রাবি ভর্তি প্রস্তুতিতে মাথায় রাখতে হবে যেসব বিষয়

মো. মুজাহিদ হাসান
মো. মুজাহিদ হাসান  © টিডিসি ফটো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মুজাহিদ হাসান। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় ঢাবি, রাবি, গুচ্ছসহ পেয়েছেন একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবিক বিভাগ থেকে ‘বি’ ইউনিটে ২২৬ তম এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবিক বিভাগ থেকে ‘এ’ ইউনিটে ৬ষ্ঠ স্থান অর্জন করেন তিনি। সম্প্রতি তার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রস্তুতির গল্প নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। কথাগুলো শুনেছেন— জান্নাতুল ফেরদৌস।

রাবিতে চান্স পাওয়ার জন্য আপনি কীভাবে পড়েছেন, দৈনন্দিন রুটিন কী ছিল?
মো. মুজাহিদ হাসান: এইচএসসি পড়াকালীন আমি বাংলা এবং ইংরেজি বোর্ড পরীক্ষার প্রস্তুতির পাশাপাশি, ভর্তি পরীক্ষার জন্য কীভাবে পড়তে হবে এগুলো প্রশ্ন ব্যাংক সমাধান করার মাধ্যমে ঠিক করে নিয়েছিলাম। সেভাবে বাংলা এবং ইংরেজি এইচএসসি পরীক্ষার আগে সুন্দর করে ড়ে রেখেছিলাম। এরপর এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে বাংলা ইংরেজি এবং সাধারণ জ্ঞান সামঞ্জস্য করে পড়েছিলাম। বাংলা ইংরেজি আগে থেকে পড়া থাকার জন্য সময় কম দিলে হয়ে গিয়েছিল, এটা আমাকে অন্যদের থেকে এগিয়ে রেখেছিল।

ভর্তি পরীক্ষা সফলতা পাওয়ার কোনো সহজ টেকনিক আছে কী?
মো. মুজাহিদ হাসান: ভর্তি পরীক্ষায় সফল হতে অবশ্যই নিয়মিত পড়তে হবে কোনোদিন খুব বেশি সময় নিয়ে অনেক পড়ে, আবার কোনোদিন না পড়ালেখা করলে সামঞ্জস্য নষ্ট হয়, পড়ালেখার গতি নষ্ট হয়। আমার ক্ষেত্রে প্রতিদিন আমি ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা পড়ালেখা করতাম এবং ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা ঘুমাতাম। যেহেতু আমি স্মার্টফোন ব্যবহার করতাম না তাই সময় নষ্ট হতো না খুব একটা। ভর্তি পরীক্ষায় সফল হতে হলে অবশ্যই কঠোর পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকতে হবে এবং সে অনুযায়ী পড়ালেখা করে যেতে হবে। সীমিত সময় থাকে তাই সময় নষ্ট করা যাবে না কোনোভাবে।

ভর্তি পরীক্ষায় কোচিং কতটা গুরুত্বপূর্ণ? যাদের কোচিং করার সুযোগ নেই তারা কীভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে?
মো. মুজাহিদ হাসান: ভর্তি পরীক্ষার জন্য মূলত আমি খুব বেশি পরিচিত নয় এমন একটা কোচিং সেন্টারে ভর্তি হই। কয়েকটা ক্লাস করার পর আমি আর কোচিং এ যায়নি নিজে রুটিন করে পড়তাম রুটিনটা ছিল মূলত প্রতিদিন কতটুকু পড়বো এটা আগে থেকে ঠিক করে নিতাম এবং টার্গেট পূরণ না হওয়া পর্যন্ত পড়তাম। কেউ যদি কোন কারণে কোচিং করার সুযোগ না পায় তাহলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। মূলত সময়কে কাজে লাগাতে হবে এটাই মূল কথা। নিয়মিত পড়ালেখা করলে এবং নিজেকে যাচাই করার জন্য ঘরকে পরীক্ষার হল মনে করে মডেল টেস্ট সমাধান করলে অবশ্যই পরীক্ষা ভীতি কাটবে এবং প্রশ্ন সমাধান করার দক্ষতা বাড়বে।

গাইড বই নাকি পাঠ্য বই—কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ?
মো. মুজাহিদ হাসান: এবার আসি কি কি বই পড়তে হবে , আমি মূলত বাজারে প্রচলিত বেশ কয়েকটি বই কিনেছিলাম কিন্তু বাংলার জন্য আমি মূল বইয়ের বাইরে কিছু পড়িনি বাংলা ব্যাকরণের জন্য নবম-দশম শ্রেণীর পাঠ্য বই (মনির চৌধুরি) ওটা পড়েছিলাম এবং প্রশ্ন সলভ করার জন্য গাইড বইয়ের হেল্প নিয়েছিলাম। ইংরেজির জন্য পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি গ্রামার বই পড়েছিলাম।

অনেক শিক্ষার্থীকে একইসাথে একাধিক ইউনিটের প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়। যারা একই সাথে একাধিক ইউনিটের প্রস্তুতি নেয়, তাদের জন্য পরামর্শ কি?
মো. মুজাহিদ হাসান: অনেকে আছে যারা একই সাথে একাধিক ইউনিটের প্রস্তুতি নিতে চায় তাদের করণীয় প্রথমে ওই সকল ইউনিটের পরীক্ষার বিষয়গুলো দেখে নেওয়া স্ব ইউনিটের প্রস্তুতিতে বেশি জোর দেওয়া উচিত এবং অন্য ইউনিটে কি কি আসবে এগুলো দেখে নিয়ে সামঞ্জস্য রেখে পড়াশোনা করলে ইনশাআল্লাহ  সফল হওয়া যাবে।

পরীক্ষা চলাকালীন ১ ঘণ্টা/দেড় ঘণ্টায় কোন ভুল করা উচিত নয়?
মো. মুজাহিদ হাসান: মাথা ঠান্ডা রেখে পরীক্ষা দেওয়া সবার জন্য সম্ভব হয় না যারা মাথা ঠান্ডা রেখে পরীক্ষা দিতে পারে তারাই মূলত সফল হয়। প্রথমে নাম, রোল নম্বরসহ প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করার সময় দেওয়া হয় এগুলো অবশ্যই খুব সুন্দর ভাবে মাথা ঠান্ডা রেখে পূরণ করতে হবে এখানে ভুল হলে সেটা পুরো পরীক্ষার উপর প্রভাব ফেলে যার জন্য পরীক্ষা খারাপ হয় তাই অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে প্রশ্ন পাওয়ার পর আমি যে বিষয়ে সব থেকে ভালো সেই বিষয় দিয়ে উত্তর করা শুরু করব তাহলে সময় বাঁচবে এবং মানসিকভাবে অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকা যাবে। পরীক্ষা চলাকালীন অবশ্যই মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে এবং যদি কোন এমসিকিউ ভুলে ‘ক’ পূরণ করতে গিয়ে ‘খ’ বা অন্যটা পূরণ করা হয়ে যায় তাহলে চিন্তা না করে অন্যগুলোতে মনোযোগ দেওয়া উচিত। না হলে ওই ছোট ভুলের জন্য পুরো পরীক্ষায় প্রভাব পড়বে যেটা পরীক্ষা খারাপের কারণ হবে।

সর্বোপরি প্রস্তুতি নেওয়ার সময় কঠোর পরিশ্রম করতে হবে, নিয়মিত পড়ালেখা করতে হবে, রাত জাগা যাবে না সৃষ্টিকর্তার প্রার্থনা করতে হবে এবং পিতা মাতার দোয়া এগুলোই মূলত সফলতার হাতিয়ার। আমার আব্বু, আম্মু ও বড় ভাই এর দোয়া এবং উনাদের অনুপ্রেরণা আমাকে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিকালীন মানসিক চাপ থেকে মুক্ত রেখেছিল আলহামদুলিল্লাহ।


সর্বশেষ সংবাদ