ঢাবির কলা ইউনিট: শেষ ২ দিনে ভর্তি প্রস্তুতির দশ পরামর্শ
আর মাত্র এক দিন পরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আগামী শনিবার (০৬ মে) সকাল ১১ টায় ঢাবি বি ইউনিটের পরীক্ষা। আশা করি এই পরামর্শগুলো অ্যাডমিশন পরীক্ষার্থীদের অনেক প্রশ্নের সমাধান দিবে ইনশাআল্লাহ।
অ্যাডমিশনের ক্ষেত্রে পরীক্ষার আগের রাত ও পরীক্ষার সময়টুকু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের কোনো ভুল সিদ্ধান্ত দীর্ঘদিনের নেওয়া প্রস্তুতিকে নষ্ট করে দিতে পারে। তাই কিছু বিষয়ে একটু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী বলে আমি মনে করছি।
০১. প্রথমে আসি পরীক্ষার আগের রাত নিয়ে। আসলে পরীক্ষার আগের রাতে পড়াশোনা করাটা অনেকটাই বেহুদা মনে হয় আমার কাছে, অন্তত অ্যাডমিশনের ক্ষেত্রে। তবে সাম্প্রতিক বিষয়াবলী ও একেবারে গুরুত্বপূর্ণ টপিকসগুলো জাস্ট রিভাইস দেওয়া যেতে পারে। আর কোনোভাবেই রাত জাগা যাবে না। তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাওয়া। যাদের সাধারণত রাত জাগার অভ্যাস আছে যদি তোমাদের পরীক্ষার কেন্দ্র আশেপাশে হয় তাহলে তোমরা সকালেও হালকা ঘুমিয়ে নিতে পারো যদি রাতে ঘুম না হয়। তবে সকালে না ঘুমানোটাই সবচেয়ে ভালো।
০২. পরীক্ষার হলে ঢোকার আগে কোনো চাপ নেওয়া যাবে না। যাদের উপর মানুষের এক্সপেক্টেশন একটু বেশি তারা এসব ভুলে যাও। এই বাড়তি চাপ নিতে গেলে অনেকসময় পরীক্ষা খারাপ হয়। খুব ভালো করতে হবে, ভালো না করলে অনেক কিছু হয়ে যাবে, চান্স না পেলে দুনিয়া উল্টে যাবে এসব একেবারে মাথায় নেওয়া যাবে না। তোমার মোটামুটি ভালোই প্রস্তুতি আছে বা তুমি যথেষ্ট চেষ্টা করেছো। এখন বাকিটা আল্লাহ ভরসা। তোমার কিছুই করার নেই।
০৩. কেন্দ্রে ঢোকার পর আশেপাশে দেখে নিবা। এদিক ওদিক তাকিয়ে বা দরকার হলে আশপাশের পরীক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করবা। রুমে ঘড়ি না থাকলে গার্ডে-থাকা শিক্ষককে বলবে যেন ১০/১৫ মিনিট পরপর সময় বলে দেয়।
০৪. পরীক্ষা শুরু অন্তত ১৫ মিনিট আগে এমসিকিউ শিট দিয়ে দিবে। তখন ধীরে-সুস্থে রোল রেজিস্ট্রেশনসহ প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করবা। কোনো কনফিউশন থাকলে গার্ডে থাকা শিক্ষককে জিজ্ঞেস করে নিবে। আর যদি বৃত্ত-ভরাটে কোনো সমস্যা হয়ে যায় তাহলে হতাশ না হয়ে গার্ডকে বলবে। সে যেভাবে বলে সেভাবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবে। তবে বৃত্ত-ভরাটের সময় একটু সতর্কতা অবলম্বন করলে আশা করি কোনো সমস্যা হবে না।
০৫. প্রশ্ন পাবার পর দু’মিনিট সময় নিয়ে দেখে নিও। প্রশ্নের ক্রমিক অনুযায়ী উত্তরপত্রের বৃত্ত-ভরাট কোথা থেকে শুরু হয়েছে দেখে নিবে। ইংরেজির বৃত্ত-ভরাট যাতে বাংলা অংশে না হয়ে যায় আবার লিখতের ৩ নং প্রশ্নের বৃত্ত-ভরাট যাতে ৪ নং এ না হয়ে যায়।
০৬. যেগুলো সহজেই উত্তর করতে পারবে প্রথম ধাপে সেগুলো উত্তর করে ফেলবে। বাকিগুলো স্কিপ করে যাবে অর্থাৎ মার্ক করে রাখবে। দ্বিতীয় ধাপে যেগুলোতে দুইটা অপশনের মধ্যে কনফিউশন সেগুলো উত্তর করার চেষ্টা করবে। তৃতীয় ধাপে যেগুলো একেবারে আওতার বাহিরে সেগুলো নিয়ে চেষ্টা করবে। যদি নেগেটিভ মার্কিং এর সম্ভাবনা থাকে তাহলে স্কিপ করে যাবে। যাদের অনুধাবন দক্ষতা ভালো অর্থাৎ একটু ভেবেচিন্তে আন্দাজে উত্তর করলেও হয়ে যায়, তারা চাইলে স্কিপ কমও করতে পারো (এটা অবশ্য সবার জন্য না এবং অতিরিক্ত অনুমানে না দাগানোই উত্তম হবে সবার জন্য)।
০৭. যদি আগেভাগে এমসিকিউ হয়ে যায়, তাহলে দায়িত্বে থাকা শিক্ষককে বলে একটু আগেভাগে রিটেন প্রশ্ন নেওয়া যায় কিনা চেষ্টা করে দেখতে পারো। একটু চেষ্টা করবে, জোরাজোরি করবা না, না পেলে সমস্যা নেই। রিটেনের সময় থাকবে ৪৫ মিনিট।
০৮. রিটেন প্রশ্ন পাবার পরে প্রশ্নটা ভালো করে দেখে নিতে হবে। বি ইউনিটের জন্য উত্তরপত্রের জায়গা নির্দিষ্ট করা থাকে। কোনটার জন্য কতটুকু জায়গা বরাদ্দ এবং কোথায় কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে দেখে নিতে হবে। তারপর যেটায় সময় কম লাগবে কিন্তু মার্কস বেশি সেটা উত্তর করবে। কোনো একটা প্রশ্নের উত্তরে অতিরিক্ত সময় কোনোভাবেই নেওয়া উচিত হবে না। যেমন ইংরেজি ১০ মার্কসের প্যারাগ্রাফের জন্য ১০ মিনিটের বেশী নেওয়া উচিত হবে না। তবে অতিরিক্ত সময় থাকলে ভিন্ন কথা। আর যেসব প্রশ্নের জন্য অনেক লিখতে হবে, যেমন- বাংলায় সৃজনশীল টাইপের যেটা থাকে বা ইংরেজির প্যারাগ্রাফ, সেগুলো শেষের দিকে উত্তর করা। যদি সময় বেশি থাকে তাহলে ভালো করে সময় নিয়ে লেখা আর সময় না থাকলে দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করা। রিটেন পরীক্ষার সময় সময় মেইন্টেইন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সো বি কেয়ারফুল।
০৯. আর কোনো ভাবেই কোনো প্রশ্নের উত্তর ছেড়ে আসা যাবে না। যদি দুর্ভাগ্যক্রমে ১০ মার্কস করে দুইটা প্রশ্নের উত্তর ২০ মিনিটের জায়গায় ১০ মিনিটে দিতে হয় তাহলে এই ১০ মিনিটের মধ্যেই দুইটা প্রশ্নের উত্তর করা উচিত। একটা ভালোভাবে লিখে সম্পূর্ণ উত্তর করে আরেকটা একেবারে ছেড়ে আসাটা বোকামি হবে। দুইটাই দ্রুত লিখে কম সময়ের মধ্যে যতটুকু সম্ভব গুছিয়ে লিখতে হবে।
১০. আর পরীক্ষার হলে ঢোকার পরে এবং কোনো প্রশ্নের উত্তর ভুলে গেলে মনে মনে দরূদ শরীফ পড়তে পারো। প্রশ্ন কমন না আসলে মনে করবা কারোই কমন আসে নাই। সত্যিই ৮০ থেকে ৯০% শিক্ষার্থীদের কমন আসবে না যদি তোমার কমন না আসে। সুতরাং একেবারে মাথা ঠাণ্ডা রেখে যা উত্তর করতে পারো ওইটাই তোমার লাভ। তাই কমন না আসলে খুব চিন্তিত হওয়া বা হা-হুতাশ করাটা বোকামি ছাড়া কিছু নয়।
পরিশেষে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকো। আব্বু-আম্মুকে, আত্মীয়স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদেরকে দোয়া করতে বলো। আল্লাহ সবাইকে সবার প্রত্যাশা অনুযায়ী উত্তম প্রতিদান দান করুক। আর পরীক্ষার হলে একটু আগেভাগেই উপস্থিত থাকার চেষ্টা করবে, অন্তত ঘণ্টা-খানেক আগে। জ্যামের কারণে বা অন্য কোনো কাড়নে আরেকটু দেরী হলে প্যাকিনকড হওয়ার দরকার নেই। আধাঘণ্টা আগে হলে ঢুকতে পারলেই হলো।
সবার জন্য শুভ কামনা রইলো। গন্তব্যের পথে এগিয়ে যাও আরেক ধাপ। প্রাচ্যের অক্সফোর্ডে তোমাকে স্বাগতম। দেখা হবে প্রিয় ক্যাম্পাসে।
লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়