওয়াটাও অসম্ভব ব্যাপার। ফলে নেট জগতের এই মায়াজালে আটকা পড়ে একদিকে শিক্ষার্থীদের বাড়ছে মানসিক সমস্যা, অন্যদিকে স্বপ্ন পূরণে তৈরি হচ্ছে এক বিশাল বাঁধা। কি করব? কিভাবে হবে বিশাল এক সিলেবালের সমাপ্তি? এমন হাজারো প্রশ্নে হতাশ শিক্ষার্থীরা। সেই হতাশা আবার বসতে দিচ্ছে না তাদের পড়ার টেবিলে। যেন স্বপ্ন ভঙ্গ, লাইফ হেল!
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যুদ্ধে নেমে যারা এমন মায়াজালে আটকা পড়ে হতাশায় ভুগছেন তবে শুধু তাদের জন্যই আজ কমলাকান্তের দপ্তর হইতে শরীষা পরিমাণ কিছু পরামর্শ-
কথায় আছে- ‘মানুষ অভ্যাসের দাস’। সুতরাং নিজের জীবনকে যে অভ্যাসে অভ্যস্ত করা হবে, জীবন সেভাবেই চলবে। আর হবেই না বা কেন, যখন গোটা বিশ্বে আজ প্রযুক্তির জয়জয়কার। হাতের নাগালে বিশ্ব। তখন সেই সুবিধা ভোগ না করা বোকামির থেকে কম কিসে?
তবে সুবিধা ভোগ করতে হবে নিজের মতো। কেননা আপনি যদি ব্যবহারকারী হতে গিয়ে বার বার ব্যবহৃত হন তবে সেই মায়াজালে আপনাকে পড়তেই হবে! সুতরাং এখনই সময় একজন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যোদ্ধা হিসেবে আপনার লক্ষ্যকে স্থির করুন। ফোকাস করুন আপনার আত্মবিশ্বাস ও সৃজনশীলতার দিকে। কাজে লাগান এই উন্নত প্রযুক্তির সুফলকে। আর তার জন্য আপনাকে মাত্র দুটি পথ অবলম্বন করতে হবে।
আসক্তি কে নিজের মতো ব্যবহার:
প্রতিদিন নিজের বই পড়ার পাশাপাশি দিনের নির্দিষ্ট কিছু সময়ে অনলাইনের আসার জন্য নির্ধারণ করুন।
দিনের যেটুকু সময় বই পড়বেন তখন অবশ্যই নিজের কাছ থেকে ল্যাপটপ কিংবা মোবাইলটি নিঃশব্দ অবস্থায় (প্রয়োজনে বন্ধ) এতো দূরে রাখুন যেন ইচ্ছে হলেও নিতে আলিশ লাগে। কেননা মানুষ স্বভাবতই অলস প্রাণী! আপনার স্বপ্ন পূরণে এটা এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেটা আপনি জানেন। সর্বোপরি এই আসক্তির প্রতি আপনার নিজের একটা সজাগ নিয়ন্ত্রণ আনুন। এই আসক্তিকে ছেড়ে দিতে নয়। এটাকে নিজের মতো ব্যবহার করার জন্য আজই সতর্ক হোন।
এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নেট আসক্তিকে কাজে লাগানোর উপায়:
নেট আসক্তির মায়াজালে দিনের উল্লেখযোগ্য সময়টুকু যখন হারিয়ে যাচ্ছেই, ফেসবুক/মেসেঞ্জার/ ইউটিউব যখন পিছু ছাড়ছেই না, একটি পলক ফেসবুকে না দিতে পারলে যখন দিনটি ভাল কাটে না, মেসেঞ্জারে টুং করে মেসেজ আসার পর চ্যাটিং করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যখন কেটেই যায়। তখন দাবার মন্ত্রীর মতো এই সুযোগকে কাজে লাগানোর সময় এখনই। তাই ফেসবুকে চ্যাটিং করতে করতেই নিয়ে ফেলুন আপনার ইংরেজির প্রস্তুতি। কি অবাক লাগছে?
আজকাল বন্ধু বান্ধব কিংবা মানুষের মাঝে ইংরেজিতে কথা বলা, ফেসবুকে ইংরেজিতে ক্যাপশন দিয়ে পোস্ট করা, চ্যাটিংয়ে একটু একটু ইংরেজি লেখা কার না ভালো লাগে। আর আপনি যখন একজন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যোদ্ধা তখন তো ইংরেজি জ্ঞানের বিকল্প কিছুই নেই। সুতরাং যেটা এতক্ষণ টেবিলে পড়লেন এখন সেটা চ্যাটিংএ বন্ধুদের সাথে চর্চা করেন। যেটা বাংলিশ (বাংলা+ইংরেজি) এ লিখতেন সেটা এখন ইংরেজিতে লেখেন। অথবা ইংরেজিতে একটি ছোট্ট গল্প লিখে পাঠিয়ে দিন আপনার মনের মানুষকে (যদি থাকে)।
প্রথম প্রথম ভুল হচ্ছে? কেন হচ্ছে, কোথায় হচ্ছে সেটা বের করে শিখে ফেলুন। লজ্জা লাগছে? তবে কাছের বন্ধুদের নিয়ে চ্যাটিং চালিয়ে যান। প্রয়োজনে বন্ধুদের নিয়ে গ্রুপ খুলে চেষ্টা করুন। সেখানে ঝগড়া করতে ইচ্ছে হলে ইংরেজিতে করেন! মনে রাখবেন আপনি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যুদ্ধে অংশ নিতে যাচ্ছেন। ইংরেজিতে অতটাও কিন্তু আপনি দুর্বল নন।
ফেসবুক এমনি ঘুরছেন তাহলে যুক্ত হয়ে যান ফেসবুকের বিভিন্ন শিক্ষণীয় গ্রুপগুলোতে। সেখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার বিষয়ে অনেক কিছু জানতে ও শিখতে পারবেন। কেননা ডানাকাটা পরী আর শাহরুখ, ক্যাটরিনার পোস্ট করা গল্প পড়ার মতো অযথা সময় এখন আপনার হাতে নেই।
আপনি খুব বেশি ইউটিউবে আসক্ত তবে সেখানে গিয়ে সার্চ করুন আপনার ইংরেজির কোন টপিক অথবা সিলেবাসের বিভিন্ন কবিতার নাম কিংবা সাধারণ জ্ঞানে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ভৌগোলিক নামের মতো এমন কোন টপিক। আর ভিডিও দেখে মুখস্থ করে ফেলুন সেই টপিকটি। প্রয়োজনে ডাউনলোড করে রেখে বার বার দেখুন। কথায় আছে পড়া অপেক্ষা দেখা জিনিস মনে থাকে বেশি!
তাছাড়া ইংরেজির সব কোর্স কমপ্লিট করার মতো কিছু সাইট যেমন English Moja ও Lingumarina। এছাড়াও 10 Minutes School সহ শত শত সাইট আছে যেখানে আপনি নিতে পারেন আপনার ভর্তি পরীক্ষা সকল প্রস্তুতি।
মনে রাখবেন বাবার টাকায় মেগাবাইট কিনে জীবনে অনেক ব্লকবাস্টার মুভি আর সুপারহিট হট গান দেখে রাতে স্বপ্নে হিরো হতে পারবেন, কিন্তু একজন পাবলিকিয়ান হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবেনা। নিজেকে কখন একজন পাবলিকিয়ান হিসেবে পরিচয় দিতে পারবেন না। তাই এখন প্রতিটি মুহূর্ত আপনার লক্ষ্য অর্জনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই লক্ষ্য খুব বেশি দূরে নয়, নয় সেটা অসম্ভব কিছু!
সুতরাং এই আফিমখোর কমলাকান্তের পরামর্শ হলো ছাড়তে না পাড়া নিজের সেই নেট আসক্তিকে এখনি কাজে লাগিয়ে সেটাকে করে ফেলুন আশীর্বাদ। আর হতাশ না হয়ে এগিয়ে যান নিজের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে। কেননা এই আফিমখোর কমলাকান্তও সেই সময় নেট জগতের মায়াজালে আটকা পড়ে হতাশ হয়েছিল। পরে আফিম লইয়া সেই মায়াজাল ভেদ করে আজ হয়েছে পাবলিকিয়ানের একজন সদস্য!
এখন আসক্তি ও আফিমের সাথে অন্য আরও অনেক কিছু আছে। অন্য কিছু কি সেটা জানতে চান, তবে এখনি নেট আসক্তিকে লক্ষ্য অর্জনের হাতিয়ার বানিয়ে আফিমখোর হয়ে যান!!!
লেখক: শিক্ষার্থী ও সাংবাদকর্মী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়