২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২৭

স্মার্টফোনের ব্যাটারি ভালো রাখবেন যেসব উপায়ে

স্মার্টফোনের ব্যাটারি ভালো রাখবেন যেসব উপায়ে  © ইন্টারনেট

বর্তমানে মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী স্মার্টফোন। ছোট থেকে বড় সব বয়সী মানুষই ব্যবহার করছেন এটি। শুধু যোগাযোগের মাধ্যমই নয়, আরও অনেক অনেক কাজে ব্যবহার হচ্ছে স্মার্টফোন। কিছু ভুল ব্যবহারের কারণে স্মার্টফোনের ব্যাটারি তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়। অনেক কারণেই আপনার স্মার্টফোনের ব্যাটারিটি নষ্ট হতে পারে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যাটারি নষ্ট হওয়ার পিছনে আমাদের অসচেতনতাই দায়ী। যেভাবে ফোনের ব্যাটারি বেকাপ ভালো রাখতে পারবেন জেনে নিন।

দীর্ঘ সময় ফোন চার্জে না রাখা

রাতে ফোন চার্জে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়া আমাদের মধ্যে অনেকেরই অভ্যাস। এভাবে সারারাত ফোন চার্জে লাগানো থাকে। ফলে ব্যাটারি নির্দিষ্ট পরিমাণ চার্জ হওয়ার পরও অতিরিক্ত লোড নিতে থাকে। এতে ব্যাটারি গরম হয়ে যায়। এভাবে অল্প কয়েকদিন চলতে থাকলে ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যায়। উন্নত প্রযুক্তিতে যদিও কিছু ফোনে বিশেষ সিস্টেম করা থাকে যাতে সয়ংক্রিয়ভাবে চার্জ বন্ধ হয়ে যায়। এরপরও এভাবে দীর্ঘসময় ফোন চার্জে রাখা উচিৎ না। এটা শুধু ব্যাটারি নয় ফোনের জন্যও এটি বেশ ক্ষতিকর। এমনকি অনেক সময় ব্যাটারি বিস্ফোরণের ফলে আরো বড় ধরনের দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে।

বিভিন্ন চার্জার ব্যবহার না করা

ফোন চার্জ দেয়ার প্রয়োজন হলে আমার অনেক সময় হাতের কাছে যে চার্জার পাই ওটা দিয়েই দিয়ে থাকি। অথচ একেক চার্জার ওই ডিভাইস অনুযায়ী আলাদা ওয়াটের হয়ে থাকে। আর ফোন কোম্পানিগুলো ফোন ও ব্যাটারির ক্ষমতা অনুসারে চার্জারের ওয়াট নির্ধারণ করে থাকে। অতএব একেক সময় একেক ওয়াটের চার্জার ব্যবহারের ফলে ব্যাটারির চার্জ ধারণ ক্ষমতা কমতে থাকে। এ ক্ষেত্রে আমাদের ফোনের নির্দিষ্ট অরিজিনাল চার্জার দিয়ে ফোন চার্জ দিতে হবে। আর অরিজিনাল চার্জার হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে নির্দিষ্ট ওয়াটের আরেকটি নেয়া উচিত।

আরও পড়ুন: ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহারে সতর্ক না হলে চুরি হতে পারে ব্যক্তিগত তথ্য

নিয়ম অনুযায়ী চার্জ দেওয়া

ফোনে চার্জ দেওয়ার সঠিক নিয়ম হলো ৯০% চার্জ হওয়ার পর চার্জ থেকে ফোন বিচ্ছিন্ন করা এবং ফোনের চার্জ ১৫% এ চলে আসলে চার্জ দেওয়া। কিন্তু আমরা ফোনের চার্জ ৫০% এর নিচে আসলেই চার্জে লাগিয়ে দেই। আবার কেউ তো ৯০% এর নিচে নামতেই দেয়না। এর ব্যতিক্রমও দেখা যায়, অনেকে ফোন একেবারে চার্জ শূন্য হয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর চার্জে দেয়। চার্জে লাগানোর এই অনিয়মের কারণে ফোনের ব্যাটারির অনেক ক্ষতিসাধন হয় এবং ব্যাটারির কার্যক্ষমতা কমতে থাকে।

অতএব অনিয়মিতভাবে ফোন চার্জ না দিয়ে ৯০% হলে চার্জ থেকে ফোন বিচ্ছিন্ন করুন এবং ফোন ০% চার্জ পর্যন্ত ব্যবহার না করে ১৫% এ এলেই চার্জে লাগিয়ে নিন।

চার্জে লাগিয়ে ফোন ব্যবহার না করা

ফোন ব্যবহারে আমাদের বাজে অভ্যাসগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো চার্জে লাগিয়েই ফোন ব্যবহার করি। এটি শুধু ব্যাটারির জন্যই না আপনার ফোনের জন্যও বেশ ক্ষতিকর। অনেকেই আছেন চার্জে লাগিয়েই ফোনে কথা বলেন। এটি ব্যক্তির মস্তিষ্কেও ক্ষতিসাধন করে থাকে। এমনকি ফোন বিস্ফোরণের মতো মারাত্মক ঘটনাও ঘটতে পারে চার্জে লাগিয়ে ফোন ব্যবহারের কারণে। ইতোমধ্যে যার প্রমাণ আমরা নিউজপেপার ও ফেসবুকে প্রায়ই দেখতে পাই।

এই সতর্কতাগুলো ছাড়াও কিছু স্মার্টফোনে ব্যাটারি বেকাপ ভালোর রাখার কিছু ট্রিকস—

সাধারণত আমরা যে স্মার্টফোন ব্যবহার করে থাকি সেগুলোর ব্যাটারির চার্জ একাধারে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ব্যাকআপ দিয়ে থাকে। কিন্তু অনেকেই অভিযোগ করেন তার ফোনের চার্জ খুব দ্রুত শেষ হয়ে যায়। ফলে প্রয়োজনীয় কাজগুলো সময়মতো সম্পন্ন করতে পারেন না। মূলত না জানার ফলে আমরা নিজেরাই বিভিন্নভাবে ফোনের চার্জ দ্রুত শেষ করে ফেলি। অথচ একটু খেয়াল রাখলেই আমরা আমাদের স্মার্টফোনের চার্জের স্থায়িত্ব বাড়াতে পারি।

ব্রাইটনেস অটোমেটিক লেভেলে রাখুন

এখনকার স্মার্টফোনগুলোর সাইজ যেহেতু অনেক বড় তাই পুরো ডিসপ্লে আলোকিত করতে অনেকগুলো লাইট ব্যবহার করতে হয়৷ আর এই লাইটগুলো বেশ চার্জ ব্যয় করে। অপরদিকে আমরা অনেকেই ফোনের ব্রাইটনেস বাড়িয়ে ফোন ব্যবহার করে থাকি। বর্তমানে আধুনিক স্মার্টফোনে একটি অ্যাম্বিয়েন্ট লাইট সেন্সর রয়েছে যা আশপাশের আলোর ওপর ভিত্তি করে স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সামঞ্জস্য বজায় রাখে। ফলে আশেপাশের আলো অনুযায়ী ফোনের ব্রাইটনেস কাজ করে। যা ব্যাটারি লাইফকে ঠিক রাখে এবং চার্জ অনেক সময় পর্যন্ত কমে যায় না। এভাবে ব্যবহার করলে ফোনে ব্যাটারির ভালো বেকাপ পাওয়া যায়।

ডার্ক মোড ব্যবহার করুন: ডার্ক মোড ব্যবহার করাব হলে ব্যাটারি অপচয় কম হয়ে থাকে। তাই ডার্ক মোডে ফোন ব্যবহার করতে পারেন।

ইন্টারনেট এবং ওয়ারলেস অ্যাক্টিভিটি বন্ধ রাখা

সবচেয়ে বেশি চার্জ ব্যয় হয় ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে। তবে আমরা কিন্তু সবসময়ই ইন্টারনেট ব্যবহার করি না। ইন্টারনেটের বাইরেও অনেক কাজ করি। অতএব যখন ইন্টারনেটের প্রয়োজন হবে না তখন ডাটা কানেকশন অফ রেখে যাবতীয় কাজ করবেন। এছাড়া ফোনে সব ধরনের ওয়ারলেস অ্যাক্টিভিটি যেমন, ব্লুটুথ, ওয়াইফাই, জিপিএস ইত্যাদি বন্ধ রাখবে। এতে চার্জের অপচয় হবে না।

লাইভ ওয়ালপেপার এড়িয়ে চলা

আমরা অনেকেই ফোন ডিসপ্লের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন লাইভ ওয়ালপেপার ব্যবহার করে থাকি৷ এটিও আপনার ফোনের চার্জ দ্রুত শেষ করে। তাই ফোনের চার্জ বাঁচাতে লাইভ ওয়ালপেপার ব্যবহার না করে সিম্পল ওয়ালপেপার ব্যবহার করুন।

ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ বন্ধ রাখা

যখন কোনো একটি অ্যাপস ব্যবহার করবেন তখন শুধু ওই অ্যাপসটিই চালু রাখবেন। বাকি সব অ্যাপগুলো পুরোপুরি অন্ধ রাখবেন। নতুবা বাকি অ্যাপসগুলোতে কাজ না করলেও ব্যাকগ্রাউন্ডে চলমান থাকে। এতে আপনার অজান্তেই অ্যাপসগুলো চার্জ খরচ করতে থাকবে। তাই বাকি অ্যাপস বন্ধ রাখবেন।

ভাইব্রেশন বন্ধ রাখা

আমরা অনেকেই ফোনের ভাইব্রেশন অপশনটি চালু রাখি। এমনকি টাচ ভাইব্রেশনও অন করে রাখি। ভাইব্রেশন কাজ করে মূলত ফোনের ভেতরে থাকা ছোট একটি মোটর চলার মাধ্যমে। তাই এতে অনেক বেশি চার্জ খরচ হয়। তাই আপনার ফোনটি ভাইব্রেশন মুডে না রেখে জেনারেল অথবা সাইলেন্ট মুডে রাখুন।

পাওয়ার সেভিং মোড ব্যবহার করুন

অ্যান্ড্রয়েড স্মার্ট-ফোনগুলোতে পাওয়ার-সেভিং মোড থাকে। এটি ব্যাকগ্রাউন্ড পরিষেবাগুলো বন্ধ করে, স্ক্রিনের ব্রাইটনেস কম রাখে এবং কিছু ক্ষেত্রে সিপিইউ কর্মক্ষমতা হ্রাস করে ব্যাটারি লাইফ বাড়িয়ে তোলে।