স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেতে যা করবেন, যা করবেন না

রাফিদ হাসান সাফওয়ান
রাফিদ হাসান সাফওয়ান  © টিডিসি ফটো

এ মাসের শেষের দিকে চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হবে। এর মাধ্যমে উচ্চ মাধ্যমিকের প্রায় ১২ লাখ শিক্ষার্থীর অপেক্ষা ফুরাবে। উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হওয়া এসব অধিকাংশ শিক্ষার্থীরই স্বপ্ন থাকে দেশসেরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে আটঘাট বেঁধেও নেমেছে তারা। এসময় অনেকেই আবার দ্বিধাদ্বন্দ্বেও ভোগেন; এজন্য তারা থাকেন হতাশায়। দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও হতাশা কাটিয়ে একজন শিক্ষার্থীর এই গুরুত্বপূর্ণ সময়টাতে কি কি করা উচিত, সে সম্পর্কে ২০২০-২১ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিট ও গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়া এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রাফিদ হাসান সাফওয়ান নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে পরামর্শ দিয়েছেন। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরছেন শাহ বিলিয়া জুলফিকার— 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: উচ্চ মাধ্যমিকের পর করণীয় কী?

সাফওয়ান: এইচএসসি পরীক্ষার পর থেকে ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে খোঁজ রাখতে হবে। কেননা এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরপরই ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। যেখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী এবং বিশেষায়িত কিছু বিশ্ববিদ্যালয় স্বতন্ত্র ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করে থাকে। আর বাকিগুলো গুচ্ছ পদ্ধতিতে মোট ২২টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় একটি পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে ‘কৃষি গুচ্ছ’ ভর্তি রয়েছে। বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য বুয়েট স্বতন্ত্র ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে থাকে। তাছাড়াও অন্যান্য কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা হয়ে থাকে। সেগুলোর খোঁজ রেখে ওয়েবসাইটের নির্দেশনা অনুযায়ী আবেদন করতে হবে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: প্রস্তুতি কীভাবে শুরু করবে?

সাফওয়ান: এসএসসির পর বিশ্ববিদ্যালয় এডমিশন টেস্টের প্রস্তুতি সময়টা আসলে কম। চার-পাঁচ মাস সময় পাওয়া যায়। কারও যদি  নিজের উপর আত্মবিশ্বাস থাকে, তাহলে সে নিজে থেকে প্রস্তুতি শুরু করবে। যদি সে মনে করে তার ঘাটতি আছে, নিজে প্রস্তুতি নিতে পারবে না, তাহলে সে কোনো কোচিংয়ের দ্বারস্থ হবে অথবা অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ নিবে নিয়মিত। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লে তার জন্য ভালো হবে, পাবলিকে নাকি প্রাইভেটে এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং সে আলোকে প্রশ্ন অ্যানালাইসিস করে পড়তে হবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: লক্ষ্য স্থির রাখা জরুরি কিনা?

সাফওয়ান: সায়েন্স, কমার্স বা আর্টস যে বিভাগের শিক্ষার্থীই হোক না কেন, একজন শিক্ষার্থীর প্রধান কাজ হলো নিজের লক্ষ্য স্থির রাখা। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতি নেওয়ার সময় অনেক শিক্ষার্থীকেই দেখা যায়, তাদের আসলে কী পড়া উচিত তা নিয়ে তারা কনফিউজড থাকে। আর এজন্য প্রস্তুতি নেওয়াটাও মুশকিল হয়ে পড়ে। এইচএসসির পর একজন শিক্ষার্থীর সামনে অনেক অপশন থাকে। একটি অপশন সিলেক্ট না করে অনেকগুলো অপশন সিলেক্ট করলে সেটি হবে দুই নৌকায় পা দেওয়ার মতো। কেউ যদি অনেকগুলো অপশনে না গিয়ে লক্ষ্য স্থির রাখে যে, তাকে এই বিষয় নিয়ে পড়তে হবে, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হবে, তাহলে সে লক্ষ্যটাই তাকে পড়ার টেবিলে মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করতে সাহায্য করবে এবং ডিপ্রেশন থেকে দূরে রাখবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: নিজেকে কীভাবে গুছাবে?

সাফওয়ান: সকল ধরনের সময় নষ্ট, আড্ডা বা আউট বই না পড়ে এ সময়টাতে একজন শিক্ষার্থী শুধু অ্যাডমিশনের পড়ায় মনোযোগ দেবে। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির ক্ষেত্রে পুরোনো প্রশ্নগুলো বারবার দেখবে ও বিশ্লেষণ চালিয়ে যাবে। যদি কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয় তাহলে অভিজ্ঞ কোনো বড় ভাই অথবা কোচিংয়ের কারো শরণাপন্ন হবে। তাছাড়া একজন শিক্ষার্থী নিয়মিত পড়াশোনার পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে এক্সাম দেবে। তাহলেই একজন শিক্ষার্থী তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: অভিভাবকদের দায়িত্ব কী?

সাফওয়ান: অভিভাবকের দায়িত্ব অন্যান্য যেকোনো সময় থেকে এই সময়ে একটু বেশি। এ সময়টাতে খুব প্রেশারের মধ্য দিয়ে যেতে হয় একজন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর। যার কারণে এই প্রেশারটা সহ্য করার জন্য অভিভাবকের দায়িত্ব একটু বেশি। অভিভাবকের সব সময় সন্তান যথার্থ কেয়ার পাচ্ছে কিনা সে বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখা উচিত। তাছাড়া তার সন্তান হতাশায় ভুগছে কিনা তাও জানতে হবে। এ সময়টায়  যেহেতু পড়াশোনার  চাপ একটু বেশি। তাই তার মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতিও খেয়াল রাখতে হবে। সবশেষে পিতা-মাতার যেটি করা উচিত তাহলে, সন্তানকে ভালো একটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা দিবে কিন্তু তাকে বাধ্য করবে না। তবে বোঝা চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। সন্তান যেন তার লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হলে অভিভাবককে আশ্রয়স্থল হিসেবে ভাবতে পারে। 


সর্বশেষ সংবাদ