পরিসংখ্যান পড়ব কেন?
বর্তমান সময়ে পরিসংখ্যান এর গুরুত্ব অনেক। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের পরিসংখ্যান প্রয়োজন। যেমন আমাদের খুশিতে কেউ খুশি হলে পরিসংখ্যানের ভাষায় তাকে বলি পসিটিভ কো-রিলেশন। খুশি না হলে তারা হলো নিন্দুক। বেশির ভাগই দু:খী হবে। সেটা হলো নেগেটিভ কো-রিলেশন। আর যদি আমার খুশিতে কারো কিছু না এসে যায়, তাকে বলি নো কো-রিলেশন। এসব জানার আগে তো জানা দরকার পরিসংখ্যান কি? কেনই বা পড়বো?
পরিসংখ্যান কী?
পরিসংখ্যান হলো একটা শৃঙ্খলা, যা উপাত্ত সংগ্রহ করে, উপাত্ত বিশ্লেষণ এবং ব্যাখ্যা করে। পরিসংখ্যানগুলো এমন ডেটার সামগ্রিক অর্থ ব্যাখ্যা করতে পারে যা সাধারণ পর্যবেক্ষণ দ্বারা বোঝা যায় না। বৈজ্ঞানিক, শিল্প বা সামাজিক সমস্যা ,বিভিন্ন ধরনের জরিপ ইত্যাদি কাজে পরিসংখ্যানের ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে।
প্রায় প্রতিটি দেশের মত আমাদের দেশেও জনশুমারি হয়ে থাকেI কিন্তু যখন জনশুমারি থেকে তথ্য সংগ্রহ করা যায় না, তখন পরিসংখ্যানবিদের প্রয়োজন হয়I তখন পরিসংখ্যানবিদরা নির্দিষ্ট পরীক্ষার নকশা এবং পরীক্ষার নমুনা বিকাশ করে তথ্য সংগ্রহ করে।
পরিসংখ্যান কোথায় পড়ানো হয়?
সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান পড়ানো হয়। তার মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয় হলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক জায়গায় পড়ানো হয়।
বোকারা যা ভাবে পরিসংখ্যান নিয়ে
অনেকে শিক্ষার্থী পরিসংখ্যান পেয়ে হতাশ হয়ে যায়, তারা ভাবে তাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছেI এখন আমি কি করে খাব? আমার কপালেই এই সাবজেক্ট আসলো! আমার লাভ লস নাই, জীবনটায় লস। এইটা আবার কেমন সাব্জেক্ট? প্রায় ৯০ ভাগ শিক্ষার্থীই পরিসংখ্যান সাব্জেক্ট নিয়ে পারফেক্ট ধারণা রাখে না। অনেকেই আবার না বুঝেই নাক সিটকায়, বলে এটা তো আর্টস/কমার্সের সাবজেক্ট। পরে তাদের দুই লাইন রিডিং পড়তে দিলে পারে না, তখন বলে সাইন্সের।
যাই হোক, বেশিরভাগ মানুষ মনে করে এটি আর্টস ফ্যাকাল্টির সাবজেক্ট। কিন্তু সত্যি বলতে এটি কোনো আর্টস ফ্যাকাল্টির সাবজেক্ট না। আসলে পরিসংখ্যানকে Grammer of Science বলে অভিহিত করা হয়! অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের একটি বিষয় হচ্ছে পরিসংখ্যান! তাই আজ থেকে এটা ভেবোনা যে এটি কলা অনুষদের একটি বিষয়!!
সকল সাবজেক্ট এই ভালো কিছু করা সম্ভব I তাই মানুষের নেগেটিভ মন্তব্যগুলোকে পরিহার করতে হবে I শুনেও না শোনার ভান করতে হবেI এক কানে শুনে অন্য কান দিয়ে বের করতে হবে এবং পরিশ্রম করতে হবে সঠিক উপায়ে I তাহলে যে কোন সাবজেক্টে ভালো কিছু করতে পারবে। পরসংখ্যান হলে তো কথাই নেই। দেশে সাবজেক্টটি মিড রেঞ্জের হলেও দেশের বাইরে সাবজেক্টটি প্রথম সারির। তাই আপনি খুব সহজেই স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমাতে পারবেন।
কেন পড়বেন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগে
বাংলাদেশের ময়মনসিংহের ত্রিশালে ২০০৬ সালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর নামানঙ্কিত করে প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয় খুব সুনামের সাথে ১৬ বছর থেকে পাঠদান করে আসছে। সাইন্স ফ্যাকাল্টির সব সাবজেক্ট মধ্যে পরিসংখ্যান বিভাগ অন্যতম।
কারণ, এখানে নেই কোনো সেশনজট। সব ডিপার্টমেন্ট এর চেয়ে দ্রুত গতি সম্পন্ন। একটা সিংগেল দিনও জটে পড়তে হয় না।বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আব্দুল মুয়ীদ স্যারসহ সকল শিক্ষকদের বিভাগটি এই পর্যন্ত সুনাম ধরে রাখতে পেরেছে। বিভাগে রয়েছে পর্যাপ্ত শিক্ষক। যারা নিজ হাতে সন্তানদের মত শিক্ষা দেয়। ক্লাস মূল্যায়ন, নানারকম প্রেজেন্টেশন নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের জড়তা দূর করার চেষ্টা করেন। এটা সবচেয়ে ভালো দিক। পড়াশোনার ব্যাপারে স্যাররা খুবই আন্তরিক। কোনো শিটভিত্তিক নয়, গবেষণা ভিত্তিক পড়াশোনা করানো হয়।
গবেষণার জন্য আছে দুইটি ল্যাব। ল্যাব দুটিতে আছে পর্যাপ্ত সরঞ্জাম। যেখানে ১০ থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা গবেষণা করেন। যারা গবেষক হতে চান, বিশেষ কিছু জানতে চান, তাহলে তাদের প্রথম চয়েজ হওয়া উচিত নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ। যা আপনাকে শিকড় থেকে শিখরে পৌঁছে দেবে।
পরিসংখ্যান বিভাগে কি কি পড়ানো হয়
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই মূলত এই বিষয়গুলো পড়ানো হয় I
● Principle of Statistics 1
● Introduction to Probability
● Principle of Statistics 2
● Discrete Probability Distributions
● Continuous Probability Distributions
● Sampling Theory
● Estimation Theory
● Sampling Distributions and Applications
● Actuarial Science
● Operations Research 1
● Hypothesis Testing
● Designs of Experiment
● Stochastic Processes
● Operations Research 2
● Multivariate Analysis
● Time Series and Forecasting
● Quality Management
● Statistics and Life Sciences
● Data Science
● Data Mining
● Marketing Analytics
● Risk Analytics
চাহিদা ও জব সেক্টর:
একনজরে পরিসংখ্যানের কিছু ফিল্ড দেখে আসিI
● Actuarial science (assesses danger in the assurance and finance productions)
● Applied info economics
● Astrostatistics (arithmetical assessment of astronomical figures)
● Biostatistics
● Statistics mining (applying statistics and pattern acknowledgment to notice knowledge from data)
● Data science
● Demography (statistical study of inhabitants)
● Econometrics (statistical study of economic statistics)
● Energy figures
● Engineering statistic
● Image handling
● Medical statistics
● Political science
● Psychosomatic statistics
● Reliability engineering
● Public measurements
● Statistical mechanism
যেখানে এতগুলো রয়েছে সেখানে অবশ্যই জবের জন্য রয়েছে অপার সম্ভাবনা I পরিসংখ্যানগুলোর মধ্যে বিপণনের ক্ষেত্র, অর্থনীতি, জীববিজ্ঞান, জনস্বাস্থ্য, ক্রীড়া, ওষুধ এবং আরও অনেকগুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে I
পরিসংখ্যান ব্যাংক-বীমা শ্রমিক ইউনিয়ন রাজনীতিবিদ সমাজকর্মী চেম্বার ইত্যাদি ক্ষেত্রে কার্যকরI অর্থাৎ এইসব ক্ষেত্রে আমরা খুব সহজেই আমাদের ক্যারিয়ার গঠন করতে পারি I এছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যার সমাধান করে যেমন সামাজিক অর্থনৈতিক সমস্যায় পরিসংখ্যান ও গাণিতিক জ্ঞান প্রয়োগ করে পরিসংখ্যানে ক্যারিয়ার গঠন করা সম্ভবI
জব শিরোনাম
● Statisticians
● Business Analyst
● Mathematician
● Professor
● Risk Analyst
● Data Analyst
● Content Analyst
● Statistic Trainer
● Data Scientist
● Consultant
● Biostatistician
● Econometrician
● Data Scientist.
● Data Analyst.
● Senior Business Analyst.
● Statistician.
● Senior Software Engineer.
● Senior Data Analyst.
● SAS Programmer.
Job Areas:
● Census
● Ecological
● Medical
● Election
● Crime
● Education
● Film
● Cricket
● Tourism
আসলে পরিসংখ্যানের ক্ষেত্র ব্যাপক। তাই এর চাহিদাও ব্যপক। আইটি থেকে শুরু করে অর্থনীতি, অটোমোবাইল, ফার্মা সংস্থা/মেডিসিন, মনোবিজ্ঞান, বিপণন, জনস্বাস্থ্য, জীববিজ্ঞান এবং পণ্য বিকাশ, উৎপাদনসহ নানা সেক্টরে ব্যপক চাহিদা রয়েছে।
প্রায় প্রতিটি থানায় একজন করে পরিসংখ্যানবিদের পদ রয়েছে। তাছাড়া অনেকেই হতাশ হয়ে ভিন্ন জবের চিন্তা করে। তুমি যদি ভালো ভাবে পড়ো ও স্কিল ডেভেলপ করতে পারো, তাহলে দেখবে তোমার প্রতিদ্বন্দ্বি নেই। তাছাড়া বিসিএস ও সরকারি চাকরিতে তো আছেই।
ও ভালো কথা, বিসিএসে বিসিএস (পরিসংখ্যান) ও বিসিএস(প্রভাষক) এই দুইটা ফিল্ড কিন্তু শুধুই এই বিভাগের শিক্ষার্থীদের।
Google: Statistician / Quantitative Analyst, Engineering এ only Cse & Statistics গ্র্যাজুয়েটরাই apply করতে পারে।
Microsoft: Data scientists ,Market Intelligence Data Analytics Manager ,Technical Data analysts.
বাংলাদেশ ব্যাংক: বাংলাদেশ ব্যাংক এর AD (General) এর পাশাপাশি AD(Statistics) ও AD (Research) নামে দুইটি Field আছে, সেখানে শুধুমাত্র Statistics/Applied Statistics/Economics ছাড়া অন্য কেউ Apply করতে পারে না ।
Research Organization (ICDDR,B, NIPORT, AC Neilson সহ বড় বড় Research প্রতিষ্ঠানে): Applied Statistics/Statistics এর ছাত্র-ছাত্রীদের চাহিদা ।
সরকারি বিভিন্ন পর্যায়ে পরিসংখ্যান ব্যুরো, বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে, ব্যাংকসহ নানা প্রতিষ্ঠানে পরিসংখ্যানের গ্রাজুয়েটদের চাহিদা অপ্রতুল। বেসরকারি পর্যায়েও প্রতিষ্ঠানগুলো পরিসংখ্যানবিদ ছাড়া অচল। আর দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানসমূহে কাজের সুযোগ তো আছেই।
যেসব বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে পারবে:
● M.Sc Actuarial science
● M.Sc. in Library and Information Science
● M.Sc. in Quantitative Economics
● MCAMasters in Math
● Masters in Statistics
● MBA
● P.G. Diploma in Stat. Methods with
● ApplicationsSpecialist Development Program in
● SQCJRF & SRFRules
● Junior/Senior Research Fellowship
● Certificate/Diploma course in Computer
● Programming & Applications
● Part-time Certificate/Diploma course in
● SQCIntensive course in Programming and
● Application of Electronic Computers
● Part-time course in Statistical Methods and
● Applications
আমরা জানি যে কোন মৌলিক বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং মৌলিক বিষয়গুলো যেখানেই যাই সেখানেই লাগবে। যেমন যখন আমরা করতে শিখেছি তখন আমরা স্বরবর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণ দিয়ে শুরু করেছি। আমাদের এই সাবজেক্ট গুলো অবশ্যই পড়তে হবে। হয়ত মেজর সাবজেক্ট হিসেবে অথবা নন মেজর সাবজেক্ট হিসেবে আমাদের পড়তে হবে।
পরিসংখ্যানকে তেমনই একটি সাবজেক্ট অর্থাৎ এটি একটি মৌলিক সাবজেক্ট I মৌলিক বিষয়গুলোর চাহিদা সব সময় অন্যান্য বিষয়গুলো থেকে একটু বেশিই থাকে। পরিসংখ্যান ছাড়া বিভিন্ন ধরনের শিল্প কারখানা, ব্যবসা ইত্যাদি প্রায় অচল। এটি বিজ্ঞান, সামাজিক ও বাণিজ্য অনুষদের বিভিন্ন বিভাগে মেজর এবং নন মেজর সাবজেক্ট হিসেবে করানো হয়I সুতরাং আমরা বুঝতেই পারছি পরিসংখ্যান সাবজেক্টে ক্যারিয়ার গঠনে রয়েছে অপার সম্ভাবনা।তাই যারা হতে চাও পরিসংখ্যানবিদ তারা পরিসংখ্যানে ভর্তি হয়ে যাও। পরিবারের এবং দেশের নাম উজ্জ্বল করো।
লেখক: শিক্ষার্থী, পরিসংখ্যান বিভাগ ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদস্য