২৯ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৩৪

পড়াশোনায় অমনোযোগী? জেনে নিন মনোযোগ ধরে রাখার উপায়

জেনে নিন পড়াশোনায় মনোযোগ ধরে রাখার উপায়  © সংগহৃীত

ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার চাপ থাকা স্বাভাবিক। তবে নানা কারণে পড়াশোনায় মনোযোগ ধরে রাখা অনেকের জন্যই বেশ কঠিন হয়। পড়তে বসলেই ঘুম আসে। একের পর এক বইয়ের পাতা উল্টালেও পড়ায় মনোযোগটা আর হয়ে উঠে না। এভাবেই কেটে যায় দিনের পর দিন। কিন্তু পরীক্ষার সময় বাড়ে চাপ। কি করব বুঝতে পারি না। কোনটা রেখে কোন বই পড়ব, সেই চাপে আবার পড়ায় মনোযোগ দেয়া দায়। 

অবশেষে যা-তা পড়াশোনা করেই দিতে হয় পরীক্ষা, ফলে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না পেলে বাড়ে হতাশা। এটা স্বাভাবিক কোন হতাশা নয়! এর ফলে বদলে যায় অনেকের জীবনযাত্রার পথ। কেউ কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পৌঁছাতে না পেরে বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ। কেউ আবার পড়াশোনার ইতি টেনে কর্মযজ্ঞে পা বাড়ায়। তাই পড়াশোনায় মনোযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। যার ব্যতিক্রম ঘটলে ছন্দহীন হতে পারে চলার পথ। সুতরাং আপনার পড়াশোনার যদি এমন অবস্থা হয়, তবে জেনে নিন সমাধানের উপায়।

মনোযোগ বাড়াতে চান ?
‘যখন নিজেকে কান্ত মনে হবে বা যথেষ্ট মনোযোগ নেই পড়াশোনায়, তখন কিছুণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পড়লে তা মনে রাখা সহজ হয়।’ টেক্সাসের একটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ৩০০ ছাত্র-ছাত্রীকে নিয়ে করা এক সমীক্ষার ফলাফল থেকে এই তথ্য জানা গেছে। যারা দাঁড়িয়ে পড়াশোনা করেছিলো, তাদের মনোযোগ ছিলো অনেক বেশি যারা বসে পড়াশোনা করেছিলো তাদের তুলনায়। তাছাড়া বন্ধুদের সাথে পড়াশোনা বা আলোচনা করলেও বেশি মনে থাকে অনেকের।

১. পড়ার মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি
পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়াতে একটি মনোরম পরিবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এতে নিজের মধ্যে একটি সন্তুষ্টিবোধ কাজ করে। ফলে নির্দিষ্ট কোন বিষয়ে খুব দ্রুতই মনোযোগ বাড়ে। তাই পড়া শুরু করার আগে অবশ্যই এমন একটি জায়গা নির্বাচন করুন, যেখানে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রয়েছে এবং সেই জায়গায় পড়াশোনা করে আপনি আত্মতৃপ্তিবোধ করেন। কেননা এই মনোভাবটা মস্তিষ্কে সেট হলে পড়াশোনা মনোযোগ বাড়বে।

২. সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ
প্রথমেই লক্ষ্য নির্ধারণ করা জরুরি। কী বিষয়ে কতটা সময় পড়তে চান, সেটা আগে থেকে নির্ধারণ করুন।এতে মনোযোগ ধরে রাখতে সহজ হবে।

৩. পড়ার পরিকল্পনা তৈরি করা
দিনের কোন সময়ে কোন বিষয়ে পড়বেন, সেটা আগে থেকে ঠিক করে নিন। একটি পরিকল্পনা থাকলে পড়ায় গতি ও মনোযোগ থাকবে।

৪. ব্রেনের খাবার
বিভিন্ন বাদাম বিশেষ করে আখরোট, সামুদ্রিক মাছ, শাক-সবজি, ফল, গ্রিন- টিসহ বিভিন্ন চা। যা শরীর এবং মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারী। পড়াশোনার মাঝে পাকা টমেটো বা টমেটোর জুসও খাওয়া যেতে পারে। কারণ মাত্র ১০০ গ্রাম টমেটোতে আছে ২৫ গ্রাম ভিটামিন ‘সি’ এবং পটাশিয়াম। কাজেই পান করতে পারেন ছাত্র-ছাত্রীরা টমেটোর জুস বা অন্য কোন ফল বা সবজির রসও।

৫. ফাস্টফুড
ফাস্টফুডে ব্যবহার করা হয় নানা রকম রাসায়নিক উপাদান, যা অনেকের ক্ষেত্রেই অ্যালার্জির কারণ হয়ে থাকে এবং যা মনোযোগ এবং শরীরে তার প্রভাব ফেলে। জার্মানির খাদ্য বিশেষজ্ঞ ডা. ইয়ুর্গেন শ্লুইটারের মতে, ‘‘দুর্ভাগ্য হলেও সত্যি যে ভুক্তভোগী অনেকেই সেকথা জানতে বা বুঝতে পারে না৷’’ আজকের তরুণদের প্রিয় খাবার ফাস্টফুড এবং মিষ্টি পানীয় হলেও শরীর ও মস্তিষ্কের কথা মনে রেখে সে সব থেকে কিছুটা সাবধান হওয়া উচিত।

৫. ছোট ছোট বিরতি নেওয়া
একটানা পড়ার চেয়ে কিছুক্ষণ পর পর বিরতি নেওয়া বেশি কার্যকর। প্রতিবার ২৫ মিনিট পড়ার পর ৫ মিনিটের বিরতি নিন। এতে মনোযোগ টিকে থাকবে।

৬. লক্ষ্য পূরণের জন্য নিজেকে পুরস্কৃত করা
পড়ার একটা নির্দিষ্ট অংশ শেষ করার পর নিজেকে ছোট ছোট পুরস্কার দিন। যেমন একটি প্রিয় খাবার খাওয়া বা কিছু সময় বিরতি নেওয়া।

৭. পড়ার সময় যেকোন ডিভাইস দূরে রাখুন
বর্তমান সময়ে শিশু থেকে শুরু করে যুবক ও বৃদ্ধ পর্যন্ত স্মার্ট ডিভাইস তথা মোবাইল, ট্যাব বিংবা ল্যাপটপে আসক্ত হয়ে পড়েছে। আনন্দ, বিনোদন কিংবা সরাসরি যোগাযোগের চেয়ে সবাই ভার্চুয়ালি কানেক্টেড থাকতে বেশি সাচ্ছন্দ্যবোধ করে। ফলে এই ডিভাইস গুলো মানুষের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে পড়েছে। তাই এসবের প্রভাব পড়াশোনাতেও পড়ছে। কেননা ফেনটি পাশে রেখে পড়তে বসে, টুং করে একটি টেক্সট কিংবা কোন নোটিফিকেশন আসলে পরক্ষণেই মনোযোগ চলে যায় সেদিকে। 

তারপর খোশগল্প কিংবা কোন তথ্য দেখতে স্ক্রোলিং করতে গিয়ে চলে যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। তারপর আর নতুন করে পড়ার ইচ্ছে হয় না। ফলে চলে যায় সেই দিন। এভাবে সপ্তাহ, এমনকি মাস চলে যায় পড়ার টেবিলে মনোযোগ আর দেয়া হয়ে উঠে না৷ তাই পড়ার সময় এসব জিনিস নাগালের বাহিরে রাখাই শ্রেয়।

সাম্প্রতিক হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির করা একটি গবেষণা প্রকল্প অনুসারে, আমরা যখন একটি সোশ্যাল মিডিয়া টেক্সট পাই, তখন আমাদের মস্তিষ্ক সেই দিকে আগ্রহী হয়ে ওঠে। সেজন্য মূলত ডোপামিন নামক রাসায়নিক উপাদান দায়ী। কেননা খাদ্য, ব্যায়াম ও গেমিং সহ আমরা যা পছন্দ করি, সেগুলোর সাথে ডোপামিন যুক্ত। তাই অধিক পছন্দনীয় কোন জিনিসের এলার্ট পেলে ডোপামিন আমাদের মনোযোগ সেই দিকে ধাবিত করে। 

৮. পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নিশ্চিত করা
মনের সতেজতা ধরে রাখতে ভালো ঘুম ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম প্রয়োজন। এতে মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি উন্নত হয়।

৯. খেলাধুলা বা ব্যায়াম
গবেষকরা মনে করেন, শারীরিক পরিশ্রম অর্থাৎ খেলাধুলা বা ব্যায়াম যে কোনো মানুষকে যে কোনো চাপ থেকে সহজে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। ব্যায়াম বা খেলাধুলা করার ফলে শরীরে হরমোনের প্রকাশ ঘটে কিছুটা  স্বাভাবিকভাবেই তার প্রভাব পড়ে মনোযোগেও।

১০. জানার আগ্রহ নিয়ে পড়ুন
শুধুমাত্র পাশ করতে হবে দেখে পড়ার চেয়ে জানার জন্য পড়ুন। দেখবেন বেশি মনোযোগ দিতে হচ্ছে। কারণ যখন আপনি কোন বিষয়ে জানার জন্য পড়বেন, তখন সেই বিষয়ে আপনার মনোযোগ আরো গভীর হবে। তাছাড়া স্বভাবতই অজানার প্রতি মানুষের কৌতূহল বেশি থাকে। তাই জানার আগ্রহ নিয়ে পড়লে, সেটাতে আগ্রহ বেশি হবে এবং সেটি দীর্ঘদিন স্মৃতিতে সংরক্ষিত হবে।

১১. একটি স্টাডি গ্রুপ তৈরি করুন
পড়াশোনায় মনোযোগ বৃদ্ধির আরেকটি কার্যকরী উপায় হলো দলবদ্ধ পড়াশোনা। কেননা এতে একে অন্যের সৃজনশীল, বুদ্ধিমত্তা ও জ্ঞানের গভীরতা যুক্ত। পারস্পরিক জ্ঞান চর্চার ফলে যখন এসব সৃজনশীল চিন্তার আদানপ্রদান ঘটবে, তখন পড়ায় মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া গ্রুপে ছোট ছোট প্রতিযোগিতায় নিজেকে টিকে রাখতে অধিক পড়াশোনা করতে হবে। সেজন্য পড়ায় গভীরভাবে মনোনিবেশ করে নিজের সৃজনশীল চিন্তার প্রসার ঘটাতে আগ্রহ জন্মাবে।

১২. পড়ায় নিজের ভালো লাগাকে প্রাধান্য দেন
পড়ার ক্ষেত্রে নিজের ভালো লাগাকে প্রাধান্য দিতে হবে। কারণ ভালো না লাগা কোন টপিক জোর করে আত্মস্থ করতে চাইলে বেশি মনোযোগ দেয়া যায় না। বরং সেই মুহুর্তে যা পড়তে ভালো লাগছে, সেটাই পড়লে বেশি মনোযোগ দেয়া সম্ভব।