বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযুদ্ধে জয়ী হতে মানতে হবে যেসব নিয়ম
কিছুদিন পরেই শুরু হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা। এ ভর্তি পরীক্ষা অনেকটা যুদ্ধের মতোই এককথায় ‘বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যুদ্ধ’। তবে এ যুদ্ধে জয় পেতে হলে আপনাকে ‘আদা জল খেয়ে’ নামতে হবে। নামতে হবে বলতে পড়াশোনা করতে হবে।
আপনি উচ্চশিক্ষার জন্য অনার্স, ইঞ্জিনিয়ারিং, মেরিন, টেক্সটাইল ইত্যাদি বিষয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারেন। তবে প্রয়োজন সঠিক প্রস্তুতি। না হলে ভর্তি পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়া অনেক কঠিন। আর সিলেবাস নির্দিষ্ট নয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংকট তো আছেই। সঠিক প্রস্তুতির অভাব ও কিছু ভুলের কারণে অধিকাংশ শিক্ষার্থী দিনশেষে পরাজয় মেনে নেন। তাই এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে এবং দিনশেষে নিজেকে সফল প্রমাণ করতে হলে কিছু কর্মপন্থা মেনে চলা খুবই জরুরি।
সময় ব্যবস্থাপনা জরুরি
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযুদ্ধে জয়লাভ করতে হলে অনেক রণকৌশল শিখতে হবে। সময় ব্যবস্থাপনা তার মধ্যে অন্যতম। কীভাবে কম সময়ের মধ্যে উত্তর করা যায়, তার জন্য প্রয়োজন প্রচুর অনুশীলন। এর জন্য শর্টকাট টেকনিকসহ আরও বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করতে হবে। প্রয়োজনে বাড়িতে বসে সময় দেখে দেখে পরীক্ষা দিতে হবে।
একটি নির্দিষ্ট টাইম সেট করে নিজেকে যাচাই করতে হবে। সময় ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ধারণা না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযুদ্ধে অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাদ পড়ে যান। প্রতিনিয়তই প্রত্যেক বিষয়কে প্রায় সমান গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হয়। কারণ কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পেতে সব বিষয়ে ভালো করার বিকল্প নেই। এজন্য কোনো বিষয়কেই ছোট করে দেখা উচিত নয়।
পড়াশোনার রুটিন তৈরি করা
পরীক্ষায় ভালো করার অন্যতম কাজ হলো একটি সুন্দর পরিকল্পনা তৈরি করা। কী পড়বেন, কতটুকু পড়বেন, কীভাবে পড়বেন– পাঠ পরিকল্পনায় সবকিছু অন্তর্ভুক্ত করুন এবং তা মেনে চলুন।
পাঠ্যপুস্তক ভালোভাবে আত্মস্থ করা
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করতে হলে উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যপুস্তক খুবই ভালোভাবে আত্মস্থ করা জরুরি। উচ্চ মাধ্যমিকের বিষয়গুলো হলো বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার মূলভিত্তি। তাই উচ্চ মাধ্যমিক বইয়ের প্রতিটি বিষয় খুব ভালোভাবে বুঝে পড়তে হবে।
আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রস্তুতি কীভাবে নেবেন?
পা দেওয়া যাবে না দুই নৌকায়
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করা খুবই জরুরি এবং সেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অনুসরণ করে সর্বোচ্চ শ্রম ও মনোযোগ দিতে হবে। অনেক শিক্ষার্থীই একই সঙ্গে মেডিকেল ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। একসঙ্গে অনেক কিছুর প্রস্তুতি নিলে দিনশেষে সঠিক ফল পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। তাই লক্ষ্য নির্ধারণ করে সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া খুবই জরুরি।
নিয়মিত অধ্যয়ন
অনেক সময় দেখা যায়, কিছু শিক্ষার্থী খুব আগ্রহ নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন; কিন্তু মাঝে মাঝে পড়াশোনা বন্ধ করে দেন। যার কারণে পড়াশোনার ছন্দ নষ্ট হয়ে যায়। ফলে একজন শিক্ষার্থী যে বিষয়গুলো অধ্যয়ন করেন, তা পরে ভুলে যান। এক দিন পড়তে না বসলে পরে আর পড়তে ইচ্ছে করবে না। আপনার মনোযোগ নষ্ট করার জন্য এটুকুই যথেষ্ট।
প্রচুর অনুশীলন প্রয়োজন
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতির জন্য প্রচুর অনুশীলন প্রয়োজন। বেশি বেশি অনুশীলনের মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষায় অন্যদের থেকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। যে বিষয়ে ঘাটতি রয়েছে, তা বেশি বেশি অনুশীলনের মাধ্যমে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
প্রয়োজন আত্মবিশ্বাসী হওয়া
ভর্তি পরীক্ষায় লাখ লাখ শিক্ষার্থীর মাঝে টিকে থাকতে আত্মবিশ্বাসী হওয়া খুবই জরুরি। ‘আমি পারব’– এটি নিজের মাঝে ধারণ করতে হবে। এ সময় অন্য কারও সঙ্গে নিজেকে তুলনা করা যাবে না। কারণ অন্যের সঙ্গে তুলনা করতে গিয়ে কিছু শিক্ষার্থী পিছিয়ে পড়েন কিংবা আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। নেতিবাচক চিন্তাভাবনা এবং আত্মসন্দেহ আপনার আত্মবিশ্বাসকে হ্রাস করতে পারে। আপনার শক্তির ওপর লক্ষ্য রাখুন, অনুপ্রাণিত থাকুন এবং নিজেকে বিশ্বাস করুন।
আরও পড়ুন: ঢাবিতে ভর্তির আবেদন শুরু ৪ নভেম্বর, চলবে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত
কোচিংগুলো পরীক্ষার্থীদের যুদ্ধের রাস্তাগুলো চিনিয়ে দেয়। কিন্তু যুদ্ধটা নিজেকেই করতে হয়। বিগত বছরের প্রশ্ন সমাধান করলে একজন শিক্ষার্থী প্রশ্ন পদ্ধতি সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা লাভ করবে। এরপর সে যদি নিজেকে প্রস্তুত করে তুলতে পারে তাহলে কোচিংয়ের কোনো প্রয়োজন নেই। তবে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় অসংখ্য পরীক্ষার মাধ্যমে নিজেকে যাচাই করতে হবে। নিজের দুর্বলতাগুলো খুঁজে বের করতে হবে এবং তা নিজেকেই কাটিয়ে তুলতে হবে।
টপিক বিশ্লেষণ ও বুঝে পড়া
ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করতে হলে সিলেবাস সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে এবং টপিক অনুযায়ী পড়াশোনা এগিয়ে নিতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো ভালোভাবে পড়তে হবে এবং কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে কম সময় দেওয়াই শ্রেয়। যে কোনো টপিকের বেসিক সম্পর্কে খুবই ভালো ধারণা থাকতে হবে এবং টপিক বুঝে মনে রাখার চেষ্টা করতে হবে। ভিত্তি মজবুত থাকলে যে কোনো প্রশ্নের সহজেই উত্তর করা সম্ভব।
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা এলেই একটা যুদ্ধ। হাজার হাজার মেধাবীর মধ্যকার মেধা যাচাইয়ের যুদ্ধ। এ সময় নিজেকে সুস্থ ও দুশ্চিন্তামুক্ত রাখা খুবই জরুরি।