কীভাবে চিনবেন বিষধর সাপ, কামড়ালে যা করবেন
সাপ সরীসৃপ নিরীহ প্রাণী। বাংলাদেশে প্রায় ৮০ প্রজাতির সাপ রয়েছে। কিন্তু তার বিষ সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা নেই। এর মধ্যে সব বিষাক্ত নয়। তবে কিছু রয়েছে অত্যন্ত বিষাক্ত। সাধারণত কিং কোবরা, গোখরা, চন্দ্রবোড়া, শঙ্খচূড়, গ্রিন পিট ভাইপার, রাসেল ভাইপার ইত্যাদি বিষধর সাপ দেখা যায়। এক এক সাপের কামড় এক এক রকম হয়। তবে বিষাক্ত সাপের চোখের মণি ও বিষদাঁত লম্বা হয়ে থাকে।
সাপের কামড়ে মানুষ মারা যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। মূলত দেশের গ্রামাঞ্চলেই সাপের উপদ্রব ও সাপের কামড়ে মানুষের মারা যাওয়ার সংখ্যা বেশি। এছাড়া দেশে ২৩ প্রজাতির সামুদ্রিক সাপও রয়েছে যারা সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের কামড়ে দেয়। বিষধর সাপের কামড় চেনার জন্য প্রধান যেটি দরকার তা হলো সাপটাকে চেনা। এছাড়া বিষ দাঁতের ক্ষতচিহ্ন দেখে ও বিষক্রিয়ায় সৃষ্ট লক্ষণ থেকে বিষধর সাপের কামড় চেনা যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৯১৯ জন সাপের কামড়ের শিকার হয়। এদের মধ্যে বছরে মারা যায় ৬ হাজার ৪১ জন। বেশিরভাগ মানুষ মারা যায় রোগীকে হাসপাতালে আনতে দেরি করায় ও ওঝা বা বেদের মাধ্যমে অবৈজ্ঞানিক উপায়ে চিকিৎসা করানোতে। তাই সাপ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য জানা ও সতর্কতা সাপের কামড় থেকে জীবন রক্ষা করতে পারে।
সাপের বিষের অন্যতম উপাদান হল প্রোটিন ও এনজাইম। এই এনজাইম মানুষের শরীরে প্রবেশ করে লোহিত কণিকাকে ভেঙে ফেলে। যার ফলে রক্তচাপ ভীষণভাবে কমে যায়। পেশি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এছাড়াও নিউরোটক্সিন নামের পদার্থ থাকে যা অত্যন্ত বিষাক্ত।
বিষাক্ত সাপ চেনার উপায়
চোখের মণি দেখতে লম্বাটে হয় আর লম্বাটে বিষদাঁত থাকে।। লম্বাটে বিষদাঁতের মাধ্যমে কামড় দিয়ে মানুষের দেহে বিষ ঢুকিয়ে দেয়।
বিষহীন সাপ চেনার উপায়
দাঁত আছে কিন্তু বিষগ্রন্থি নেই। চোখের মণি গোলাকার। লম্বাটে বিষদাঁত থাকেনা।
সাপের বিষ শরীরে প্রবেশ করলে কী হয়
সাপের বিষ শরীরে ঢুকলে শরীর আস্তে আস্তে অবশ হতে থাকবে। যেখানে সাপ কামড়েছে তা প্রবল জ্বালা করতে শুরু করবে। আর এই জ্বালা বাড়তে থাকবে। ক্ষতস্থান ক্রমাগত ফুলে উঠবে। আশেপাশের সমস্ত কিছু ঝাপসা দেখতে শুরু করবেন। ঢোক গিলতে গেলে অসুবিধা হবে। মাথাঘোরা, বমি ভাব থাকবে।
বিষধর সাপ কামড়ালে করণীয়
সবার আগে সাপের কামড় খাওয়া মানুষকে আশ্বস্ত করবেন। সাপের কামড় মানেই মৃত্যু নয়, তা বোঝাতে হবে। ক্ষতস্থান খুব সাবধানে পরিষ্কার ভেজা কাপড় বা জীবাণুনাশক লোশন দিয়ে মুছে দেবেন।
শরীরের বাকি স্থানে যাতে বিষ ছড়াতে না পারে, তার জন্য ক্ষতস্থানের উপরের অংশ বেঁধে দিতে হবে। রোগীকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাছের হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। সম্ভব হলে কোন প্রজাতির সাপ কামড়েছে। তা জানার চেষ্টা করবেন।
সাপের বিষ শরীরে প্রবেশ করলে কী কী করবেন না?
* ক্ষতস্থানটি বেশি নড়াচড়া করবেন না। এতে বিষ দ্রুত ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে।
* ধারাল অস্ত্র দিয়ে কেটে ক্ষতস্থান থেকে রক্তপাত করানোর চেষ্টা করবেন না।
* চুষে বিষ বের করার চেষ্টাও কখনও করবেন না।
* অ্যাসিড জাতীয় কিছু জিনিস দিয়ে ক্ষতস্থান পোড়ানোর চেষ্টা করবেন না।
* ক্ষতস্থানে চুন বা গাছ-গাছড়ার রসও দেবেন না।
* জোর করে বমি করানোর চেষ্টা করানোও উচিত নয়।
* বিষধর হোক বা বিষহীন, সাপের কামড় খেলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। অযথা ভয় পাবেন না বা না জেনে নিজে নিজে চিকিৎসা করতে যাবেন না।
সাপ তাড়ানোর উপায়
বিষাক্ত সাপের কামড় মানুষকে মৃত্যু পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে। আবার বিষহীন সাপকেও মানুষকে অনেক সময় না বুঝে ভয় পেয়ে মেরে ফেলে। তাই দুইদিক বিবেচনা করেই সাপকে মারার চেয়ে তাড়িয়ে দেওয়া ভালো। প্রাকৃতিক কিংবা এসিড দিয়ে দুইভাবেই সাপকে তাড়ানো যায়।
* সাপ তাড়ানোর অন্যতম কার্যকর পদ্ধতি হল কার্বলিক এসিড। ঘরের চারপাশে কার্বলিক এসিড ছিটিয়ে রাখলে সাপ আসে না ঘরে।
* যদি কার্বলিক এসিড না পাওয়া যায় তাহলে করণীয় কি? এসিড পাওয়া না গেলে কার্বলিক এসিড যুক্ত সাবান দিয়ে কাজ চালানো যায়।
* এছাড়াও সালফারের গুঁড়া বাড়ির চারপাশে ছিটিয়ে দিলে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। সালফারের গুঁড়া সাপের ত্বকের জ্বালার সৃষ্টি করে। তাই সাপ এ থেকে দূরে থাকে।
প্রাকৃতিক বিভিন্ন উপায়েও সাপ তাড়ানো যায়। এবার সে বিষয়ে একটু জেনে নেওয়া যাক।
* রসুন একটি কার্যকর প্রাকৃতিক উপাদান। রসুন পেস্ট করে এর সাথে যেকোনো তেল মিশিয়ে একদিন রেখে দিয়ে বাড়ির চারপাশে স্প্রে করে দেয়া যেতে পারে।
* বাড়ির চারপাশ নিয়মিত পরিষ্কার রাখলে সাপের আনাগোনা থাকবে না। বাড়ির চারপাশে কোনো ঝোপঝাড় হতে দেওয়া যাবে না এবং কোনো প্রকার পানি জমতে দেওয়া উচিৎ নয়।