মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে যে পরামর্শ দিলেন দেশসেরা দ্বিতীয় নিহাল
চিকিৎসা পেশা সন্দেহাতীতভাবে একটি মহৎ পেশা। এই পেশায় গিয়ে যারা মানবসেবার মহৎ ব্রত পালন করতে আগ্রহী তাদেরকে প্রথমেই পার হতে হয় মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি কেবল একটি পরীক্ষা নয়, যুদ্ধও বটে। কারণ এখানে প্রায় পাঁচ হাজার আসনের বিরুদ্ধে লড়াই করবে প্রায় দেড় লাখ শিক্ষার্থী, অর্থাৎ এক আসনের বিরুদ্ধে প্রায় ৩০ জন। সেজন্য দরকার সঠিক প্রস্তুতি আর কঠোর পরিশ্রম। আর যেহেতু সময়ও কম, প্রতিটা মুহূর্ত মূল্যবান। ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করে কিভাবে একজন শিক্ষার্থী মেডিকেলে চান্স পাবে নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে সে পরামর্শ দিচ্ছেন ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় দেশসেরা দ্বিতীয় হওয়া আসিফ রহমান নিহাল। বিস্তারিত তুলে ধরছেন শাহ বিলিয়া জুলফিকার-
আবেদনের যোগ্যতা
ভর্তি পরীক্ষায় আবেদনের ক্ষেত্রে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় মোট জিপিএ ন্যূনতম ৯.০০ থাকতে হবে। তাছাড়া এইচএসসি পরীক্ষায় জীববিজ্ঞানে ন্যূনতম জিপিএ ৩.৫০ থাকতে হবে। আর পাস নম্বর ন্যূনতম ৪০ না পেলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজেও আবেদন করা যাবে না।
পরীক্ষার মানবন্টন
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার মোট নম্বর ৩০০ যায় মধ্যে ২০০ নম্বর এসএসসি ও এইচএসসি এর জিপিএ এর সাথে যথাক্রমে ১৫ ও ২৫ গুন করে দেয়া হবে। আর বাকি ১০০ মার্কের পরীক্ষা দিতে হবে। এর মধ্যে জীববিজ্ঞানে ৩০,রসায়নে ২৫, পদার্থবিজ্ঞানে ২০, ইংরেজিতে ১৫ আর সাধারণ জ্ঞানে ১০ মার্ক থাকে।
প্রশ্নব্যাংক সমাধান
প্রথমে মানবন্টনের বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বুঝে পরিকল্পনা করতে হবে। আর যেহেতু প্রতিবার মানবণ্টন কিছুটা পরিবর্তন হয়, সেহেতু গত বছরের প্রশ্নপত্রটিই ভালো করে দেখতে হবে। তবে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করার জন্য একটি প্রশ্নব্যাংক কিনলে বেশি সহায়ক হবে।
বিষয়ভিত্তিক পরামর্শ:
সাধারণ জ্ঞান
সায়েন্সের শিক্ষার্থী হওয়ার কারণে অনেকেরই সাধারণ জ্ঞান নিয়ে পড়ার আগ্রহ একটু কম থাকে। অনেকে সাধারণে জ্ঞানে ভালো মার্কস না তুলতে পেরে মেডিকেলে চান্স পায় না।কেননা প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষায় ১ নম্বরের মূল্যও অনেক।আর সাধারণ জ্ঞানের জন্য ১০ নাম্বার বরাদ্দ। তাই এটি গুরুত্ব ও মনোযোগের সাথে পড়তে হবে।
আর সাধারণ জ্ঞান বিষয়ের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক বিষয়াবলি, শেখ মুজিবুর রহমান, উপজাতি, ছিটমহল,খেলাধুলা, বাংলাদেশের নদ-নদী, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, বাংলা সাহিত্য, বাংলাদেশ ও বিশ্বের প্রথম, বৃহত্তম, ক্ষুদ্রতম, বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিখ্যাত স্থাপত্য ও ভাস্কর্য, পুরস্কার ও সম্মাননা, বিশ্ব ইতিহাস এবং বিভিন্ন ধরনের দিবসসমূহ ভালোভাবে পড়তে হবে। তাহলে আশা করা যায়, ১০ নম্বরই কমন পাবে একজন শিক্ষার্থী।
ইংরেজি
ইংরেজির ক্ষেত্রে Voice, Narration, Correction, Transformation,Translation Spelling, Preposition, Phrase & Idioms বিষয়গুলো ভালো করে পড়ার পাশাপাশি ভোকাবুলারির প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। তাহলে পরীক্ষায় আসা Synonym-antonym গুলি পারতে সুবিধা হবে। সর্বশেষ, ইংরেজির জন্য বিগত সালের এমবিবিএস, বিজেএস, বিসিএস ও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নগুলো বেশি করে পড়তে হবে। সাধারণত এগুলো থেকেই প্রশ্ন তৈরি করা হয়।
জীববিজ্ঞান
যেহেতু এই বিষয়ে মার্ক সবচেয়ে বেশি, এটাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে। মূল বই ভালো করে পড়তে হবে। উদ্ভিদের বিভিন্নতা, অণুজীব, জৈবনিক প্রক্রিয়া, অর্থনৈতিকভাবে উপকারী উদ্ভিদ, বইয়ের সব ছক, বৈশিষ্ট্য, পার্থক্য ভালো করে পড়লে প্রশ্ন কমন পাওয়ার সম্ভবনা বেশি। জীববিজ্ঞানে কেউ যদি ২৫টি বা তার বেশি প্রশ্নের উত্তর ঠিক করে দিতে পারে তাহলে তার চান্স পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
রসায়ন
রসায়নও ভালো করে পড়তে হবে। মেডিকেল প্রশ্ন ছাড়াও অনুশীলনীর প্রশ্নগুলো চর্চা করতে হবে। এখানে ভালো করতে হলে বিক্রিয়া, রাসায়নিক বন্ধন, মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম, জৈব এসিড, তড়িৎ রাসায়নিক কোষ, অ্যালডিহাইড, হাইড্রোকার্বন ইত্যাদি বিষয় ভালোভাবে পড়তে হবে। তাছাড়া প্রথম পত্রের ২য়, ৩য় ও ৪র্থ অধ্যায় ও দ্বিতীয় পত্রের ১ম, ৪র্থ, ৫ম অধ্যায় অধিক গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে।
পদার্থ বিজ্ঞান
পদার্থ বিজ্ঞান অংশে সাধারণত কোনো জটিল ম্যাথ থাকে না। তবে ফর্মুলাগুলো জেনে রাখতে হবে। এখানেও অনুশীলনীর প্রশ্ন চর্চা করতে হবে। পদার্থে গাণিতিক সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য বিগত ১০ বছরের মেডিকেল এবং ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নগুলো সমাধান করা যেতে পারে। এটি ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন সম্পর্কে একটি ধারণা দেবে। একই সাথে এখান থেকে অনেকগুলো প্রশ্ন কমনও পাওয়া যাবে। তাছাড়া মূল বইয়ের দাগানো অংশগুলো ভালোভাবে রিভিশন দিতে হবে।