মহাকাশের প্রতি আগ্রহ আর মহাকাশবিজ্ঞানে পড়া এক জিনিস নয়
মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিকের গতানুগতিক পড়াশোনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময়টা সত্যিই অন্যরকম। এসময় আশা জাগানিয়া ঘটনা যেমন ঘটে, তেমনি প্রত্যাশার সাথে বাস্তবতার মিল না হলে আত্মবিশ্বাসের পারদ নেমে যায় অনেক নিচে। অনেকে তাই একে আখ্যায়িত করেছেন ভর্তিযুদ্ধ নামে। যুদ্ধই তো; এত এত ঘাত—প্রতিঘাত মোকাবিলা করে নিজেকে যোগ্য বলে প্রমাণ করা, নিজের আশা আর স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখা। একে যুদ্ধ না বলে উপায় আছে?
প্রতিটি লড়াইয়ের আগে যেমন প্রতিপক্ষকে জানতে হয়, অপরপক্ষের কৌশলগুলো অধ্যয়ন করতে হয়; ভর্তিযুদ্ধেও তাই সকল কলাকৌশল আগে থেকে জানা থাকতে হয়। এক্ষেত্রে কঠিন প্রশিক্ষণ ব্যক্তিকে এগিয়ে দেয়, বাড়তি সুবিধা দেয় যেকোনো অবস্থায়। ভর্তি পরীক্ষার আগে বিশ্ববিদ্যালয় বা বিভাগগুলো সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা জরুরি। এক্ষেত্রে পছন্দের প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের সাহায্য নেয়া যেতে পারে।
পরিকল্পনা হতে হবে নিজ ইচ্ছা আর যোগ্যতার মাপকাঠি অনুসারে। একাডেমিক যোগ্যতা আর মনোবল যদি সায় না দেয় তাহলে তো ‘আকাশ—কুসুম কল্পনা’ করে লাভ নেই। মহাকাশের প্রতি আগ্রহ থাকা আর মহাকাশবিজ্ঞান নিয়ে পড়ালেখা এক জিনিস নয়। নিজের ভালো লাগাকে অগ্রাধিকার দিয়ে পরিবারের অভিজ্ঞ সদস্যদের মতামতকেও প্রাধান্য দিতে হবে। তবে সব দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে নিজেকেই।
বিশ্ববিদ্যালয় বা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের ক্ষেত্রে বেশকিছু জিনিস মাথায় রাখতে হবে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান, আবাসনের ব্যবস্থা, পছন্দের বিষয়ে আসনসংখ্যা, সহশিক্ষা কার্যক্রমের সুযোগ, খরচ ইত্যাদি। সবকিছু একসাথে বিবেচনা করে নিজ সামর্থ্যের আলোকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়ে গেলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সহজ হয়। ব্যক্তিবিশেষে অনেক সময় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বেশি সুবিধাজনক মনে হতে পারে। সেক্ষেত্রে নিজ সামর্থ্য আর পছন্দকে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত।
আরও পড়ুন: কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা কবে
যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় কাউকে না কাউকে বাদ পড়তেই হয়। নিজ পরিকল্পনাকে সাজাতে তাই সর্বোচ্চ কৌশলী হতে হবে। কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের যাচাইয়ের পদ্ধতি কি; কিংবা তারা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোন দিকটিকে বেশি প্রাধান্য দেয়; তাদের প্রশ্নের প্যাটার্ন কি; এসব সঠিকভাবে জানতে হবে। সঠিক পরিকল্পনা ও কৌশল প্রতিযোগীকে অনেকটাই এগিয়ে দিবে।
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ধরণ ও ভর্তি পরীক্ষার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য আছে। প্রস্তুতির ধরনও তাই ভিন্ন হওয়াই স্বাভাবিক। গৎবাঁধা পুরো পাঠ্যবই না পড়ে প্রয়োজনীয় অংশের উপর বেশি জোর দিতে হবে। বেশি তথ্য মনে রাখার চেয়ে কম পরিমাণ তথ্য ভালোভাবে মনে রাখতে পারলে বেশি সুফল পাওয়া যায়। অপ্রয়োজনীয় ও অপ্রাসঙ্গিক অংশ বাদ দেয়ার কৌশল জানতে হবে। পূর্ববর্তী বছরগুলোর প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে এ কৌশল ভালোভাবে রপ্ত করা যায়।
সবশেষে আত্মবিশ্বাসের কোন বিকল্প নেই। অন্যের সাথে তুলনা করে অনেক শিক্ষার্থী আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। ধরে নিতে হবে প্রতিযোগিতা একান্তই নিজের সাথে। সব ছাপিয়ে নিজের সর্বোচ্চ স্থানে পৌঁছতে হবে— এটাই একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত।
লেখক: শিক্ষার্থী, আইন ও বিচার বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়