শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করবেন কীভাবে?
- মনির হোসেন হিমেল
- প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৩, ০৩:৩৬ PM , আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৩, ০৩:৩৬ PM
সারাদেশে নিম্ন-মাধ্যমিক, মাধ্যমিক, কলেজ, মাদ্রাসা এবং কারিগরিসহ প্রায় ৩৬ হাজার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ আবশ্যক। আর সেই লক্ষ্যে ২০০৫ সাল থেকে সরকার কর্তৃক এনটিআরসিএ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগের জন্য বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন নিয়োগ পরীক্ষা চালু করেছে।
দেশের কোন বেসরকারি বিদ্যালয় বা কলেজে এই নিবন্ধন ছাড়া চাকরীর কোন সুযোগ নেই। তাই শিক্ষকতায় ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা বাধ্যতামূলক দিতেই হবে। অনেকটা বিসিএসের আদলে নেয়া হয় এই নিয়োগ পরীক্ষাটি। আজ বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) থেকে আবেদন শুরু হয়েছে। চলবে আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত।
শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার যোগ্যতা
শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে আপনাকে কমপক্ষে স্নাতক পাস হতে হবে। তবে স্কুল পর্যায়-২ এর জন্য আলিম/এইচএসসি পাসে আবেদন করা যাবে। আর যারা সদ্য আলিম/এইচএসসি পাস করেছেন সেসব প্রার্থীরা সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেওয়া প্রশংসাপত্র, মার্কশিট, প্রবেশপত্রসহ আবেদন করতে পারবেন।
নিবন্ধন পরীক্ষায় আবেদনের ক্ষেত্রে প্রার্থীর শিক্ষাজীবনে যেকোনো একটি মাত্র তৃতীয় বিভাগ বা এর সমমান জিপিএর ফলাফল গ্রহণযোগ্য হবে। এ ক্ষেত্রে প্রার্থীর শিক্ষাজীবনে তৃতীয় বিভাগ বা এর সমমান জিপিএ একবারের বেশি হলে তিনি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য অনুপযুক্ত বলে বিবেচিত হবেন। আবেদনের ক্ষেত্রে প্রার্থীর বয়স ১৮-৩৫ বছরের মধ্যে হতে হবে।
বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা পদ্ধতি
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা ২টি পর্যায়ে হয়ে থাকে। একটি স্কুল পর্যায়ে আর অন্যটি কলেজ পর্যায়ে। এই শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা তিন ধাপে হয়ে থাকে। প্রিলি, রিটেন ও মৌখিক পরীক্ষা হয়। প্রথমে ১০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয়। প্রিলিতে ৪০% নম্বর পেলেই সাধারণত পাস ধরা হয়।
পরবর্তীতে পাস করা প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয় এবং লিখিত পরীক্ষায় নম্বরের ভিত্তিতে মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের একটি সনদ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে এই সনদ দিয়ে এনটিআরসিএ বরাবর অনলাইনে আবেদন করে মেধাতালিকার ভিত্তিতে যেকোনো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পাওয়া যাবে। প্রার্থীর এই সনদের মেয়াদ আজীবন থাকবে।
শিক্ষক নিবন্ধন প্রিলি পরীক্ষার মানবন্টন
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে প্রিলি পরীক্ষার বিষয় ও মানবন্টন দেখে নেয়া যাক। বাংলায় ২৫, ইংরেজিতে ২৫, গণিতে ২৫ এবং সাধারণ জ্ঞানে ২৫ নম্বর।
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন প্রিলিমিনারিতে ১০০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষা হয়। সময় থাকে ১ ঘণ্টা। প্রতিটি প্রশ্নের মান থাকবে ০১। তবে প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ করে কাটা হবে। প্রিলি পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হবে শুধুমাত্র তারাই যেকোন একটি ঐচ্ছিক বিষয়ের উপর ১০০ নম্বরের ৩ ঘণ্টার শিক্ষক নিবন্ধন লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
শিক্ষক নিবন্ধন প্রিলি পরীক্ষার সিলেবাস
শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার প্রিলিমিনারির পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নিতে বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি নেয়া খুব বেশি জরুরী। তাই প্রত্যেক বিষয়ে আলাদা আলাদা প্রস্তুতি নিতে সিলেবাস সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা থাকা দরকার।
এবার তাহলে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার প্রিলির সিলেবাসটি এক নজর দেখে নেয়া যাক-
(বাংলা–২৫)
ভাষারীতি ও বিরাম চিহ্নের ব্যবহার, বাগধারা ও বাগবিধি, ভুল সংশোধন বা শুদ্ধকরণ, যথার্থ অনুবাদ, সন্ধি বিচ্ছেদ, কারক বিভক্তি, সমাস ও প্রত্যয়, সমার্থক ও বিপরীতার্থক শব্দ, বাক্য সংকোচন, লিঙ্গ পরিবর্তন।
(ইংরেজি–২৫)
Sentences, Translation from Bengali to English, Change of Parts of Speech, Right forms of verb, Fill in the blanks with appropriate word, Transformation of sentences, Synonyms & Antonyms, Idioms & Phrases. এছাড়াও কলেজ পর্যায়ে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার জন্য Errors in composition, Identify appropriate title from story or article, Uses of article, appropriate preposition -এর প্রস্তুতি নিতে হবে।
(সাধারণ গণিত–২৫)
পাটিগণিত: গড়, ল.সা.গু, গ.সা.গু, ঐকিক নিয়ম, লাভ-ক্ষতি, শতকরা, সুদকষা, অনুপাত-সমানুপাত। বীজগণিত: উৎপাদক, বাস্তব সংখ্যা সমাধানে বীজগাণিতিক সূত্র গঠন ও প্রয়োগ, বর্গ ও ঘনসম্বলিত সূত্রাবলী ও প্রয়োগ, গসাগু, সূচক ও লগারিদমের সূত্র ও প্রয়োগ। জ্যামিতি: রেখা, কোণ, ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, ক্ষেত্রফল ও বৃত্তসম্পর্কিত সাধারণ ধারণা, নিয়ম ও প্রয়োগ।
(সাধারণ জ্ঞান–২৫)
বাংলাদেশ সম্পর্কিত বিষয়, আন্তর্জাতিক বিষয় ও চলতি ঘটনাবলী, বিজ্ঞান,প্রযুক্তি,পরিবেশ ও রোগব্যাধি সম্পর্কিত মৌলিক জ্ঞান, বাংলাদেশ সম্পর্কিত বিষয়াবলির মধ্যে বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ু, শিক্ষা, ইতিহাস, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ, সভ্যতা ও সংস্কৃতি, বিখ্যাত স্থান, বাংলাদেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, অর্থনীতি, বিভিন্ন সম্পদ (বন, শিল্প, কৃষি, পানি), জাতীয় দিবস ইত্যাদি থেকে প্রশ্ন হতে পারে।
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, আঞ্চলিক ও অর্থনৈতিক সংস্থা, বিভিন্ন দেশ পরিচিতি, মুদ্রা, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ, আন্তর্জাতিক দিবস, পুরস্কার ও সম্মাননা, খেলাধুলা ইত্যাদি থেকে প্রশ্ন থাকে। এছাড়াও স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান (পদার্থ, রসায়ন ও জীব বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট), তথ্য, যোগাযগ ও প্রযুক্তি, সাধারণ রোগ ব্যাধি ও পরিবেশ বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট প্রশ্ন থাকে।
সবশেষে, শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার প্রিলিমিনারিতে পাস করা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। এর জন্য দরকার আপনার মনোবল, পরিশ্রম করার ইচ্ছা ও পরিকল্পিত প্রস্তুতি। মনে রাখবেন, পরিশ্রম কখনো বৃথা যায় না। কোন না কোন চাকরীর পরীক্ষায় তা কাজে লাগবেই। শিক্ষকতার মত মহৎ পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করতে আপনার জন্য রইল অনেক অনেক শুভ কামনা।
লেখক: কর্মী, বাংলাদেশ রেলওয়ে