অফিসের চাপ সামলে সতেজ থাকবেন যেভাবে

অফিস মানেই কাজের চাপ
অফিস মানেই কাজের চাপ  © সংগৃহীত

কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপ অনুভব করেন অনেকে। অফিস মানেই কাজের চাপ। একটি শেষ না হতেই আরেকটি কাজ এসে উপস্থিত। কেউ চাপে থাকেন বসকে নিয়ে। আর কেউ চাপে থাকেন সহকর্মীদের নিয়ে। মাঝে মাঝে কাজের চাপ সামলানো বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। আর এসবের কারণে মানসিক চাপ হয়ে থাকে। আর এভাবে কর্মক্ষেত্র হয়ে উঠে অস্বস্তিকর। কাজের ব্যস্ততায় দিনের সময়টুকু কখন ফুরিয়ে যায় খেয়াল থাকে না অনেকেরই। এরপর অফিসের বাড়তি কাজ বাড়িতে বয়ে আনতে হয় অনেককেই। 

আপনি কাজ জানেন বলেই অফিস আপনাকে সুযোগ দিয়েছে। কাজ তো থাকবেই, তাই বলে কি নিজের প্রতি উদাসীন হয়ে যাবেন? আপনি যদি কেবল কাজের চাপটুকুই উপলব্ধি করতে শেখেন তবে বাকি আনন্দ জীবন থেকে হারিয়ে যাবে। প্রত্যেকেই নানা চাপ সামলে তবেই টিকে থাকে। তাই কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপ মুক্ত থাকতে করতে পারেন বেশ কিছু কাজ।

অফিসে কাজের যতই চাপ থাকুক, নিজের জন্যও রাখুন কিছুটা সময়। কীভাবে? চলুন জেনে নেওয়া যাক-

কাজের পরিকল্পনা
দিনের শুরুতেই ঠিক করে নিন কোন সময় ঠিক কোন কাজটা করবেন। তবে দিন গড়নোর সঙ্গে সঙ্গে হাতে একাধিক নতুন কাজ আসতেই থাকে। এক এক করে নোট করে রাখুন সেসব কাজের তালিকা। এবার কাজের গুরুত্ব অনুযায়ী ঠিক করে নিন কোন কাজটি আগে শেষ করবেন।

নমনীয়
যে কোনো পরিস্থিতিতে সবসময় সহজ থাকতে হবে। আমরা যা আশা করি, তা নাও ঘটতে পারে। আর সবসময় ঘটেও না। তাই অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে হতাশ না হয়ে নমনীয় থাকতে হবে। কোন কাজ পারলেন না কিংবা পারছেন না খুব সহজে শেয়ার করুন। খুলে বলুন। কোন কিছুতেই চাপ নেওয়া দরকার নেই। আবার এর মানেই এই নয় যে বেখেয়ালে থাকবেন। শুধু চাপ না নিয়ে নমনীয় হয়ে যান। তাইলেই দেখবেন মানসিক চাপ অনেকটা কমে গেছে।  

Office-4

সময় ভাগ করে নেয়া
কাজ জমিয়ে রাখলেই বিপদ। কারণ জমে থাকা অতিরিক্ত কাজের চাপই আপনার ধকল আর দুশ্চিন্তার মূল কারণ। চেষ্টা করুন যেদিনের কাজ, সেদিনই সেরে ফেলতে। কাজ একদমই জমিয়ে রেখে দেবেন না। বাড়ির সময়টুকুও বাড়িতেই দিন, অফিসের কাজ সেখানে না নিয়ে যাওয়াই ভালো। কাজের চাপ আর কান্তি কাটিয়ে তুলতে ‘ফ্যামিলি টাইম’ খুবই জরুরি।

নিঃশ্বাসের ব্যায়াম করুন
পাঁচ মিনিট শ্বাসের ব্যায়াম করে নিতে পারেন কাজের ফাঁকেই। নিঃশ্বাসের ব্যায়াম আপনাকে পুরো দিন সতেজ থাকতে সাহায্য করবে। কাজের ফাঁকে মাত্র পাঁচ মিনিট সময় নিয়ে নিঃশ্বাসের ব্যায়াম সেরে নিন। সেজন্য প্রথমে মেরুদণ্ড সোজা করে বসে বুক ভরে গভীর নিঃশ্বাস নিন। এবারে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। পাঁচ মিনিট এই ব্যায়াম করলেই মাথা পরিষ্কার লাগবে অনেকটা।

সহকর্মী এবং বসের সঙ্গে সম্পর্ক
দিনের বেশিরভাগ সময় অফিসেই কাটে, তাই অফিসকে অন্য একটি পরিবার বললে ভুল হবে না। কর্মক্ষেত্রে আপনার সহকর্মী এবং বসের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক ঠিক কেমন, আপনার অফিস চলাকালীন আপনার চারপাশে কেমন লোকজন কাজ করছে তার উপরেও আপনার কাজ নির্ভর করে অনেকখানি। সবার সঙ্গেই কাজ চালিয়ে যাওয়ার মতো সুসম্পর্ক বজায় রাখা জরুরি। বিশেষ করে টিম ওয়ার্কের ক্ষেত্রে এই পারস্পরিক সম্পর্কই কাজের গতিকে বেঁধে রাখে।

এছাড়া কিছুটা সময় অবসর পেলে তাদের সঙ্গে চা-কফি খেতে পারেন। করতে পারেন অল্প-স্বল্প গল্পও। সহকর্মীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকলে নিজেকে ভালো রাখা সহজ হয়ে যাবে। তবে কোনো কোনো সহকর্মী এই সুসম্পর্কের সুযোগ নিয়ে আপনার উপর অতিরিক্ত কাজের ভার চাপাচ্ছেন কি না, সে সম্পর্কে সচেতন থাকুন। প্রয়োজনে কথা বলুন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে।

একটু হাঁটুন
আপনার নিশ্চয়ই একটানা বসে থেকে কাজ করার অভ্যাস আছে? আসলে কর্মজীবী প্রায় প্রত্যেকেরই এই অভ্যাস আছে। এটি শরীরের জন্য একদমই ভালো নয়, তা কি জানেন? নিজেকে ভালো রাখতে তাই একটানা বসে থাকার অভ্যাস করবেন না। মাঝে মাঝে উঠে মিনিট পাঁচেক হাঁটাহাঁটি করুন। প্রতি এক ঘণ্টায় এভাবে বিরতি নিলে উপকার পাবেন। চাইলে অফিসের বাইরেও একটু হেঁটে আসতে পারেন। এতে মন ভালো থাকবে।

খাবারের দিকে খেয়াল করুন
কাজের চাপ মাথায় নিয়ে খাওয়াদাওয়া করবেন না। খাবার খান নিশ্চিন্ত মনে। কাজের চাপ নিয়ে খেলে মোটেই ঠিকমতো খাওয়া হয় না। তাই মন  দিয়ে খাবার খান। এতে খাবার খেতেও ভালোলাগবে, সেইসঙ্গে হজমও ভালো হবে। অনেকে অফিসে থাকাকালীন খাবারের প্রতি সচেতন থাকেন না। কিন্তু যেখানেই থাকুন না কেন, আপনাকে স্বাস্থ্যকর খাবারই খেতে হবে। নয়তো অসুস্থ হয়ে পড়ার ভয় থাকে।

অফিসে যেসব খাবার খেতে পারেন

বিরতি
টানা কাজ করে যাবেন না। মনে রাখবেন, যন্ত্রেরও বিরতির প্রয়োজন হয়। মাঝে মাঝে কাজ থেকে বিরতি নেওয়া জরুরি। একটানা কাজ করলে বিরক্তি আসবেই। তাই মাঝেমধ্যে কাজ থেকে পাঁচ থেকে দশ মিনিটের জন্য বিরতি নিন। এই সময় নিজের পছন্দের গান শুনে নিতে পারেন। আপনি যদি একটানা কাজ করতে থাকেন তবে একটা সময় বিরক্তি লাগতে শুরু করবে। তখন কাজে মন দেওয়া কঠিন হয়ে যাবে। তাই কাজের মাঝে বিরতি নিন। 

আরও পড়ুন: আক্ষেপ নয় জীবন উভোগ করো, তরুণদের উদ্দেশ্যে ১০ পরামর্শ জ্যাক মা’র

সময়ে কাজ
সবসময় সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করে ফেলুন। এতে করে আপনার মধ্যে মানসিক চাপ কাজ করবে না। আর যদি কোন কাজ সময়ের মধ্যে শেষ না করে, বসে থাকেন। আড্ডা দেন কিংবা কাজ পেছনে ফেলে দেন। এতে করে মানসিক চাপ অনেক বেড়ে যাবে। তাই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করুন। কোন কাজই না ফেলে রেখে, ধীরে ধীরে করতে শুরু করে দিন। দেখবেন, এক সময়ে শেষ হয়ে গেছে।

সাহস
সবসময় প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার নৈতিক সাহস থাকতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যক্তি অন্যের দ্বারা প্রভাবিত না হয় সেদিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। একটা বিষয় ভালো করে মনে রাখতে হবে, সকলের শ্রমে ঘামে গড়ে উঠে একটি প্রতিষ্ঠান। তাই কোনভাবেই প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হওয়া যাবে না। সেইসাথে কাজের ব্যাপারে আন্তরিক হয়ে উঠুন। আন্তরিক হয়ে উঠুন অফিসের সম্পর্কগুলোর ক্ষেত্রে। 


সর্বশেষ সংবাদ