যেভাবে প্রস্তুতিতে মিলবে রাবিতে পড়ার সুযোগ

মো: শরিফুল আলম তামিম
মো: শরিফুল আলম তামিম  © টিডিসি ফটো

মো: শরিফুল আলম তামিম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ২২-২৩ সেশনে ‘এ’ ইউনিটে ৪র্থ স্থান অর্জনকারী ছাত্র। বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে তিনি এ স্থান অর্জন করেছেন। সম্প্রতি তিনি তার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রস্তুতির গল্প নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের মুখোমুখি হয়েছেন। কথাগুলো শুনেছেন— জান্নাতুল ফেরদৌস।

রাবিতে চান্স পাওয়ার জন্য আপনি কীভাবে পড়েছেন, দৈনন্দিন রুটিন কী ছিল?

মো: শরিফুল আলম তামিম: শুরুতেই বলতে হয় ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন সংখ্যার মধ্যে যেই বিস্তর পার্থক্য, সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেসকল শিক্ষার্থীদেরকেই চায় যাদের প্রস্তুতি অন্যাদের থেকে আলাদা। আরেকটু ভেঙ্গে বললে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে এমন কিছু প্রশ্ন থাকে যেগুলোর উত্তর সবার জানা। এগুলো বাদে যে প্রশ্নগুলো থাকে সেগুলোর উত্তর দেয়ার জন্য আলাদা প্রস্তুতি প্রয়োজন হয় এবং সেগুলোর উত্তর যারা দিতে পারে তারাই মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন লাভ করতে সক্ষম হয়। তো আমি আমার প্রস্তুতি সবসময়ই অন্যদের থেকে একটু আলাদা রাখতে চেষ্টা করেছিলাম।

আমার রুটিনের কথা যদি বলি, আমি কতক্ষন পড়ব– সে ব্যাপারে কোন রুটিন আমার ছিল না। তবে নামাজ, খাওয়া-দাওয়া সহ অন্য কাজগুলোতে কতক্ষণ ব্যয় করব সেই সময়টা নির্ধারিত ছিল। তো এই সময়টুকু বাদ দিয়ে বাকি পুরোটা সময় পড়ার চেষ্টা করেছি। আর পড়ার ক্ষেত্রে আমি কখনোই একটানা দীর্ঘ সময় পড়তাম না। মাঝখানে স্বল্প সময়ের বিরতি দিতাম। তাছাড়া এক বিষয় দীর্ঘক্ষন পড়লেও একঘেয়েমি চলে আসে।  তাই বিষয় পরিবর্তন করে করে পড়তাম। এবং যতটুকুই পড়তাম, নিয়মিত পড়তাম। এছাড়া বেশি বেশি প্রশ্ন সমাধান করতাম এবং নিজের অবস্থান বোঝার জন্য নিয়মিত অনলাইন এক্সামে অংশগ্রহণ করতাম।

ভর্তি পরীক্ষা সফলতা পাওয়ার কোনো সহজ টেকনিক আছে কী?

মো: শরিফুল আলম তামিম: অনেকেই অনেক পরিশ্রম করে কিন্তু দিনশেষে কাঙ্খিত ফল পায় না। তাই আমি বলব শুধুমাত্র পরিশ্রম না করে কৌশলগত পরিশ্রম করার জন্য। অর্থাৎ শুরুতেই বিগত বছরের প্রশ্নগুলো তাকে দেখতে হবে। কোন টপিকগুলো থেকে প্রতি বছর প্রশ্ন আসছে সেগুলো বের করতে হবে। এরপর সেই টপিক গুলো একটা একটা করে শেষ করতে হবে। এভাবে তার প্রস্তুতি নেয়াটা সহজ হবে।

ভর্তি পরীক্ষায় কোচিং কতটা গুরুত্বপূর্ণ? যাদের কোচিং করার সুযোগ নেই তারা কীভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে?

মো: শরিফুল আলম তামিম: সার্বিক দিকনির্দেশনার ক্ষেত্রে কোচিং এর গুরুত্ব রয়েছে। কোন শিক্ষার্থী যদি কোন শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে অথবা অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে অথবা নিজে নিজে বই পড়ে সেই দিকনির্দেশনার জায়গাটুকু পূরণ করতে পারে তাহলে আমি মনে করি তার কোচিং এর প্রয়োজন নেই। কারণ কোচিং না করেও প্রতি বছরই অনেক শিক্ষার্থীকে উল্লেখযোগ্য ফলাফল অর্জন করতে দেখা যায়।

যাদের কোচিং করার সুযোগ নেই তারা কোনো শিক্ষক বা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত কোনো শিক্ষার্থীর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যমে তার প্রস্তুতিকে এগিয়ে নিতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন অনলাইন ক্লাস থেকেও পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব।

04ab2591-bcda-4554-8b19-3dcbd943d6cc

গাইড বই নাকি পাঠ্য বই—কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ?

মো: শরিফুল আলম তামিম: উচ্চ মাধ্যমিকে পাঠ্যবই অবশ্যই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তবে গাইড বই একেবারে গুরুত্বহীন নয়। পাঠ্যবই যেখানে আমাদের কোন একটা বিষয় সম্পর্কে মৌলিক ভিত্তি তৈরি করে, গাইড বই সেখানে সেই ভিত্তিটাকে আরো মজবুত করতে সাহায্য করে। পাঠ্য বই এর পড়াটা ভালোভাবে বুঝতে গাইড বই সহ সম্ভাব্য প্রতিটি মাধ্যমকেই অনুসরণ করতে হবে।

উচ্চ মাধ্যমিকের পর করণীয় কী?

মো: শরিফুল আলম তামিম: উচ্চ মাধ্যমিকের পর শুরুতেই লক্ষ্য স্থির করতে হবে। এরপর কাঙ্খিত বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে জানবে এবং সম্ভব হলে ক্যাম্পাস থেকে ঘুরে আসবে। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার স্বপ্নটা আরও মজবুত হবে এবং তা শিক্ষার্থীর মধ্যে পরিশ্রমের মনোভাব তৈরি করবে।

অধিকাংশ পরীক্ষার্থীর ফলাফল আশানুরূপ না হওয়ার অন্যতম কারণ হলো লিখিত অংশে ভালো না করা। এক্ষেত্রে উচ্চ মাধ্যমিকের পর থেকেই শিক্ষার্থীর উচিত নিয়মিত লিখিত অংশের চর্চা করা।

অনেক শিক্ষার্থীকে একইসাথে একাধিক ইউনিটের প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়। যারা একই সাথে একাধিক ইউনিটের প্রস্তুতি নেয়, তাদের জন্য পরামর্শ কি?

মো: শরিফুল আলম তামিম: বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন অনেক ইউনিট রয়েছে যেগুলোর প্রশ্ন কাঠামো অনেকটাই একরকম। অর্থাৎ কমন প্রিপারেশন নিলে প্রায় সবগুলোতে পরীক্ষা দেওয়া যায়। যদি এমন হয় তাহলে সে অবশ্যই একাধিক ইউনিটে পরীক্ষা দিতে পারে। দিলে অন্তত একটাতে হলেও সে ভর্তির সুযোগ পাবে। তবে যদি এমন হয়, সেই ইউনিটে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে দীর্ঘ একটা সময় ব্যয় করে তাকে প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে, তাহলে আমার পরামর্শ থাকবে সেই ইউনিট এড়িয়ে যাওয়া যেহেতু প্রস্তুতির জন্য সময় খুব কম থাকে।

ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণকালে সাধারণত কোন ভুলগুলো শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে দেয়?

মো: শরিফুল আলম তামিম: অনেক সময় দেখা যায় অনেক শিক্ষার্থী প্রচুর পড়াশোনা করছে কিন্তু সে অনুযায়ী কোনো ফল পাচ্ছে না। এর মূল কারণ হলো গুরুত্বপূর্ণ এবং গুরুত্বহীন টপিক নির্বিশেষে ধারাবাহিকভাবে পড়ে যাওয়া। এতে যেমন সময় নষ্ট হয়, পাশাপাশি মস্তিষ্কের উপর বাড়তি চাপ পড়ে।

ভর্তি পরীক্ষাটা যেহেতু একটা ভর্তি যুদ্ধ যেখানে অসংখ্য পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছে। তাই আমি একটা আসন দখল করতে পারব তো – এসব চিন্তা মাথায় ভর করে। এই ভয়ও অনেক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এজন্য পরীক্ষার্থীকে ভয় না পেয়ে সব সময় তার কনফিডেন্স ধরে রাখতে হবে।

এছাড়া প্রস্তুতিকালে শুরু থেকে সচেতনতা না থাকা এবং মাঝপথে এসে হাল ছেড়ে দেয়ার ফলেও শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ে।

আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পরীক্ষার আগের রাতে বেশি চিন্তা করা যাবে না। অর্থাৎ চাপমুক্ত থাকতে হবে। আর পরীক্ষায় বাংলা, ইংরেজি আর সাধারণ জ্ঞান থেকে কোন বিষয় আগে দাগাবে সেটা আগে থেকে ঠিক করে সে অনুযায়ী অনুশীলন করতে হবে। কেননা এটা আগে থেকে নির্ধারণ না করে অনেকেই পরীক্ষার হলে গিয়ে বিপাকে পড়ে।

039b90c8-257c-4e3a-98a7-daad531e3910

পরীক্ষা চলাকালীন ১ ঘন্টা/দেড় ঘন্টায় কোন ভুল করা উচিত নয়?

মো: শরিফুল আলম তামিম: ভর্তি পরীক্ষার এই যাত্রায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হলো– পরীক্ষা চলাকালীন ১ ঘন্টা/দেড় ঘন্টা। এই সময়টাই মূলত জীবনের পরবর্তী ধাপটা নির্ধারণ করে দেয়। এক্ষেত্রে এই সময়টুকু ঠান্ডা মাথায় যে যত ভালোভাবে বিন্যাস করতে পারবে তার ফলাফল তত ভালো হবে। এজন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময় উচিত হবে হুবহু ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের আদলে কিছু পরীক্ষা দেয়া। এতে করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করতে না পারার যেই সমস্যাটা থাকে সেটা কেটে যাবে। আর কোনো অবস্থাতেই পরীক্ষা চলাকালীন ঘাবড়ানো যাবে না। কোনো প্রশ্নের উত্তর জানা না থাকলেও ঠান্ডা মাথায় মনোযোগ সহকারে তার সমাধান খুঁজতে হবে।

আপনার এই সফলতার পেছনের গল্প কি?

মো: শরিফুল আলম তামিম: এর পেছনে অবশ্যই আল্লাহ তায়ালার দয়া ছিলো। সেই সাথে বাবা-মায়ের দোয়া, আমার বড় বোনের দিকনির্দেশনা, শিক্ষকদের সহায়তা, সহপাঠীদের সহযোগিতাপূর্ণ আচরণ এবং আমার প্রচেষ্টা– এই সব কিছুর সমন্বয়ে এটা সম্ভব হয়েছে বলে আমি মনে করি।

আপনি এখন রাবি শিক্ষার্থী। ক্যাম্পাস লাইফ কেমন উপভোগ করছেন?

মো: শরিফুল আলম তামিম: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এবং এর সৌন্দর্য আমাকে প্রতিনিয়ত মুগ্ধ করছে। তাছাড়া ক্যাম্পাসে নতুন বন্ধু হয়েছে, নতুন পরিবেশ পেয়েছি। সব মিলিয়ে আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো উপভোগ করছি।


সর্বশেষ সংবাদ