যেভাবে উপস্থিত বুদ্ধি, কথা বলার দক্ষতা, ম্যাচুরিটি বাড়াবেন
বুদ্ধিমান ও স্বাস্থ্যবান মানুষকে সবাই পছন্দ করেন। বলা হয়ে থাকে বুদ্ধিমান মানুষের কথা বলার দক্ষতা যেমন উচ্চ পর্যায়ের হয়ে থাকে; তেমনি ধরেই নেওয়া হয় তারা ব্যক্তি হিসেবেও যথেষ্ঠ ম্যাচিউর হয়ে থাকেন। একসঙ্গে এসব গুণের সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত একজন মানুষকে প্রকৃত মানুষই বলা হয়। তবে এসব দক্ষতা একাডেমিকভাবে খুব একটা পাওয়া যায় না। নিজে নিজেই এসব দক্ষতা অর্জন করে নিতে হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে এসব দক্ষতা অর্জন করা যেতে পরে।
উপস্থিত বুদ্ধি বাড়ানোর কিছু উপায়
মানুষ তার মস্তিষ্কের সামর্থ্যের খুব সামান্যই ব্যবহার করে থাকে। সেই হিসেবে মস্তিষ্কের বড় একটি অংশই অব্যবহৃত থেকে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, মাংসপেশির মতোই মস্তিষ্কেরও যত বেশি চর্চা ও ব্যবহার করা হবে, ততই এটি কর্মক্ষম হয়ে উঠবে। তীক্ষ্ণ বা ক্ষুরধারও হবে। উপস্থিত বুদ্ধি বাড়াতে অনুসরণ করুন কিছু উপায়-
কম্পিউটারে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির বিভিন্ন গেমস আছে। এ রকম গেমস খেলতে পারেন; ধাঁধা বা পাজল অনুশীলনের মাধ্যমে মস্তিষ্ককে উদ্দীপিত করা যায়; মস্তিষ্কের অব্যবহৃত অংশকে সক্রিয় করতে কিছু কাজ করা যেতে পারে। যেমন: বাম হাতে দাঁত ব্রাশ করা, বাম হাতে পেয়ালা ধরে চা-কফি পান করা ইত্যাদি।; প্রতিদিন কমপক্ষে ৬ – ৭ ঘণ্টা ঘুম মস্তিষ্ককে কর্মদক্ষ করে তোলে; প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় মাছের উপস্থিতি নিশ্চিত করুন। প্রোটিন এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্ককে সতেজ ও কর্মদক্ষ করে।
চর্বি জাতীয় খাবার বর্জন করতে হবে এবং প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে; প্রতিদিন কম করে ৩০ মিনিট হাঁটলে বা হালকা ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে; হালকা ধরনের সংগীত মস্তিষ্কের জটিল সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে; ধূমপান পরিহার করে ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে অনেক বয়স পর্যন্ত মস্তিষ্ককে কর্মক্ষম রাখা যায়; মেধা বা বুদ্ধি বাড়াতে আপনাকে নিজ মস্তিষ্কের সামর্থ্য ব্যবহার নিয়ে সচেতন হয়ে উঠতে হবে।
বুদ্ধি বাড়ানোর আরও কিছু কৌশল রয়েছে-
একই কাজ অন্যভাবে করা
ইন্টেলিজেন্স হতে হলে আপনাকে একই কাজ অন্যভাবে করতে হবে। আপনার ব্রেনকে অচেনা জিনিসের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার অভ্যাস করতে হবে। ব্রেন তখন নতুন নতুন অভিজ্ঞতা মোকাবেলা করতে শিখবে। এতে ব্রেনের শক্তি বাড়বে।
মেডিটেশন
মেডিটেশন মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। পাশাপাশি ধৈর্য, মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি সবই বাড়ে। শুধু নিজের শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে মন নিবদ্ধ করতে হবে। অন্য কোথাও মনোযোগ না দিয়ে নিজের শ্বাস-প্রশ্বাস গুনতে হবে। দিনে মাত্র আধা ঘণ্টা সময় দিলেই যথেষ্ট। ঘুম থেকে ওঠার পর হালকা ব্যায়াম এবং ঘুমোতে যাওয়ার আগে মেডিটেশন করা ভালো।
হালকা ব্যায়াম
সুস্থ্য শরীরে বাস করে সুন্দর মন, মস্তিষ্কের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তাই প্রতিদিন মিনিট একটু হালকা ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করতে হবে।
খাওয়া-দাওয়া
খাবারের তালিকায় যেন প্রচুর ফলমূল থাকে। খুব বেশি তেল-ঝাল-মসলা না খেয়ে সহজপাচ্য খাবার খাওয়া অভ্যাস করতে পারলে ভালো। বেশি বেশি ভিটামিন বি খাবার গ্রহণ করতে হবে। বিকালে বা সন্ধ্যার পর হালকা খাবার খাওয়াই স্বাস্থ্যকর।
সময়মতো পর্যাপ্ত ঘুম
সব মানুষ একরকম নয়। কারও মস্তিষ্ক সকাল ৯টায় সবচেয়ে বেশি ক্রিয়াশীল থাকে, কারও আবার রাত ৯টায়। তাই নিজের একটি নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে নেওয়া উচিত বিশ্রামের জন্য। কারণ, মস্তিষ্ক যখন বিশ্রাম চাইবে, তখন ঘুমিয়ে নেওয়া উচিত। প্রতিদিন কমপক্ষে ৬ – ৭ ঘণ্টা ঘুম মস্তিষ্ককে কর্মদক্ষ করে তোলে।
যা ভাবছেন লিখে ফেলুন
যা যা ভাবছেন, তা মাথা থেকে উড়ে যেতে না দিয়ে খাতায় লিখে ফেলুন। প্রতিদিনের চিন্তা-ভাবনাগুলো লিখে রাখার জন্য কিছুটা সময় বরাদ্দ করুন।
ধাঁধা সমাধান
ধাঁধার চর্চা করতে হবে। নতুন কাউকে পেলেই তাকে ধাঁধা জিজ্ঞেস করে ধাঁধায় ফেলে দিতে পারেন। অনেকে এই জাতীয় সমস্যা সমাধানগুলোর জন্য সপ্তাহে দুই দিন অন্তত তিন ঘণ্টা বরাদ্দ রাখেন। তার চেয়ে প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে ধাঁধার সমাধান বেশি কার্যকরী।
যেভাবে কথা বলার দক্ষতা বাড়াবেন
কথা বলার দক্ষতা এমন একটি দক্ষতা যা আপনার জীবনের সকল ধাপে কাজে লাগবে। চাকরি করুন কিংবা ব্যবসা সকল স্থানে যোগাযোগ দক্ষতা লাগবেই। আমাদের অনেকের কাছে এই যোগাযোগ দক্ষতা নামটা শুনলেই ভয় লাগে, মনে হয় এটি আমার দ্বারা হবে না, অনেক ভয়ঙ্কর কিছু। প্রকৃত পক্ষে যোগাযোগ দক্ষতার মত এত সহজ আর কোন দক্ষতা নেই যা খুব সহজে আয়ত্ত করা যায়।
কথা বলার দক্ষতা হল অন্যের দেয়া তথ্য বুঝতে পারা এবং নিজে যা বলতে চাই তা অন্যকে বুঝাতে পারা। আরো সহজ করে বললে বলা যায়, আমি যা বলছি তা যদি আপনি বুঝতে পারেন এবং আপনার কথা যদি আমি বুঝতে পারি সেইটাই যোগাযোগ দক্ষতা।
যোগাযোগ করার পদ্ধতি মুলত সময়-সুযোগ এবং পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। যেমন কেউ চাইলে মৌখিক ফেইস-টু-ফেইস, লিখিত, গ্রুপ মিটিং, নোটিশ বোর্ড, ভিজ্যুয়াল ইত্যাদি নানা পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকে কীভাবে যোগাযোগের ক্ষেত্রে আরও দক্ষ হয়ে উঠতে পারেন, সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের হেড অব ব্র্যান্ড অ্যান্ড করপোরেট কমিউনিকেশন মাহজাবীন ফেরদৌস
বিভিন্ন ধরন সম্পর্কে ধারণা রাখুন
কেউ ভালো লেখেন, কেউ ভালো বলেন, কেউ ভালো শ্রোতা, কেউবা দারুণভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে জানেন (প্রেজেন্টেশন দেন)। যোগাযোগ–দক্ষতা বিকাশের জন্য সব রকমের যোগাযোগেই নিজেকে সাবলীল ও দক্ষ করে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলা ও ইংরেজিতে সাবলীলভাবে বলা ও লেখা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি কোনো কিছু বুঝে পড়া এবং মন দিয়ে শোনাও খুব জরুরি। আপনি যা বলছেন, তা আরেকজন বুঝতে পারছে কি না, কিংবা আপনি অন্যের কথা বুঝতে পারছেন কি না—দুটিই যোগাযোগ–দক্ষতার ওপর নির্ভর করে।
পড়তে হবে অনেক
খুব সরলভাবে বলা যায়, যাঁরা অনেক পড়েন, তাঁরা অনেক বিষয় সম্পর্কে খোঁজ রাখেন। কাগুজে বই-সাময়িকী-সংবাদপত্র হোক, কিংবা ইন্টারনেটে ই-পত্রিকা, ই-সাময়িকী বা পেশা-বিজ্ঞান-ব্যবসাবিষয়ক কোনো পোর্টালই হোক না কেন, নিয়মিত চোখ রাখলে সাম্প্রতিক সব বিষয় সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। যোগাযোগ–দক্ষতা বিকাশের জন্য যখনই কোনো লেখা পড়ছেন, মাথায় ‘ফাইভ ডব্লিউ-এইচ’ নামের সূত্রটি গেঁথে নিতে হবে। ফাইভ ডব্লিউ-এইচ হলো হু, হোয়াট, হোয়্যার, হোয়েন, হোয়াই ও হাউ। লেখাটি লেখক কেন লিখেছেন, কার জন্য লিখেছেন, কোন পরিপ্রেক্ষিতে লিখেছেন, কী কী বিষয় তুলে ধরা হয়েছে, কোন কোন বিষয় যুক্ত করা যেতে পারে, আপনি লিখলে কীভাবে লিখতেন—এসব মাথায় দ্রুত এঁকে ফেলতে হবে। যত বেশি পড়বেন, যত জানবেন, কথা বলার সময় আপনি তত আত্মবিশ্বাস পাবেন। জানার ঘাটতি থাকলে বুঝিয়ে বলা ও শুনে বোঝা—দুটি কাজই কঠিন হয়ে যায়।
অনুসরণ করতে হবে
যোগাযোগ–দক্ষতা বিকাশের জন্য বক্তৃতা (পাবলিক স্পিকিং) বা নিজের ভাবনা উপস্থাপন করার (প্রেজেন্টেশন) কৌশল জানতে হবে। প্রেজেন্টেশনের বিভিন্ন কৌশল সম্পর্কে জানার বেশ আলোচিত একটি বই হচ্ছে লেখক কারমাইন গ্যালোর দ্য প্রেজেন্টেশন সিক্রেটস অব স্টিভ জবস বইটি। বইটিতে অ্যাপল কম্পিউটার ইনকরপোরেটেডের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবসের বিভিন্ন ব্যবসা–সংক্রান্ত প্রেজেন্টেশন তৈরির কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আপনি নিজেকে দক্ষ করে তুলতে চাইলে যেকোনো বিখ্যাত ব্যক্তির কৌশলগুলো সহজে অনুসরণ করতে পারেন। ইউটিউবে পৃথিবীখ্যাত ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা আর প্রভাবশালীদের বক্তব্য দেওয়ার কৌশল নিয়ে অনেক ভিডিও দেখতে পাবেন। এ ছাড়া পড়তে পারেন ক্রিস অ্যান্ডারসনের লেখা টেড টক: দ্য অফিশিয়াল টেড গাইড টু পাবলিক স্পিকিং।
কোর্স করতে পারেন
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া টেক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিখ্যাত অনলাইন কোর্স আছে যোগাযোগ–দক্ষতা বিকাশের জন্য। ওয়েব ঠিকানা: coursera.org/specializations/improve-english। ব্যবসা বা কর্মক্ষেত্রে যোগাযোগ, ই–মেইল লেখা, প্রেজেন্টেশন তৈরির মতো কৌশলগুলো কোর্স থেকে শেখার সুযোগ আছে। প্রায় ৬৮ হাজার শিক্ষার্থী কোর্সটিতে নিবন্ধন করেছেন। যোগাযোগ–দক্ষতা বিকাশের জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে কিছু প্রাথমিক কোর্স করানো হচ্ছে। এই কোর্সগুলো অনেক ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীরা মনোযোগসহকারে করেন না, গুরুত্ব দেন না। এসব কোর্সে ক্রেডিট সরাসরি যুক্ত না থাকলেও কোর্সগুলো পরবর্তী পেশাজীবনে নিজেকে তৈরি করতে বেশ কার্যকর।
চর্চা করা শিখতে হবে
ক্রিকেট-ফুটবল-ব্যাডমিন্টন, কিংবা অন্য যেকোনো খেলোয়াড়দের দেখুন, তাঁরা সব সময় চর্চার মধ্যে থাকেন। যোগাযোগ–দক্ষতাও প্রতিদিন চর্চার মাধ্যমে বিকশিত হয়। তাই চর্চার দিকে আরও মনোযোগ দিতে হবে। সাধারণ একটি ই–মেইল লেখা থেকে শুরু করে বক্তৃতা দেওয়া—প্রত্যেক ক্ষেত্রে নিজের স্বকীয়তা রাখতে হবে। আপনি হয়তো বন্ধুকে ই–মেইল পাঠাচ্ছেন, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলছেন, এসব ক্ষেত্রেও দক্ষ যোগাযোগের চর্চা করুন। টোস্টমাস্টার্স কিংবা টেডটকের মতো বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ–দক্ষতার অধিবেশনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিয়মিত চর্চার সুযোগ নিতে পারেন। টোস্টমাস্টারের গাইড বুক থেকে শিখতে পারেন চর্চার বিভিন্ন কৌশল। গাইডের ঠিকানা: tiny.cc/hopvgz
ভুল থেকে শেখা যায়
যেকোনো কিছুর শুরুর দিকে দুর্বলতা থাকে, ভুল থাকে। ইংরেজিতে কথা বলা কিংবা প্রেজেন্টেশন দেওয়ার সময় ভুল হওয়া স্বাভাবিক। ভুল থেকেই শিখতে হবে। বিখ্যাত বক্তারা তাঁদের বক্তব্য শেষে দর্শকদের কাছ থেকে ভুলভ্রান্তি কী ছিল, তা জানার চেষ্টা করেন। ভুল দেখে অন্যরা হাসতে পারে, কটু কথা বলতে পারে—এসব নিয়ে মন খারাপ করলে চলবে না। একটি ডায়েরিতে নোট নেওয়ার মাধ্যমে যেসব ভুল হচ্ছে, সেগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করুন।
শরীরী ভাষা বা ‘ননভার্বাল’ যোগাযোগ
যেকোনো যোগাযোগের ক্ষেত্রে আপনি শুধু বলে গেলে হবে না। লেখার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। আপনি যা বলছেন বা লিখছেন, সেটা যার উদ্দেশে বলা বা লেখা হচ্ছে, তিনি বুঝতে পারছেন কি না, তা আপনাকে জানতে হবে। পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝতে হবে, অন্যের শরীরী ভাষা পড়তে জানতে হবে। ধরুন, আপনি দুর্দান্ত একটি আইডিয়া বা ধারণা উপস্থাপন করছেন। শ্রোতার শরীরী ভাষা থেকেই আপনি বুঝতে পারবেন, তিনি আপনার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছেন কি না কিংবা বুঝতে পারছেন কি না। মুখের হাসি, চোখে চোখে তাকানো (আই কন্টাক্ট), হাতের অবস্থান কিংবা নড়াচড়া—এসবও গুরুত্বপূর্ণ। শুধু কথা নয়, শরীরী ভাষাও অন্যের সঙ্গে আপনার সফল যোগাযোগ স্থাপনে সহায়তা করবে।
জানতে হবে নিজেকে
প্রবাদে বলা হয়—নো দাইসেলফ, নিজেকে জানো। আমি কেমন, আমার ব্যক্তিত্ব কেমন, কোথায় আমার শক্তি বা দুর্বলতা, আমার যোগ্যতা কী, কোন কোন বিষয়ে আমি দক্ষ, এগুলো জানতে হবে। যোগাযোগ–দক্ষতা ধীরে ধীরে বাড়বে, যদি আপনি নিজের ব্যক্তিত্ব বিকাশের দিকে মনোযোগী হন। ইতিবাচক মনোভাব, যেকোনো পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়ার কৌশল, নিজের শক্তির জায়গাগুলোকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করার দক্ষতা আপনাকে এগিয়ে রাখবে।
পরামর্শ নিন
যোগাযোগ–দক্ষতার কৌশল আয়ত্তের জন্য আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা কোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠানের পেশাজীবীর পরামর্শ নিতে পারেন। আপনি যে ক্ষেত্রে পেশা গড়তে চান কিংবা যে বিষয়ে পড়ছেন, তা সম্পর্কে কী কী যোগাযোগ–দক্ষতা প্রয়োজন, তা জানতে পরামর্শ নিন। যোগাযোগ–দক্ষতা বিকাশের জন্য কোচ বা মেন্টর নির্বাচন করে তাঁর কাছ থেকে হাতে–কলমে শেখার চেষ্টা করুন। ‘কথা বলা আবার শেখার কী আছে’—এমনটা ভাববেন না।
নেতৃত্ব বিকাশ করুন
যোগাযোগ–দক্ষতা আপনাকে যেকোনো ক্ষেত্রে নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ করে দেবে। কোনো দলের নেতা বা করপোরেট প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক হওয়ার পর কেউ যোগাযোগ–দক্ষতা প্রকাশ করে না। যোগাযোগ–দক্ষতা বিকাশে যেকোনো ব্যক্তিই যেকোনো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষানবিশ থেকে কর্মকর্তা হতে পারেন, দলের সাধারণ সদস্য থেকে হয়ে চলে যেতে পারেন সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নেতৃত্বের জায়গায়।
সুযোগ কাজে লাগান
কথা বলা, লেখা বা নিজের ভাবনা উপস্থাপনের ক্ষেত্রে আপনি যদি খুব আত্মবিশ্বাসী না-ও হন, তবু এসবের কোনো সুযোগ হাতছাড়া করবেন না। বিতর্ক, বিজনেস কেস কম্পিটিশন, রচনা প্রতিযোগিতা, বক্তৃতা—এসব থেকে নিজেকে দূরে রাখবেন না। বিভিন্ন ধরনের, বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলুন।
যেভাবে ম্যাচুরিটি বাড়াবেন
একজন ম্যাচুউর মানুষ এটা জানে যে পরিবর্তন কতটা দরকার। তাই সে পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত থাকে। কিন্তু একটা ইম্যাচুউর মানুষ সবসময় পরিবর্তনে ভয় পায়। বন্ধুদের চায়ের কাপের ঝড় থেকে পারিবারিক আড্ডা কিংবা অফিসের মিটিং, প্রায়ই আপনি আপনার কাজ দ্বারা ম্যাচুউর ইম্যাচুউরের কাঠগড়ায় নিজেকে দাঁড় করিয়ে দিবেন। নিজের কাঠগড়ায় নিজেকে দাঁড় করানোও কিন্তু এক ধরনের ম্যাচুউরিটির লক্ষণ! ঠিক কি করে বুঝবেন আপনি এখনো ম্যাচুউর নাকি ইম্যাচুউর??
অহেতুক তর্কে লিপ্ত না হওয়া
একজন ম্যাচুউর আর ইম্যাচুর মানুষের তফাৎটা এখানেই। মানুষ সবসময় তর্কে জিততে চায়। কিন্তু তর্কে জিততে হলে সবসময় তর্ক করতে হয় না। বুদ্ধিমান মানুষ সবসময় অন্যকে জিততে দেয়। “You can’t argue with stupidity” – – Jermaine Jackson।
ধরুন, কেউ একজন ভুল কিছু নিয়ে তর্ক করছে, আপনি তাকে ভুলটা ধরিয়ে দিলেন। কিন্তু তিনি মানতে নারাজ। তিনি তার ধারনাতেই অটল থাকতে চান। এক্ষেত্রে একজন ইম্যাচুউর মানুষ তার সাথে তর্ক করতেই থাকবে, এবং একজন ম্যাচুউর মানুষ তাকে এড়ায় গিয়ে বলবে, “হ্যা ভাই, আমার জানার ভুল থাকতে পারে, বোধ হয় আপনিই ঠিক।”
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
মনে করুন, কেউ আপনার কোন উপকার করল। আপনি যদি তাকে বলেন, “আমার যে কি ভালো লাগল আপনি আমার জন্য এতটা করলেন!” কিংবা বললেন “আপনাকে কি বলে যে ধন্যবাদ জানাব!” দেখুন ব্যাপারটা আসলে কিছুই না, কিন্তু মুখের দুটো কথাই অনেক কিছু। আপনার সাহায্য কর্তা আপনাকে আবার পুনরায় সাহায্য করতে চাইবে।“Feeling gratitude and not expressing it is like wrapping a present and not giving it” – William Arthur Ward।
তার চেয়েও বড় কথা যখন আপনার কোন কাজের জন্য, আপনার প্রতি কেউ কৃতজ্ঞ থাকবে তখন আপনারো মনে হবে, আপনি সঠিক মানুষকেই সাহায্য করেছেন। এবং ম্যাচুউর মানুষজন এই গুনটি খুবই চমতকার ভাবে রপ্ত করেন।
ক্ষমা করা
ক্ষমা মহৎ এর লক্ষন একথা আমরা কমবেশি সবাই পড়ি, কিন্তু মানি কজন! একজন ম্যাচুউর মানুষ এটা কখনোই দেখে না, একটা মানুষ কেন ভুল করল। সে সবসময় এটা দেখতে সচেষ্ট থাকে যে, সেই মানুষটা এই ভুল কোন পরিস্থিতিতে করল।
আর একজন ইম্যাচুউর মানুষ কখনোই ক্ষমা করতে জানে না। সে সবসময় ভাবে যে ভুল করে সে ছোট হয়ে যায়, তাই তাকে আর কখনোই দ্বিতীয়বার সুযোগ দেয়া যাবে না। “The weak can never forgive. Forgiveness is the attribute of the strong” – Mahatma Gandhi। সবসময় একজন বুদ্ধিমান মানুষের উচিত, অন্যের প্রতি সহানূভুতিশীল হওয়া তাকে বোঝা, এবং তাকে দ্বিতীয়বার সুযোগ দেয়া। নাহলে সে কোনদিন আরেকজন ম্যাচুউর মানুষে পরিণত হতে পারে না।
অন্যের জন্য চিন্তা করা
একজন ম্যাচুউর মানুষ সবসময় অন্যের জন্য চিন্তা করে। একটা কাজ করার আগে, সেই কাজটা তার আশেপাশের মানুষের মানুষের উপর কি প্রভাব পড়বে তাও চিন্তা করে।
একটু লক্ষ করলেই দেখবেন, একজন ম্যাচুউর মানুষ কখনোই পাবলিক প্লেসে সিগারেট ধরাবে না কারণ তা সেখানকার মানুষের জন্য হ্মতিকর হতে পারে। আর একজন ইম্যাচুউর মানুষ সবসময় নিজের চিন্তা করে, নিজের কাছে যেটা ভাল মনে হয় সেটাই করে। কিন্তু এটা আমাদের সবসময় বোঝা উচিত, আমার কাছে যা ভাল অন্য কারো জন্য তা ক্ষতিকর হলেও হতে পারে।
আরও পড়ুন: প্রাণভরা তারুণ্য কেন মৃত্যুকে বেছে নিচ্ছে?
পরিবর্তনকে মেনে নেয়া
আমেরিকায় যখন প্রথম রেললাইন বসানো হয়, তখন আমেরিকার একদল কৃষক বিদ্রোহ ঘোষনা করেন। তারা কর্তৃপক্ষকে বলেন, ট্রেনের বাঁশির শব্দে তাদের গরু গুলো ছোটাছুটি করে হাত পা ভেংগে ফেলছে। তাই তারা রেললাইন চায় না। আজ আমেরিকা বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মধ্যে একটা অথচ চিন্তা করা যায়! একসময় তাদের দেশের জনগনই ট্রেন চাইত না।
যদি এমন হতো তারা কোনদিনই ট্রেন মেনে নিতে পারছে না। তখন কখনোই আমেরিকার উন্নতি সম্ভব হতো না। ট্রেন থেকে মেট্রো, মেট্রো থেকে প্লেন এর সফর তারা মেনে নিয়েছে আর এভাবেই ক্রমান্বয়ে আজ আমেরিকা এত উন্নতির শীর্ষে। কাজেই উন্নত হওয়ার জন্য পরিবর্তন খুবই দরকার।“Intelligence is the ability to adapt to change” – Stephen Hawking।
একজন ম্যাচুউর মানুষ এটা জানে যে পরিবর্তন কতটা দরকার। তাই সে পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত থাকে। কিন্তু একটা ইম্যাচুউর মানুষ সবসময় পরিবর্তনে ভয় পায়।
দায়িত্বশীল হওয়া
যখন আপনি দেখবেন আপনি দায়িত্ব নিতে শিখবেন, তখন মানুষ আপনাকে বিশ্বাস করতে চাইবে। মানুষের ভরসা অর্জনের জন্য দায়িত্বশীলতা অনেক বড় একটা গুন।
ধরা যাক, আপনার কোম্পানিতে প্রতিদন্ধী দুজন। তারা দুজনেই প্রোমোশনের জন্য যোগ্য । এখন আপনি কাকে প্রোমশন দিতে চাইবেন! অবশ্যই যে বেশি দায়িত্বশীল তাকে। দায়িত্বশীলতার মধ্য দিয়ে আপনি আপনার সাফল্যের দিকে কয়েক ধাপ এগিয়ে যান। “The price of greatness is responsibility” – Winston Churchill।
একজন ম্যাচুউর মানুষ এটা জানেন তাই তিনি সব সময় দায়িত্বশীল হন। যে কাজ শুরু করেন সেটী ঠিকভাবে শেষ করেন। তারপর অন্য কাজে হাত দেন। কিন্তু একজন ইম্যাচুউর মানুষ তার কাজের প্রতি একটা গুরুত্বশীল হন না, সে কাজ হেলায় ফেলে রাখে। পরিণামে সে তার লক্ষ্যের থেকে কয়েক ধাপ পিছিয়ে যান।
গুরুত্ব দেওয়া
একজন ম্যাচুউর মানুষ সবসময় একজন ভালো শ্রোতা হন। সে সব সময় সচেষ্ট থাকেন সামনের মানুষ কি বলে তা জানার জন্য। যখন আপনি কাউকে তার কাজ বা কথার গুরুত্ব দেন তখন সেই মানুষটাও আপনার কাজ বা কথার গুরুত্ব দিতে শুরু করে।
তাই গুরুত্ব পেতে হলে, গুরুত্ব দিতে হয় এটা একজন ম্যাচুউর মানুষ জানেন। কিন্তু একজন ইম্যাচুউর মানুষ সব সময় নিজের কথাটাই জাহির করতে চায়। নিজের কথাই সবসময় শুনায় এবং ভাবতে থাকে যে তার কথাই ঠিক। একজন মানুষ যে সবসময়ই ঠিক হতে পারে না এটা একজন ম্যাচুউর মানুষ জানেন। [সূত্র: স্পাইকস্টোরি]