২৫ এপ্রিল ২০২৩, ২০:৪৫

রাবির ‘সি’ ইউনিট: শেষ এক মাসের প্রস্তুতি যেভাবে নেওয়া উচিত

  © টিডিসি ফটো

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা হচ্ছে একটি বিশাল এক চ্যালেঞ্জের নাম। যা দিন দিন কঠিন হতে হতে ভর্তি যুদ্ধে রূপান্তরিত হয়েছে। যেখানে ১টি আসনের জন্য লড়াই করে থাকে গড়ে ৫০-৬০ জন বা তারও বেশি। আর সেটি যদি হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সি’ ইউনিট তাহলে যুদ্ধটা অবশ্যই একটু বেশি চ্যালেঞ্জিং। যেখানে মাত্র ১ হাজার ৫০০ আসনের জন্য লড়াই করে ৭২ হাজার শিক্ষার্থী। 

এখানে একটি আসন নিশ্চিত করার জন্য দরকার একটু কৌশলগত পরিশ্রম। অনেকে এতদিন ভালো প্রস্তুতি নিয়ে এই শেষ মূহুর্তে এসে কিছু ভুলের কারনে চান্স হাতছাড়া করে ফেলে। তাই রাবির ‘সি’ ইউনিটের জন্য শেষ ১ মাসের প্রস্তুতি কেমন হওয়া উচিত, কোন বিষয় কিভাবে পড়া উচিত সেটা নিয়েই আজকে আমার লেখা। এখানে আমি প্রতিটি বিষয়ে আলাদা আলাদা আলোচনা করবো।

পদার্থ বিজ্ঞান: পদার্থ বিজ্ঞানের সকল সূত্র ভালোভাবে দেখে রাখতে হবে। যেই সূত্রগুলো দিয়ে প্রতিবার ম্যাথ আসে সেই সূত্রগুলো ও শর্টকাট ট্যাকনিক ব্যবহার করে বেশি বেশি ম্যাথ প্র্যাকটিস করতে হবে। সেই সাথে মূলবই এর অধ্যায়ের শেষে যেই প্রশ্নগুলো দেওয়া থাকে সেগুলো ভালোভাবে সমাধান করে ফেলতে হবে। বড়, কঠিন ও ক্যালকুলেটর ছাড়া সমাধান করা যায়না বই এর এমন ম্যাথ স্কিপ করতে হবে। যেই টপিকগুলো মনে রাখা কঠিন হচ্ছে সেগুলো বারবার রিভিশন দিতে হবে। আর মার্ক করে রাখতে হবে। পরীক্ষার ৩ দিন আগে থেকে শুধু সেগুলোই আবার রিভিশন দিতে হবে। 

রসায়ন: রসায়নে ভালো করতে অবশ্যই মূল বই এর সকল টপিক এর কনসেপ্ট ক্লিয়ার থাকা লাগবে। রসায়নে থিওরি প্রশ্ন বেশি আসে। বিগত বছরের প্রশ্নগুলো দেখলেই একটা আইডিয়া পাওয়া যাবে যে কি টাইপ থিওরি প্রশ্ন আসে বা কোন কোন টাইপ থেকে প্রশ্ন বেশি আসে। এই শেষ ১ মাস সেই টাইপগুলো ভালোভাবে আয়ত্তে আনতে হবে। আর এর জন্য প্রচুর পরিমাণে প্র্যাক্টিস করতে হবে। জৈব রসায়ন থেকে রাবিতে অনেক প্রশ্ন আসে। অনেকে সেটাকে স্কিপ করতে চায়। কিন্তু এটা চান্স পাওয়ার রাস্তায় বা ভালো পজিশন করার রাস্তায় বাধা সৃষ্টি করে। তাই জৈব রসায়ন এর কিছু সিলেক্টেড টপিক যেগুলো থেকে রাবি সহ সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশ্ন এসে থাকে সেগুলো মার্ক করে পড়ে ফেলতে হবে। যেই টপিকগুলো মনে রাখা কঠিন হচ্ছে সেগুলো বারবার রিভিশন দিতে হবে। আর মার্ক করে রাখতে হবে। পরীক্ষার ৩ দিন আগে থেকে শুধু সেগুলোই আবার রিভিশন দিতে হবে। আর যেটা আগেও বলেছি মূল বই এর অধ্যায় এর শেষে দেওয়া প্রশ্নগুলো অবশ্যই ভালো করে সমাধান করতে হবে। রসায়ন অংশে  কিছু ম্যাথ আসে। ম্যাথগুলো তেমন কঠিন কিংবা ঘুরিয়ে পেচিয়ে আসেনা। যদি বিগত বছরের প্রশ্নগুলো সমাধান করলে ইনশাআল্লাহ পরীক্ষার হলে সবগুলো ম্যাথই উত্তর করা সম্ভব। 

আইসিটি: আইসিটির জন্য যা করতে হবে সেটি হলো বিগত বছরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা প্রশ্ন ও মূল বই এর অধ্যায় এর শেষে যেই প্রশ্নগুলো থাকে সেগুলো সমাধান করলেই হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।  

উচ্চতর গণিত: গণিতে ভালো করার জন্য অবশ্যই প্রশ্নব্যাংক সমাধান বেশ ভালোভাবে করতে হবে। কেননা গণিত অংশে প্রচুর টাইপ রিপিট হয়। সেই সাথে বিভিন্ন শর্টকাট টেকনিকগুলো ভালোভাবে চর্চায় রাখতে হবে। মূল বই এর অধ্যায় এর শেষের প্রশ্নগুলো সমাধান করে ফেলতে হবে। ইনশাআল্লাহ গণিতে বেশ ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব।

জীববিজ্ঞান: জীববিজ্ঞান অংশে ভালো করার জন্য মূলবই এর বিকল্প নেই। মূল বই এর দাগানো লাইনগুলো এই শেষ ১ মাসে ভালো করে রিভিশন দেওয়া জরুরি। বিভিন্ন ছক,বৈশিষ্ট্য,পার্থক্য,বৈজ্ঞানিক নাম,উদাহরণ এগুলো জোর দিয়ে পড়বে।এরপর মেডিকেল+বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা বিগত বছরের প্রশ্নগুলো সমাধান করে ফেলতে হবে।যেই টপিকগুলো মনে রাখা কঠিন হচ্ছে সেগুলো বারবার রিভিশন দিতে হবে। আর মার্ক করে রাখতে হবে। পরীক্ষার ৩ দিন আগে থেকে শুধু সেগুলোই আবার রিভিশন দিতে হবে। এত ঘুরিয়ে পেচিয়ে আসবেনা। মোটামুটি ভালো করে পড়া থাকলে জীববিজ্ঞানে ভালো নম্বর তোলা সম্ভব। 

আর এই শেষ সময়ে যেটি সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সেটি হচ্ছে বেশি বেশি পরীক্ষা দেওয়া।  পরীক্ষার হলে টাইম ম্যানেজমেন্ট এ গলদ, ভুল দাগানোর প্রবণতা এসব সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে অবশ্যই বেশি বেশি পরীক্ষা দিতে হবে। অনলাইন এর থেকে অফলাইনে পরীক্ষা দিতে পারলে সেটি আরো বেশি ভালো হবে।

সকল বিষয়ের প্রশ্নব্যাংক অবশ্যই ভালো করে এনালাইসিস করতে হবে। প্রশ্নব্যাংক সমাধান না করে পরীক্ষার হলে যাওয়া আর সাতার না জেনে নদীতে ঝাপ দেওয়া একই কথা।

এই শেষ মূহুর্তে পড়ালেখায় মনোযোগ দিতে হবে বেশি। বাইরের সকল কাজ থেকে দূরে থাকাই ভালো। আর মহান সৃষ্টিকর্তাকে বেশি বেশি স্মরণ করতে হবে। তিনি অবশ্যই সবার পরিশ্রম এর যোগ্য পুরস্কার দিবেন ইনশাআল্লাহ। সকলের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়