বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে সাবজেক্ট চয়েজ করুন ৩ উপায়ে

ভর্তি পরীক্ষা
ভর্তি পরীক্ষা  © ফাইল ছবি

আমাদের সব পাবলিক-প্রাইভেটসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজগুলোতে স্নাতক ভর্তির আগে নিদিষ্ট একটা বিষয় নির্বাচন করে নিতে হয়। যেটার উপর আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্রে নির্বাচন করব। যদিও আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এমন যে, যেটাই পড়ি না কেন শেষে বিসিএসে আমরা সকলেই আসতে চাই।

কারণ বিসিএসের সম্মান ও লোভনীয় সব সুযোগ সুবিধা। বিসিএসের কথা বাদ দিয়ে যদি আমি বলি, ভবিষ্যতে ভালো কিছু করার জন্য অবশ্যই মন মত বিষয় নির্বাচন করা অবশ্যক; তবে হয়ত ভুল কিছু বলবো না। এখানে আমি তিন ক্যাটাগরিতে আলোচনা করব, যেভাবে একজন ভর্তিচ্ছু বিষয় নির্বাচন করতে পারেন— 

পদ্ধতি-১
এখানে যাদের মেরিট সবচেয়ে প্রথমের দিকে থাকে, তাদের নিয়ে আলোচনা করি। এরা যেহেতু যেকোন বিষয় চয়েস করতে পারে; তাই এদের সবচেয়ে বেশি ভাবনা-চিন্তা করতে হয়। কারণ অপশন বেশি থাকলে বাছায় করা তুলনামূলকভাবে একটু কঠিন।

আমি সব সময় সাজেস্ট করি, প্রথমে আপনার সবচেয়ে যে বিষয় পছন্দ সেটি চয়েস করতে। তারপর দেখবেন যে তার জব ফিল্ড কেমন। অথবা আপনি যখন ৪-৫ বছর পর গ্র্যাজুয়েশন সমাপ্ত করে বের হবেন, তখন চাকরির বাজার চাহিদা কেমন থাকবে।

অনেক সময় দেখা যাবে যে, আপনার পছন্দের বিষয়টি চাকরির বাজারে খুব কম ডিমান্ড। তখন আপনাকে অবশ্যই দেখতে হবে যে, ওই বিষয়ের সাথে রিলেটিভ বিষয় আর কি কি আছে। ধরুন আপনার ক্যেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ভালো লাগে। কিন্তু আপনার পজিশন বা জব ফিল্ড তেমন নাই এটার। তখন আপনাকে অবশ্যই চয়েস করতে হবে রসায়ন, বায়োকেমিস্ট্রি এই রিলেডেট বিষয়গুলো।

যেটা একই সাথে জব ফিল্ডও আছে, আবার আপনার পছন্দের বিষয়ের সাথে একটু হলেও মিল আছে।যেখানে আপনার বোরিং ফিল অন্য যেকোন বিষয়ের থেকে কম আসবে।

পদ্ধতি-২
আমাদের যাদের মেরিট পজিশন মিডিয়াম দিকে থাকে তারা একটু দোটানায় ভুগি যে, আমাদের একটু ডিমান্ডেবল সাবজেক্ট আসতেও পারে আবার নাও পারে। ডিমান্ডেবল সাবজেক্ট বলতে আমি বোঝাচ্ছি যেগুলো জব অনেক ভালো। তবে একটা কথা মাথায় রাখা উচিত, আমরা যেই সাবজেক্টেই পড়ি না কেন, সব সাবজেক্টেরই জব ফিল্ড  আছে। আমি এখানেও বলবো যে আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রায়োরিটি দিতে হবে আমরা কোন বিষয়ে ইন্টারেস্টেড। 

এই ক্যাটাগরিতে পিওর সাবজেক্ট আশার প্রবাবিলিটি অনেক বেশি থাকে। তাই আপনি কোন বিষয়ে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন ওই বিষয়ে রিলেটেড আপনি সাবজেক্ট দেখবেন। আর এখানে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, আপনি যেই ডিপার্টমেন্ট বা সাবজেক্টে ভর্তি হতে চান ওই সাবজেক্টের ক্যারিকুলামটা দেখে নেবেন।

অনলাইনে যদি আপনি সার্চ করেন তাহলে দেখতে পাবেন ওই সাবজেক্ট বা ডিপার্টমেন্টে কোন কোন কোর্স করানো হয়। আর আপনি ওই কোর্সগুলোতে ইন্টারেস্টেড কিনা। যদি হাইলি ইন্টারেস্টেড হয়ে থাকেন তাহলে আপনি ওইভাবে সাবজেক্ট চয়েজ দেবেন। আর বাকি ক্ষেত্রে পদ্ধতি-১ এর যেগুলো বলছি ওইগুলাই ফলো করা যায়।

দিনশেষে আপনি আসলে আপনাকে কোথায় দেখতে চান এইদিক থেকে লক্ষ্য রেখে সাবজেক্ট চয়েজ দেবেন। আর পিওর সাবজেক্ট পড়ার একটা সুবিধা হলো, আপনার জব ফিল্ডের পাশাপাশি আপনি এখানে ক্যাডার সার্ভিস পাবেন আবার আপনি ইচ্ছে করলেই যেকোনো জায়গার শিক্ষক হতে পারবেন।

যেকোনো পাবলিক বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সব জায়গাতে পিওর সাবজেক্ট পড়ানো হয়। সকল ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্ট বলেন আর যেগুলো বলেন সবগুলাতে পিওর সাবজেক্টের শিক্ষক প্রয়োজন হয়। তো আপনার এই ক্ষেত্রে একটি বিশাল সুযোগ থাকছে। 

পদ্ধতি-৩
এই ক্যাটাগরিতে যাদের মেরিট পজিশন সবচেয়ে লাস্ট থাকে তাদের নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি। তারা হয়তো ভাববে, আমি সবচেয়ে শেষের দিকের সাবজেক্টগুলো পাবো। তখন তারা আসলে নিজেকে অনেক সময় নিজে ছোট করে ফেলেন। আসলে শেষের সাবজেক্ট বা প্রথমের সাবজেক্ট বা মিডিয়াম সাবজেক্ট বলে কোন কথা হয় না। সাবজেক্টগুলার ডিপেন্ড করে আপনি কতটা ইন্টারেস্টেড ওই বিষয়ে।

অনেক সময় দেখা যায়, যাদের মেরিট প্রথমের দিকে তারাও তাদের ইন্টারেস্টের সাবজেক্টগুলো যেগুলো আসলে আমরা ভাবি শেষের দিকের সাবজেক্ট ওইগুলা নিয়ে পড়েন। এতে করে একজন শিক্ষার্থী নিজের পছন্দের সাবজেক্টে বেশি ইফোর্ট দিতে পারেন। একইসঙ্গে ভালো রেজাল্ট করে অনেক সময় সে ডিপার্টমেন্টের টিচার হয়ে যান। অথবা বাইরে কোন ভালো দেশে স্কলারশিপ নিয়ে চলে যান।

সে জন্যই আমি বলি, আপনি সবচেয়ে বেশি যেই সাবজেক্টকে ভালো মনে করেন বা যেই সাবজেক্টের কোর্সগুলো আপনার ভালো লাগে সেই সাবজেক্ট চয়েস করুন। এতে করে ওই ডিপার্টমেন্টে পড়তে আপনার বোরিং ফিল হবে না।

আপনি অনলাইনে ওই ডিপার্টমেন্টে কি কি কোর্স করানো হয় এই সিলেবাস পাবেন। সকল বিশ্ববিদ্যালযয়ের ওয়েবসাইটে ডিপার্টমেন্ট সংশ্লিষ্ট সিলেবাস দেওয়া থাকে। আপনি ওইখান থেকেও ডাউনলোড করে দেখে নিতে পারেন। আপনি যেইসব বিষয়গুলোতে ইন্টারেস্টেড ওই বিষয়গুলো বা কোর্সগুলোতে কি পড়ানো হয়।

লেখক: শিক্ষার্থী, রসায়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ