ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের এমসিকিউ ও লিখিত পরীক্ষার খুঁটিনাটি জেনে নিন
এইচএসসির পর প্রতিটি শিক্ষার্থীদেরই উচ্চশিক্ষায় স্বপ্ন থাকে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ভর্তি হতে। চাহিদার দিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট। এটি মূলত ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষার্থীদের জন্য হলেও অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরাই ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারে। ব্যবসায় শিক্ষার পাশাপাশি বিজ্ঞান এবং মানবিকের শিক্ষার্থীদের জন্যও অল্প সংখ্যক আসন রয়েছে।
একজন ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থী কীভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করবে, নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে সে পরামর্শ দিয়েছেন ২০২২-২৩ সেশনে এই ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়া একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী মেহরাজ হোসেন। বিস্তারিত তুলে ধরছেন শাহ বিলিয়া জুলফিকার-
মানবণ্টন ও প্রশ্ন সমাধান
বাংলা, ইংরেজি, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা এর উত্তর দেয়া বাধ্যতামূলক। এছাড়া ফিন্যান্স, ব্যাংকিং ও বিমা বা উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন যেকোনো একটির উত্তর দিতে হবে। এমসিকিউ অংশের পাস ২৪ নম্বর। যার মধ্যে ইংরেজিতে ন্যূনতম ৫ পেতে হবে এবং লিখিত অংশের পাস ১১। দুটো মিলিয়ে ৪০ পেলে পাস। এমসিকিউ পরীক্ষার উত্তীর্ণদের মধ্যে থেকে আসনসংখ্যার ৩ গুণ লিখিত খাতা দেখা হবে। প্রশ্নব্যাংক অর্থাৎ বিগত বছরের প্রশ্ন পড়াই একমাত্র জায়গা যেখান থেকে বোঝা সম্ভব যে শিক্ষকরা কোন অধ্যায়গুলোতে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
প্রতি বছরেই ঢাবির প্রশ্ন একটা নির্দিষ্ট প্যাটার্ন অনুসরণ করা হয়। যেমন– ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটে বাংলা ১ম পত্র থেকে ২/৩টি এমসিকিউ, বানান থেকে ১/২টি এমসিকিউ, বিরচন (সমার্থক, বিপরীত, এক কথায় প্রকাশ, বাগধারা) থেকে ২/৩টি এমসিকিউ আসে। ঠিক তেমনি ইংলিশের ক্ষেত্রে Right Form of Verbs থেকে ২টি , Preposition থেকে ২টি, Vocabulary থেকে ২টি প্রশ্ন সব সময়ই থাকছে। এভাবে প্রতিটি বিষয়েই কিছু জায়গা রয়েছে যেখান থেকে প্রায় সব সময় প্রশ্ন হয়, বিগত বছরের প্রশ্ন পড়ে এগুলো সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করতে পারলে খুব কম পড়েই অনেক মার্কস তোলা সম্ভব।
মানসিক প্রস্তুতি
ভর্তিযুদ্ধে দুজন শিক্ষার্থীর মধ্যের সবচেয়ে বড় ব্যবধান সৃষ্টি করে তাদের মানসিক প্রস্তুতি। এক্সাম হলে যাওয়ার আগে থেকেই ঠিক করে রাখতে হবে যে এমসিকিউ বা লিখিত অংশে কোন বিষয়টার উত্তর আগে এবং কোনটার উত্তর পড়ে দিবে। প্রতিটি বিষয়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ করে রাখতে হবে। ইংলিশ, হিসাববিজ্ঞান এমসিকিউয়ের ক্ষেত্রে আগে দাগালেই আমি মনে করি মাথা ঠান্ডা রেখে উত্তর দেয়া যায়। একদম প্রথমে যেই বিষয়টা সবচেয়ে ভালো আয়ত্ত আছে সেটা দাগানো উচিত। আর সর্বশেষে নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে যে যা যা পড়া হয়েছে সেখান থেকে প্রশ্ন হলে নিশ্চয় সঠিক উত্তর দিতে পারবে।
বিষয়ভিত্তিক পরামর্শ
ক) বাংলা
বাংলা ১ম পত্রের শব্দার্থ ও টিকা , লেখক পরিচিতি খুবই ভালো করে পড়তে হবে। পদ্যের ক্ষেত্রে কোন লাইনের পরে কোন লাইন আসে সেটা মনে রাখতে হবে। কবিতার চরণগুলোর অর্থ বুঝে পড়ার চেষ্টা করা উচিত। ব্যাকরণের ক্ষেত্রে প্রথমে যে টপিকটা পড়বে সেটার ব্যাখা-বিশ্লেষণ পড়ে এমসিকিউ প্র্যাকটিস করতে হবে। তখন যে-সব ভুল যাবে সেগুলো আবার ব্যাখ্যা দেখে বুঝার চেষ্টা করতে হবে। এভাবে বারবার এমসিকিউ প্র্যাকটিস করতে হবে।বিরচন বার বার পড়ার কোনো বিকল্প নেই। প্রতিদিন নতুন পড়ার পাশাপাশি আগে যেগুলো পড়া হয়েছে সেগুলো রিভিশন দিতে হবে।
খ) ইংরেজি
গ্রামারের জন্য প্রথমেই একদম কঠিন কিছু না পড়ে আগে বেসিক ঠিক করতে হবে। এই জন্য আগে Sentence Structure, Voice, Degree, Tense এগুলো দেখা উচিত। তারপর Phrase & Clause, Parts of Speech Identification & Classification পড়া উচিত। Grammatical Rules মুখস্থ না করে বুঝে পড়তে হবে এবং বারবার এমসিকিউ প্র্যাকটিস করতে হবে।
Vocabulary একসাথে অনেক না পড়ে সাপ্তাহিক একটা রুটিন করে তারপর প্রতিদিন কিছু নতুন শব্দ পড়ার সাথে আগের গুলো দেখতে হবে। যেগুলো মনে রাখতে কষ্ট হবে দাগিয়ে রেখে ওইগুলো বার বার দেখতে হবে। Vocabulary পড়ার সময় নতুন কোন শব্দ যার স্পেলিং কঠিন একই সাথে দেখে রাখা ভালো। কারণ বর্তমানে স্পেলিংও আসে। এছাড়াও Phase & Idioms-ও ভালো করে Vocabulary এর মতো পড়তে হবে। Appropriate Preposition সব মুখস্থ না করে বাক্যগুলো বারবার রিডিং পড়লেই সহজে পারা যাবে।
গ) হিসাববিজ্ঞান
ক্যালকুলেটর ছাড়া অঙ্ক করার প্র্যাকটিস প্রথম থেকেই করতে হবে। প্রথমেই জাবেদা এর কন্সেপ্ট ভালো করে বুঝতে হবে বিশেষ করে সমন্বয়, সংশোধনী জাবেদা। বড় নম্বরের পারসেন্টেজ বের করতে অনেকের এ সমস্যা হয়ে থাকে। এই জন্য যেকোনো সংখ্যার প্রথমে ১/১০% বের করে সেটা থেকে সহজে অন্য যেকোনো পারসেন্টেজ ক্যালকুলেটর ছাড়া সহজে বের করা যায়। নিয়মিত বিগত বছরে আসা এমসিকিউ প্র্যাকটিস করতে হবে।
ঘ) ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা
এই বিষয়টাতে খুব কম পড়েই ভালো করা যায়, কারণ বেশিরভাগ পড়াই এইচএসসি এর সাথে মিল রয়েছে। আবার বিগত বছরের প্রশ্ন সব সময়ই রিপিট হয় ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনাতে। তাই বিগত বছরে যেকোনো পরিক্ষায় আসা প্রশ্ন গুলো খুবই ভালো করে পড়তে হবে। যেহেতু বর্ণনামূলক কোনো প্রশ্ন অ্যাডমিশন এক্সাম এ আসে না তাই সংজ্ঞা মুখস্থ করার কোনো দরকার নেই। শিল্পের প্রকারভেদ, ব্যবসায় পরিবেশ, অংশীদারি ব্যবসায়, কোম্পানি, ব্যবস্থাপনার নীতি, পরিকল্পনা, সংগঠন, প্রেষণা এই অধ্যায়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ঙ) ফিন্যান্স,ব্যাংকিং ও বিমা বা উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন
নিজেকে মূল্যায়ন করতে হবে যে কোন বিষয়টা ভালো মার্ক তোলা সম্ভব নিজের পক্ষে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি কেউ অঙ্কে দুর্বল হলে ফিন্যান্স না নেয়াই ভাল। আবার কারও যদি এইচএসসিতে এর কোনোটা না থেকে থাকে অ্যাডমিশন টাইমে একদম নতুন করে সেটা না পড়াই ভালো। ফিন্যান্স, ব্যাংকিং ও বিমা নিলে বেশি বেশি অঙ্ক করতে হবে এবং বিষয়গুলোর বেসিক ঠিক করে পড়তে হবে। উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন এর ক্ষেত্রে ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা এর মতো ব্যাখ্যা পড়া শেষ করে বেশি বেশি এমসিকিউ করতে হবে।
লিখিত প্রস্তুতি
বাংলা টু ইংলিশ এবং ইংরেজি টু বাংলা অনুবাদ পড়তে হবে। যেসব প্রবাদ রয়েছে সেগুলো মুখস্থ করে ফেলা এবং কালের সাথে অনুবাদের পরিবর্তন বুঝতে হবে। বাংলা বাক্য শুদ্ধিকরণের জন্য বানান এবং বাক্য়ের গঠন ভালো করে দেখে উত্তর করতে হবে। ইংলিশ বাক্য শুদ্ধিকরণের জন্য গ্রামার বুঝে সেন্টেন্স স্ট্রাকচার ঠিক আসে কিনা দেখতে হবে। হিসাববিজ্ঞানের জন্য এমসিকিউ করার সময় অপশন গুলো ঢেকে করার চেষ্টা করলে এক সাথে লিখিত এর প্রস্তুতিও হয়ে যাবে।
ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা, ফিন্যান্স,ব্যাংকিং ও বিমা বা উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন এর জন্য এমন যেসব তথ্য আছে যার একটি নির্দিষ্ট উত্তর রয়েছে সেগুলো মুখস্থ করে ফেললেই হবে।