২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৩:৩৭

ভালোবাসার বিয়েতেও সংসারে অশান্তি? মাথায় রাখুন এ বিষয়গুলো

বিয়ের পর জীবনে আসে নানা চ্যালেঞ্জ  © সংগৃহীত

প্রেমের বিয়েতে পরস্পরের প্রতি প্রত্যাশা থাকে বেশি। ভালোবাসার সম্পর্ককে বহু ক্ষেত্রেই বিয়ে পর্যন্ত ধরে রাখা সম্ভব হয় না। বিয়ের পর জীবনে আসে নানা চ্যালেঞ্জ। এই প্রতিকূলতা ঠিকভাবে সামলাতে না পারলে দেখা দিতে পারে মারাত্মক সমস্যা। সারা জীবন একসঙ্গে চলবার প্রতিজ্ঞা নিয়ে যে দুজন মানুষ প্রেম করলেন ৫ বা ১০ বছর, বিয়ের কয়েক মাসের মাথায় কেন ভেঙে গেল সেই প্রতিজ্ঞা? স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কোনও হালকা ‘বাঁধন’ নয়।

গদ্য, পদ্য, সিনেমা, গল্প সব জায়গা থেকেই শেখা। ভালোবাসা থাকলে নাকি সব থাকে। কিন্তু এই ভালোবাসাই যদি সংসারে ঢুকে মন্দবাসা হয়ে দাঁড়ায়। রোজ রোজ যদি শুরু হয় ঝগড়া, অশান্তি! তাহলে? প্রেমের বিয়েতেও আজকাল সমস্যা দেখা যায়। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই অশান্তির সূত্রপাত। দুজনে একেবারেই দু'চোখের বিষ।

এ নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে কিছু নিয়ম মেনে চললে, সামলে রাখা যায় আপনার সম্পর্ক ও সংসারকে।

১. একঘেয়ে রুটিন থেকে নিজেদের সরিয়ে নিন। চেষ্টা করুন জীবনে রোমাঞ্চ ফেরাতে। পারলে হুট করে কোথাও ঘুরে আসুন। কিংবা দুজনে আলাদা আলাদা সোলো ট্রিপে বা বন্ধুদের সঙ্গেও ঘুরতে যেতে পারেন।

২. কোনো বিষয় নিয়ে যদি মতপার্থক্য থাকে। তাহলে একজন অন্তত চুপ থাকুন। প্রয়োজনে বিতর্ক এড়িয়ে যান।

৩. মন খুলে কথা বলুন, কান খুলে কথা শুনুন। আগে থেকেই আন্দাজ করে নেবেন না ঘটনাপ্রবাহ। দেখবেন এতে অশান্তি কম হবে।

৪. নিজেদের সম্পর্কের মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তিকে আসতে দেবেন না। নিজেদের সমস্যাগুলোকে নিজেরাই মিটিয়ে নিন।

৫. ভালোবাসা নিশ্চয়ই রয়েছে আপনাদের মধ্যে। খুঁজে বের করুন। প্রয়োজনে এমন কিছু কাজ একসঙ্গে করুন, যা আপনাদের দুজনেরই ভালো লাগবে।

সম্পর্কে চিড় ধরলে নিজেদেরই উদ্যোগী হতে হবে। শান্তিপূর্ণ আলোচনা করতে হবে। জীবনে যতই ঝড় আসুক, একে অন্যের ভরসাস্থল হয়ে উঠতে হবে। ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। যাঁর জন্য আগেও ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাঁকে নিয়েই তো আপনার ভবিষ্যৎকে সাজাতে চেয়েছেন। তাঁর চাওয়া-পাওয়াকে গুরুত্ব দিন। সাময়িক আর্থিক সংকটে থাকলে সঙ্গীকে সেটা নিঃসংকোচে জানান। জানিয়ে রাখুন, কঠিন দিনগুলোও আপনি তাঁকে সঙ্গে নিয়েই পেরোতে চান। ভালোবাসা দিয়ে আর্থিক অসংগতি পুষিয়ে নিন।

সঙ্গীর প্রতি নেতিবাচক আচরণ করবেন না। তাঁকে সমর্থন দিন, সময় দিন। অবহেলা করবেন না। পরিবার, আত্মীয়, প্রতিবেশী, এমনকি কাছের বন্ধুরাও যদি জীবনসঙ্গীর বিরুদ্ধে কথা বলেন, অবশ্যই ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামলাতে হবে। কারও সঙ্গে তর্কে জড়ালে পরিস্থিতি আরও বিরূপ হয়ে পড়তে পারে। নিজের মনে সব সময় এই বোধটা রাখুন, যাঁকে আপনি ভালোবাসেন, তাঁর কাছে জগৎ–সংসার তুচ্ছ। দোষে-গুণে মিলিয়েই মানুষ। এই মানুষটাকেই আপনি ভালোবেসেছেন। আর আপনিও দোষ-গুণের ঊর্ধ্বে নন। পারিবারিক অশান্তির মুহূর্তে সঙ্গী এবং পরিবারের বাকি সদস্যের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করুন।

প্রেমে জন্মায় অধিকারবোধ। বিয়েতে সেই বোধ পূর্ণতা পায়। বিয়ের পর একজন নারী তাঁর পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে বাধা পেতে পারেন, বিশেষত সেই বন্ধুরা যদি হন পুরুষ। একই ধরনের বাধা পেতে পারেন পুরুষও। বিপরীত লিঙ্গের পুরোনো বন্ধুর অতীতের ভালো লাগা কিংবা কম বয়সের ভুল হঠাৎ সামনে এসে যাওয়াতেও বিশ্বাসে চিড় ধরতে পারে। 

কাউকে ভালোবাসলে কেবল তাঁর ইতিবাচক দিকগুলোই চোখে পড়ে। কিন্তু প্রত্যেক মানুষেরই কোনো না কোনো মন্দ দিক থাকে, যা বিয়ের পর অর্থাৎ সার্বক্ষণিক সঙ্গী হওয়ার পর চোখে পড়ে। আর্থিক বা সামাজিক বিষয়গুলোও অনেকে বিয়ের আগে খতিয়ে দেখেন না। প্রেমিকার রান্নাবান্না নিয়ে অনেক পুরুষই মাথা ঘামান না, কিন্তু বিয়ের পর কেউ তাঁর মাথায় এটা ঢুকিয়ে দিতে পারে, ‘তোমার বউ তো রান্নাই জানে না। তোমাকে খাওয়াবে কী?’ উল্টোটাও ঘটে। স্ত্রীকে শুনতে হতে পারে, ‘তোমার জামাই তো ছোটখাটো একটা চাকরি করে। তোমাকে খাওয়াবে কী?’

পরিচিত কেউ জীবনসঙ্গীর কাছ থেকে দামি উপহার পাচ্ছেন, কিংবা দেশের বাইরে বেড়াতে যাচ্ছেন তাঁরা, এদিকে নিজের এত বছরের প্রেমিকের কাছ থেকে তেমন উপহার বা ‘সারপ্রাইজ’ পাচ্ছেন না, এমন ভাবনায় হতাশা ভর করতে পারে মনে। প্রেম করার সময় হয়তো দুজনেই শিক্ষার্থী ছিলেন। বিয়ের পর চাকরির জীবনটা দাঁড় করাচ্ছেন। সেই সময়টুকু দেওয়ার মানসিকতা না থাকলে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে পারেন কেউ। কেউ আবার পরিবারের সমর্থন হারিয়ে আর্থিক সংকটেও পড়েন। দম্পতির একজন আধিপত্য বিস্তার করতে চাইলে সেটিও অপরজন মানতে পারেন না।

অনেকের জীবনে একের অধিক প্রেম আসে। আপনার বর্তমান প্রেমের সম্পর্কের আগেও হয়তো আরেকটি প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এ ব্যাপারটি বর্তমান ভালোবাসার মানুষটির কাছে গোপন না করাই ভালো। অনেকেরই প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে গেলেও প্রাক্তন প্রেমিক বা প্রেমিকার সাথে যোগাযোগ থাকে বা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকে। বিয়ের আগ পর্যন্ত ব্যাপারটি ঠিক আছে। কিন্তু বিয়ের পর ব্যাপারটি সংসারে আগুন লাগানোর জন্য যথেষ্ট।

বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আড্ডা দিতে কার না ভালো লাগে! তবে তা অভ্যাস বা আসক্তির পর্যায়ে যেন না চলে যায়। কারণ প্রেমের সম্পর্কের সময়েও আমরা বন্ধুদের পর্যাপ্ত সময় দিতে পারি, কিন্তু বিয়ের পর তা আর সম্ভব হয় না। কিন্তু আপনি যদি এই অভ্যাসটি ধরে রাখতে চান, তাহলে সাংসারিক জীবনে অশান্তি আসবেই আসবে।

আপনি খুব ব্যস্ত মানুষ। সারাদিন কাজ নিয়েই থাকেন। তবে একটা কথা মনে রাখবেন, কাজের ফাঁকে নিজের জন্য বা বৃহত্তরভাবে বললে নিজেদের জন্য সময় বের করতে হবে। নইলে স্ত্রীর মনে বাসা বাঁধে একাকিত্ব। প্রথমে তিনি হয়তো এই নিয়ে অনুযোগ করবেন। এরপরও তার কথায় কর্ণপাত না করলে তিনি নিজেকে গুটিয়ে নেবেন।

অনেকে স্ত্রীকে বড্ড শাসনে রাখতে চান। এনারা স্ত্রীকে ছোটখাট ভুলের জন্যও তেড়ে অপমান করেন। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে হাত তুলতেও উদ্ধত হন। তবে মনে রাখবেন, আপনার এমন আচরণ কিন্তু কোনো নারীই সহ্য করবেন না। আজ না হোক কাল তিনি নিজেকে দূরে সরিয়ে নেবেন।