ভালো তরমুজ চিনবেন কীভাবে, জেনে নিন
বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। গ্রীষ্মের রসালো এই ফল পানিশূন্যতা রোধ করে। গরমে অনেকের প্রিয় ফল তরমুজ। তবে কিনতে গিয়ে মিষ্টি ও রসালো তরমুজ কোনটা সেটা নিয়ে দ্বিধায় পড়েন অনেকেই। দেখেশুনে কিনে বাসায় নিয়ে আসার পর দেখা যায় রসহীন ও ফ্যাকাসে তরমুজ দিয়ে দিয়েছেন দোকানি। কিন্তু খানিকটা যাচাই করার কৌশল থাকলেই সহজেই কিনতে পারবেন ভালো, রসালো, লাল ও মিষ্টি তরমুজ।
তরমুজে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন এ, বি, সি। ভিটামিন এ শুধু ত্বক নয়, চোখ, চুল, নখ, দাঁতসহ সব অঙ্গের পুষ্টির জন্য খুবই জরুরি। গ্রীষ্মকালীন এই ফলে পানি রয়েছে শতকরা প্রায় ৯৩-৯৫ ভাগ। কোলাজেন আমাদের ত্বকের সংকোচন রোধ করে। তরমুজ আমাদের ত্বকের কোলাজেন বৃদ্ধি করে।
জেনে নিন কেনার সময় কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখলে কিনতে পারবেন মিষ্টি তরমুজ।
* প্রথমেই তরমুজ কেনার আগে বেছে বেছে গোলাকৃতি বা ওভাল আকৃতির কিনা দেখে নিবেন। অপেক্ষাকৃত ছোট, বাঁকা তরমুজ কিনবেন না। সাধারণত পর্যাপ্ত পানি না পেলে তরমুজ ছোট ও বাঁকা হয়ে থাকে। এসব তরমুজ মিষ্টি ও রসালো হয় না।
* তরমুজের বোটা সবুজ হলে বুঝবেন গাছপাকা। বোটা কালো বা হলুদ হলে তরমুজ অনেক দিন আগে কাটা। চার আঙুল দিয়ে আঘাত করলে মোটা শব্দ হলে তরমুজ পাকা চিকন শব্দ হলে তরমুজ কাচা।কারণ তরমুজ পাকলে সুগার বেড়ে মাঝে ভ্যাকিউল তৈরি হয় তাতে শব্দ বাড়ে।
* ভ্যারিগেটেড তরমুজ যেটা কৃষক বাংলালিংক বলে সেটার ডোরা কাটা গুলোর মাঝে ফাঁক বেশি হলে তরমুজ ভালো হবে। তরমুজ মাটির সাথে লেগে থাকা অংশ হলুদ হলে তরমুজ পাকা। ওই অংশ সবুজ হলে ওটা কাচা। হলুদাভ ফিল্ড স্পট আছে এমন তরমুজ কিনবেন।
* ডেনসিটি বেশি মানে সাইজের তুলনায় ওজন বেশি এমন তরমুজ কিনবেন।
তরমুজের গায়ে বাদামী বর্ণের জালিকা থাকলে কিনবেন। সিমেট্রিকাল সাইজ শেপ দেখে কিনবেন। ক্ষত, ডিপ্রেসড থাকলে কিনবেন না।
* তরমুজের গায়ে টোকা দিয়ে দেখতে পারেন। ভারি আওয়াজ আসলে সেটি রসালো ও পাকা। অতিরিক্ত ভারী আওয়াজ হয় তাহলে বুঝবেন তরমুজ বেশি পেকে গিয়েছে। আর তরমুজের মাথার দিক হাত দিয়ে টিপে দেখুন। যদি বেশি শক্ত হয় তাহলে বুঝবেন কাঁচা রয়েছে। আবার বেশি নরম হলেও বুঝবেন বেশি পেকে গিয়েছে। হালকা নরম হলে তবেই কিনবেন।
চলুন জেনে নিই তরমুজের স্বাস্থ্য উপকারিতা
হার্টের সুস্থতায়
তরমুজ খেলে ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলকে দূরে রাখা যায়, যা হার্ট সংক্রান্ত রোগগুলোকে প্রতিরোধ করতে পারে। তরমুজে উপস্থিত সিট্রোলিন হার্টের জন্য খুবই ভালো।
শরীর আর্দ্র রাখতে
তরমুজে রয়েছে ৯০ শতাংশ পানি, যা শরীরকে বেশ আর্দ্র রাখে। তেমনি এতে পটাশিয়ামের মতো ইলেকট্রোলাইট থাকে। তাই এই ফল গরমে বেশ স্বাস্থ্যকর। গরমে স্বস্তি পেতে তরমুজ টুকরো করে খান বা জুস বানিয়ে পান করতে পারেন।
হজম ক্ষমতা বাড়াতে
তরমুজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি, যা হজম ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া এর ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ও খাবার হজম করিয়ে পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
ক্যানসার প্রতিরোধ
তরমুজে থাকা লাইকোপেন ক্যানসারের প্রবণতা অনেকটা কমিয়ে আনে। এই লাইকোপেনের জন্যই তরমুজের রং গাঢ় লাল হয় এবং এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর, যা ক্যানসার রোধ করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
তরমুজ ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। এ ছাড়াও এতে রয়েছে ভিটামিন বি৬, যা অ্যান্টিবডি গঠন করতে সাহায্য করে। এর ফলে শ্বেত রক্ত কণিকা সঠিক পরিমাণে তৈরি হয়।
দৃষ্টিশক্তি লোপ প্রতিরোধ
তরমুজে থাকা উপাদান লাইকোপেন চোখের উপকারে আসতে পারে। বয়সজনিত দৃষ্টিশক্তি লোপ একটি সাধারণ সমস্যা, যা থেকে বয়স্করা অন্ধত্বের শিকার হতে পারেন। লাইকোপেন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহবিরোধী হিসেবে ভূমিকা রাখায় এটি বয়সজনিত দৃষ্টিশক্তি লোপ হওয়া প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। যদিও এ বিষয়ে খুব বেশি গবেষণা হয়নি।
ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখায় সহায়ক হতে পারে
তরমুজে থাকা ভিটামিন ‘এ’ ও ভিটামিন ‘সি’ ত্বক সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ভিটামিন ‘সি’ ত্বককে কোমল ও চুল শক্ত রাখতে সহায়তা করে। অন্যদিকে ভিটামিন ‘এ’ ত্বকে নতুন কোষ গজানোর পাশাপাশি কোষের ক্ষতিপূরণে সহায়তা করে।
২০১৯ এর এক গবেষণায় দেখা গেছে তরমুজ শরীরের ওজন কমাতে ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।