১৯ এপ্রিল ২০২৩, ২০:১১

ঢাবির ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার্থীদের জন্য কিছু পরামর্শ

  © ফাইল ছবি

ছোট ভাই ও বোনেরা শুভেচ্ছা ভালোবাসা নিও। আশা করি সবার প্রস্তুতি এতদিনে সম্পন্ন হয়ে গেছে। হয়তো অনেকে রিভাইজ শুরু করেছো প্রশ্নব্যাংক গুলো। এ নিয়ে কিছু বলার আগে আমি পরীক্ষার হলের কিছু দিক নির্দেশনা দিতে চাই। 

আপনারা ইতোমধ্যে জেনে গেছেন, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়ে গেছে। ‘ক’ ইউনিটের যারা পরীক্ষা দেবেন তোমরা অবগত আছ যে, আগামী ১২মে পরীক্ষা প্রত্যেকের বিভাগীয় শহরে অনুষ্ঠিত হবে। মোট ১২০ নাম্বারের পরীক্ষা। এমসিকিউ অংশে থাকবে ৬০ নাম্বার (৬০টা এমসিকিউ) সময় মাত্র ৪৫ মিনিট। অন্যদিকে লিখিত ৪০ নম্বরের জন্য পাবে ৪৫ মিনিট।

প্রথম পরীক্ষার হলে প্রশ্ন দেখে অনেকে আমরা ঘাবড়ে যাই। ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। এটা স্বাভাবিক বিষয় আমাদের সবার জন্যই একই এবং অনেক ভয়ের একটা জায়গা। যেহেতু এটা একটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা তাই এমন টা হয়। মনে হয় আমি কিছুই পারবো না এই রকম। তবে পরীক্ষার ৫-১০ মিনিটের মধ্যেই সব ঠিক হয়ে যায়। তবে এই ৫-১০ মিনিটের ভূলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। এই পরীক্ষার আগের কিছু সময় ও প্রথম ১০ মিনিট কেউ নিজেকে শান্ত রাখতে পারলে সে ভয় কাটিয়ে কঠিন পরীক্ষাও সহজেই কাটিয়ে উঠতে পারে। 

আমার নিজের একটা গল্প বলি, আমার সিট পড়েছিল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনিমেল হাজবেন্ডারী বিল্ডিং এর একটি কক্ষে। এই কক্ষে আমার কলেজ পরিচিত অনেক ফ্রেন্ডদেও সিট পরেছিল। পরীক্ষা শুরুর ১৫ মিনিট পরে আমার একজন ফ্রেন্ড এর একটা ভূল ধরা পরে যে সে ফিজিক্স MCQ এর জায়গায় গণিত অংশ দাগিয়ে ফেলেছে। আমার সাথেই তার সিট ছিল। তার টার্গেট ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু কি হলো? এই যে ভুল সে করে বসলো এই ১৫ মিনিট কিন্তু অনেক সময়। চাইলেও বাকি ৩০ মিনিটে ৬০ টা এম সি কিউ দাগিয়ে ভালো করা সম্ভব নয়। 

তাই আমি এই বিষয়টার প্রতি জোর দিতে চাই যে পরীক্ষা হলে দেখে দেখে এমসিকিউ বৃত্ত ভরাট করা যে কোন অংশে আমি কি উত্তর দাগাচ্ছি। এটাই সবচেয়ে  গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। 

আরেকটা জিনিস হলো পরীক্ষা হলে আমি প্রথমে কোন অংশটা দাগাবো?  আমি আমার কথাই বলি। আমি ইঞ্জিনিয়ারিং প্রিপারেশন নিচ্ছিলাম, সেই সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর জন্য ভার্সিটি প্রশ্নব্যাংক সহ ভালো ভালো কিছু বইও করেছিলাম। তো আমার সবচেয়ে ভালো প্রিপারেশন ছিল গণিত আর ফিজিক্স অংশে। এক্সাম হলে যেয়ে প্রথমেই এই অংশ দুটো দেখা শুরু করে দিয়েছিলাম। আর এই দুঅংশ আমার জন্য অনেক ইজিই ছিল বটে।  তারপর শুরু করলাম গণিত অংশ। পর্যায়ক্রমে ফিজিক্স, কেমেস্ট্রি আর বায়োলজি দাগিয়ে (মোটামুটি যা পারি তার মধ্যে)  সময়েও প্রায় শেষ এমন পর্যায়ে এসে এমসিকিউ অংশের সমাপ্তি করেছিলাম।

তারপর আসলো রিটেন অংশ। রিটেন আর এমসিকিউ অংশ এক সাথে দেয়ার ধরুন আমার প্রথমেই গণিত আর ফিজিক্স এ একটু কনফিডেন্স চলে আসছিল। শুরু করে দিলাম গণিত অংশ। একিটা প্রশ্ন উত্তর করতে আমার টাইম  লেগে যাচ্ছিল। এটা স্কিপ করে পরের ফিজিক্স অংশে গেলাম। একই ঘটলো ফিজিক্স-এ, একটা প্রশ্নে আটকে গেলাম। তারপর হঠাৎ করে শুনতে পেলাম সময় আছে মাত্র ৭ মিনিট। তখনও আমার কেমেস্ট্রি আর বায়োলজি অংশ বাকি। তাড়াহুড়ো করে  কেমেস্ট্রি আর বায়োলজি দাগিয়ে আমি মাত্র ৬ নাম্বার উত্তর করতে পেরেছিলাম। এখানে আমার টাইম মেনেজমেন্ট এ একটু ভুল হয়ে গিয়েছিল। 

আমি তোমাদেরকে এই পরামর্শ দিবো যে কোনো একটা স্পেসিফিক প্রশ্ন নিয়ে টাইম নষ্ট করা যাবে না।  পরে এটা নিয়ে অনেক আফসোস করতে হবে। যেটা পারো না সেই প্রশ্ন নিয়ে আর ভাবাই যাবে না। একটা প্রশ্নের জন্য বেশি সময় চলে গেছে নিচের দিকে থাকা সহজ প্রশ্নগুলো দাগানোর সময়ই পাবে না। আরেকটা পরামর্শ থাকবে এই যে তোমার পরীক্ষা হলে প্রশ্ন দেখে যে সাব্জেক্ট এর প্রশ্ন মনে হয় খুব ভালো ভাবে পারবে সেটাই আগে আন্সার করতে। যদি তুমি বায়োলজি ভালো পারো তাহলে সেটা দিয়েই শুরু করো, যদি মনে হয় আমি ফিজিক্সে ভালো তাহলে ফিজিক্স দিয়ে শুরু করো। তাইলে দেখবে নিজের মাঝে কনফিডেন্স বুস্ট আপ হবে।

আর এই শেষের এক মাস আমার মনে হয় অনেক প্রশ্ন ব্যাংক সলভ করা উচিত তাহলে একটা আইডিয়া পাওয়া যাবে খুব ভালো। দেখা যাবে এই প্রশ্ন ব্যাংক এর অনুরুপ অনেক প্রশ্ন পরীক্ষায় কমন পেয়ে যেতে পারো। তাছাড়া অনেক বেশি প্রেক্টিস করতে থাকো। প্রেক্টিসগুলা পরীক্ষার হলের এমসিকিউ দাগানোকে সহজ করে দিবে। পরীক্ষা দাও প্রচুর। তাহলে সময় মেইনটেইন করার দক্ষতা বাড়বে। মডেল টেস্ট দাও বেশি বেশি। বাজারের মডেল টেস্টগুলো কিনে সলভ করার পাশাপাশি কোচিং-এর পূর্বের মডেল টেস্টগুলো পুনরায় সমাধান করো। তখন নিজেও বুঝতে পারবে তোমার দূর্বলতা কোন অংশে। সে অনুযায়ী বিস্তারিত পড়বে। ক্যালকুলেটর যেহেতু নাই, হাতে-কলমে হিসাব করার জন্যে প্রচুর প্রাকটিস করতে হবে। তাহলে খুব সহজেই হাতে-কলমেই করতে পারবে বলে আশা করি। সবশেষে সবার জন্য দোয়া ও শুভকামনা রইলো। দেখা হবে প্রাণের ক্যাম্পাসে, প্রাচ্যের অক্সফোর্ডে।

 লেখক: শিক্ষার্থী, গণিত বিভাগ ২০-২১ সেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়