কদরের রাতে বেশি বেশি পড়বেন যে দোয়া
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫৮ PM , আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৫৬ PM
রমজানের মাসের শেষ দশদিনের বেজোড় রাতকে কদরের রাত বলা হলেও ২৬ রমজান দিবাগত রাতকেই কদরের রাত হিসেবে বেশি মর্যাদার বলে মনে করেন অনেক ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা। এ রাতটি হাজার মাস কিংবা দিনের থেকেও শ্রেষ্ঠ কারণ কদরের রাতকে বিশেষ পর্যাদার বলে গণ্য করা হয়েছে।
রমজানের কোন রাতটি ‘লাইলাতুল কদর’ তা সুনির্দিষ্ট করে বলে দেওয়া হয়নি। এ রাতটি রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে খুঁজতে বলা হয়েছে হাদিসে। আয়েশা রা. বলেন, নবীজি বলেছেন, তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের সন্ধান কর। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০১৭, সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১৬৯)
তাই এ রাতে ইবাদাত বন্দেগিতে মশগুল থাকেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। এ রাতে মহান আল্লাহ বান্দার মুক্তির জন্য নাজিল করেছেন কোরআনুল কারিম। এ রাতের উপস্থিতি কেউ জানতে পারলে তাকে নবীজি (স.) বিশেষ দোয়া পড়তে বলেছেন।
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে আল্লাহর রাসুলকে (সা.) তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আমি যদি কদরের রাত পেয়ে যাই তবে কী দোয়া পড়বো? আল্লাহর রাসুল বলেন, তুমি বলবে, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি’
অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাকারী, তুমি ক্ষমা করতেই ভালোবাসো। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। (সুনানে তিরমিজি: ৩৫১৩)
কুরআনে কদরের নামে একটি সুরাও নাজিল করা হয়েছে। যেখানে আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই আমি এটি নাজিল করেছি ‘লাইলাতুল কদরে।’ তোমাকে কিসে জানাবে ‘লাইলাতুল কদর’ কী? ‘লাইলাতুল কদর’ হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতারা ও রূহ (জিবরাইল) তাদের রবের অনুমতিক্রমে সব সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করে। শান্তিময় সেই রাত, ফজরের সূচনা পর্যন্ত। (সুরা কাদর: ১-৫)
শবে কদরে আরও যে আমল করবেন
শবে কদরের নামাজ: শবে কদরের নফল নামাজ দু‘রাকাত করে যত বেশি পড়া যায় তত বেশি ছওয়াব। নামাজের প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর সূরা ইখলাছ, সূরা ক্বদর, আয়াতুল কুরছী বা সূরা তাকাছুর ইত্যাদি মিলিয়ে পড়া অধিক ছওয়াবের কাজ। এই ভাবে কমপক্ষে ১২ রাকাত নামাজ আদায় করা উত্তম। এর বেশি যত রাকাত আদায় করা যায় ততই ভালো।
কেউ যদি উপরে উল্লেখিত সূরাগুলো না পারেন তাহলে সূরা ফাতিহা পড়ার পর যে সূরাগুলো আপনি পারেন তার মধ্য থেকে প্রতি রাকাতে একটি করে সূরা মিলিয়ে নিতে হবে। এছাড়া সালাতুল তাওবা, সালাতুল হাজত, সালাতুল তাসবিহ নামাজও আপনি পড়তে পারেন। পাশাপাশি রাতের শেষভাগে কমপক্ষে ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ পড়ার অবশ্যই চেষ্টা করবেন।
শবে কদরের নামাজের কোনো সূরা নেই। কিন্তু নামাজের প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর সূরা ইখলাছ, সূরা ক্বদর, আয়াতুল কুরছী বা সূরা তাকাছুর ইত্যাদি মিলিয়ে পড়া অধিক ছওয়াবের কাজ।
ঝগড়া বিবাদ থেকে বিরত থাকা: শবে কদরের অন্যতম ইবাদত হলো দুই ব্যক্তির বিরোধ বা কোনো পরিবারের পারস্পরিক ঝগড়াবিবাদ মিটিয়ে দেয়া। উবাদা ইবনে সামিত (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসুল (সা.) ‘লাইলাতুল কদর’ এর ব্যাপারে খবর দিতে বের হলেন। এ সময় দুজন মুসলমান ঝগড়া করছিলেন। তখন নবী কারিম (সা.) বললেন, ‘আমি আপনাদের ‘লাইলাতুল কদর’ এর ব্যাপারে অবহিত করতে বের হয়েছিলাম। কিন্তু অমুক অমুক ব্যক্তি বিবাদে লিপ্ত হওয়ায় তা (সেই জ্ঞান) উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। আশা করি, উঠিয়ে নেয়াটা আপনাদের জন্য বেশি ভালো হয়েছে। আপনারা সপ্তম (২৭ তম), নবম (২৯ তম) এবং পঞ্চম (২৫ তম) তারিখে এর সন্ধান করুন। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৯)
এশা ও ফজর নামাজ জামাতে আদায়: কদরের রাতের ফজিলত ও বরকত লাভের জন্য বেশিরভাগ মানুষ সারারাত জেগে নফল নামাজ এবং অন্য ইবাদত করে থাকেন। সেক্ষেত্রে অনেকেই যে ভুলটি করেন তা হলো জামাতে নামাজের বিষয়ে গুরুত্ব দেন না। অথচ নফল ইবাদতের থেকেও ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি এশা ও ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করে, সে যেন সারা রাত দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৫৬)
কোরআন তেলাওয়াত করা: পবিত্র কোরআন এ রাতেই নাজিল হয়। তাই কোরআন তেলাওয়াত ও এর বিধান পালনের মাধ্যমেই এ রাত অতিবাহিত করা। কোরআন-সুন্নাহর অনুসরণে ইবাদত-বন্দেগিতে শেষ দশক অতিবাহিত করা।
গোনাহ থেকে মাফ চাওয়া: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে আল্লাহর কাছে গোনাহ মাফের দোয়া শিখিয়েছিলেন। তাই মুমিন মুসলমান রমজানের শেষ দশকে এ দোয়া বেশি বেশি পড়বেন-
অতিরিক্ত না ঘুমানো: রমজানের শেষ দশকের ইবাদাত-বন্দেগি ও ইতিকাফের জন্য বিশ্বনবী কোমরে কাপড় বেঁধে লেগে যেতেন। কারণ একটাই- লাইলাতুল কদর তালাশ করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন। কারণ শেষ দশকের যে কোনো বিজোড় রাতেই লাইলাতুল কদর নিহিত থাকে।
অধিক খাবার গ্রহণ না করা: রাত জেগে ইবাদাত-বন্দেগি করতে সুস্থ সবল দেহ ও মন প্রয়োজন। মাত্রাতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করলে লাইলাতুল কদরের ফজিলত ও তাৎপর্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বেশি খাওয়ার ফলে ঘুম ও ক্লান্তিতে ইবাদতে বিঘ্ন ঘটতে পারে।