ধৈর্যশীল ও পরিশ্রমীদের জন্য ‘নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা’ বিভাগ
নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ। এ বিষয়টি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তালিকায় শেষের দিকে থাকায় এই বিভাগ নিয়ে নবীন শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরূপ ধারণা থাকতে পারে। তবে নবীনদের এটি ভুল ধারণা মনে করছেন এই বিভাগে পড়ুয়া শিক্ষার্থী এবং গ্র্যাজুয়েটরা। তাদের মতে, অন্যসব বিভাগের মত নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনাও একটি স্বতন্ত্র বিভাগ।
নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের গ্র্যাজুয়েটদের মতে, ভর্তি হয়ে বিভাগে গেলেই নবীনদের ধারণা পূর্বের ধারণা অমূলক বলে মনে হবে। তাদের ভাষ্যমতে, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা অনেক সুন্দর ক্যারিয়ার গঠন করতে পারবে। পরিকল্পনাবিদদের কাজ একটি ভবন, রাস্তা, ব্রীজ অথবা পার্ক ইত্যাদির ডিজাইন দেখে সে অনুযায়ী করা উচিৎ কি অনুচিত সেটি নির্ধারণ করবে।
নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগে পড়ানো হয়- ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানিং, এনভাইরনমেন্টাল প্ল্যানিং, ল্যান্ড ইউজ প্ল্যানিং, জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম, রিমোট সেন্সিং, সার্ভেয়িং (ফিজিক্যাল এন্ড সোশ্যাল), আরবান প্ল্যানিং, রিজিওনাল প্ল্যানিং, ডিজেস্টার প্ল্যানিং, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, হিস্টোরিক কনজার্ভেশন প্ল্যানিং, ইকোনমিক প্ল্যানিং ইত্যাদি।
এছাড়াও অনেক বিষয় এতে পড়ানো হয়। যার ফলে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে অন্য দিকে যাওয়ার সুযোগ থাকে। আর্কিটেকচারের গ্রাফিক ও বেসিক ডিজাইন, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সলিড মেকানিক্স, ওয়াটার রিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং, কেমিস্ট্রি, গনিত, প্রোগ্রামিং, ইকোনোমিক্স এর বেশ কয়েকটি কোর্সও এতে পড়ানো হয়।
আরও পড়ুন: সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা সমাজের ডাক্তার, চাকরির সুযোগও প্রশস্ত
এই বিভাগ থেকে সরকারী চাকরির ক্ষেত্রসমূহের মধ্যে রয়েছে- স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, পরিবেশ মন্ত্রণালয়, প্ল্যানিং কমিশন, আরিডিআরএস, ডিটিসিএ এবং রাজউকসহ বিভিন্ন সিটি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বিভিন্ন পৌরসভা উন্নয়ন সংস্থাসমূহ।
এছাড়াও বিভিন্ন রিয়েল এস্টেট গ্রুপ, কনসালটেন্সি ফার্ম, ডিজাইন ফার্ম, দেশি বিদেশি পরিবেশবাদী সংগঠন, দেশী ও আন্তর্জাতিক এনজিও এবং বিআরটি প্রজেক্ট, খাল উন্নয়ন প্রজেক্ট, দুর্যোগ প্রতিরোধ প্রজেক্টসহ বিভিন্ন প্রজেক্ট ম্যানেজিং।
কারা পড়বেন?
নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা তাদের জন্যই, যারা নিজের জ্ঞানকে প্রয়োগের মাধ্যমে দৃশ্যমান করতে আগ্রহী। ছোটবেলা থেকেই আমরা অনেক সময় ভাবি—আমাদের চারপাশ, আমাদের শহর কিংবা আমাদের দেশটা যদি এমন না হয়ে অমন হতো! এই ভাবনাগুলোর সঙ্গে বাস্তবতার যোগসূত্র যারা দেখতে চায়, তাদের জন্যই এ বিষয়।
অনেকেরই ক্লাসরুমের গণ্ডিতে বদ্ধ না থেকে জ্ঞানের পরিধি আরও বড় করার ইচ্ছা হয়। চারপাশ থেকে পাওয়া ধারণাগুলো নিয়ে অনেকে জ্ঞানভান্ডার সমৃদ্ধ করতে চায়। কেউ কেউ চান নিজের গ্রাম, নিজের শহরটাকে জেনে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের সঙ্গে মিশে যেতে। এই ক্ষেত্রে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিষয়টি একটি সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করে।
তবে এই বিষয়টি নিয়ে পড়তে হলে অত্যন্ত ধৈর্যশীল ও পরিশ্রমী হওয়া চাই। অনেকের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসে এ রকম একটি বিষয়ের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটা রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। এ ক্ষেত্রে ধৈর্যের সঙ্গে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করলে, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনাকে ভালোবেসে ফেলা সম্ভব।
মাঝেমধ্যে ল্যাবের কাজগুলোর জন্য কিছু ফিল্ড ওয়ার্কের প্রয়োজন হয়। গ্রামে, শহরে, পথেঘাটে ঘুরে বেড়ানো লাগে। সে ক্ষেত্রে একটু পরিশ্রমী হলে কাজটাকে উপভোগ করা সম্ভব। তাই, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনায় পড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এই বিষয়গুলো অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।