০২ মে ২০২৩, ২০:০১

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে বিবেচনায় রাখবেন যেসব বিষয়

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা  © ফাইল ছবি

উচ্চ মাধ্যমিক শেষে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরই স্বপ্ন থাকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু দেশে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর তুলনায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা কম। একারণে মেধার প্রতিযোগীতার মাধ্যমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্ন পূরণ করতে হয় শিক্ষার্থীদের। 

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দেশে মোট পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৫১ টি। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েরই রয়েছে নিজস্ব কিছু বিশেষত্ব। তাই শিক্ষার্থীরা প্রায়ই সংশয়ে ভোগেন উচ্চ শিক্ষার জন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নিবেন। এক্ষেত্রে কিছু দিক বিবেচনা করে শিক্ষার্থীরা সহজেই বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করতে পারেন।

সাবজেক্ট: একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা প্রায়ই সংশয়ে ভোগেন সাবজেক্ট নাকি বিশ্ববিদ্যালয় কোনটি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। সাধারণত অপেক্ষাকৃত পুরানো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সুপরিচিত হয় এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকে। ফলে এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্নকারী শিক্ষার্থীদের কর্মক্ষেত্র খুঁজে পাওয়া অপেক্ষাকৃত সহজ হয়। অপরদিকে তুলনামূলক নতুন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপেক্ষাকৃত ভালো সাবজেক্টে স্নাতক সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীরা এইদিক থেকে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও সাবজেক্টের গুরুত্বের কারণে সহজেই সাফল্যের দেখা পান। তাই এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীর নিজের লক্ষ্য এবং সামর্থ্যের প্রতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। চাকরির বাজারে একটি সাবজেক্ট যতই চাহিদাপূর্ণ হোক না কেন শিক্ষার্থী যদি সে বিষয়ে পড়তে আগ্রহী না হন তবে ফলাফল খারাপ হওয়ার আশংকা থাকে।

র‌্যাংকিং: বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য কোনো দেশীয় র‌্যাংকিং না থাকলেও আন্তর্জাতিক বেশ কিছু র‌্যাংকিং থেকে সহজেই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান নির্ণয় করা যায়। যেসব র‌্যাংকিংয়ে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান সম্পর্কে জানা যায় তাদের মধ্যে অন্যতম ওয়েবমেট্রিক্স র‌্যাংকিং। বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাংকিং তৈরিতে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষণ পদ্ধতি, বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রভাব, নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ, অর্থনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা, সাম্প্রদায়িক সন্নিবেশ অর্থাৎ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত ভূমিকা বিবেচনা করে ওয়েবমেট্রিক্স। ওয়েবমেট্রিক্স র‍্যাংকিং-২০২৩ অনুযায়ী দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম অবস্থানে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

শিক্ষক সংখ্যা: আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর আদর্শ অনুপাত ১:২০। কিন্তু বর্তমানে দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:২০ এর উপরে। এমনকি কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:৫০। এছাড়া অধিকাংশ নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপকসহ সিনিয়র শিক্ষকের সংকট। ফলে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সেশনজট, গবেষণায় সুপারভাইজার সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যার মুখামুখি হতে হয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে শিক্ষক সংখ্যা এবং অধ্যাপক সংখ্যায় গুরুত্ব প্রদান করা উচিত। 

গবেষণা ও শিক্ষার মান: সাধারণত যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে যত বেশি গবেষণার সুযোগ থাকে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান তত ভালো হয়। তাই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও শিক্ষার মান বিবেচনা করা উচিত।

ল্যাব এবং অবকাঠামোগত সুবিধা: ইঞ্জিনিয়ারিং, বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, ফার্মেসি এবং কৃষি অনুষদভূক্ত বিভাগসমূহে ল্যাব অপরিহার্য। একারণে এসব বিভাগে পড়তে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব সুবিধা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত। এছাড়া একজন শিক্ষার্থীর পূর্ণাঙ্গ বিকাশে মানসম্মত ক্লাসরুম, সেমিনার কক্ষ, লাইব্রেরি, খেলার মাঠ ইত্যাদি অবকাঠামোও গুরুত্বপূর্ণ। তাই বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত সুবিধাও বিশেষ বিবেচ্য।

ব্যয়: প্রতিবছরই বেশ কিছু শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয় বহন না করতে পেরে ঝরে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পূর্বে একারণে ব্যয়ের বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত। বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে সাধারণত শিক্ষাব্যয় পৃথক হয়ে থাকে। বর্তমানে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় প্রকৌশল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষাব্যয় অপেক্ষাকৃত বেশি।

আবাসন ব্যবস্থা: একজন শিক্ষার্থীর নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে সবচেয়ে বেশি সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় আবাসন নিয়ে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পূর্বে আবাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে জেনে নেয়া উচিত। দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে।