১৬ মার্চ ২০২৩, ১১:২২

সন্তান পড়াশোনায় অমনোযোগী? মনোযোগ বাড়াতে যা করবেন

মনোযোগ বাড়াতে যা করবেন  © প্রতীকী ছবি

সব সন্তানদের মা-বাবাই চায় তাদের সন্তান বড়মনের মানুষ হোক। পাশাপাশি তারা যেন ভালো করে পড়াশোনায় মনোযোগী হয়ে ওঠে, তার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকেন সকল বাবা-মা। কিন্তু বর্তমান যুগে বইয়ের চেয়ে বাচ্চারা মোবাইল ল্যাপটপ অথবা ইনডোর গেমসে বেশি আগ্রহী। অনেকে শিশুই পড়াশোনায় অমনোযোগী। তাদের নিয়ে বাবা-মায়েরা প্রায়ই দুশ্চিন্তায় ভোগেন।

বেশিরভাগ শিশুই একটানা ঘন্টার পর ঘন্টা পড়তে তাদের ইচ্ছা করে না। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুর বয়স কত, তার উপরে নির্ভর করবে তার মনোযোগ। ৪-৫ বছরের শিশুর ও ৮-১০ বছরের শিশুর মনোযোগ এক হবে না। মনোযোগ বাড়াতে হবে অভ্যাসের মাধ্যমে। তাদের মতে, ছোট থেকে কিছু অভ্যাস তৈরি করে দিলে অমনোযোগিতা অনেকটাই কমানো যায়।

শিশুদের পড়ালেখার প্রতি মনোযোগের সমস্যা কাটাতে এবং পড়াশোনায় মনোযোগী করে তুলতে জেনে নিন কয়েকটি বিষয়-

নির্ধারিত রুটিন: পড়াশোনা করার জন্য এটি সহজ রুটিন তৈরি করে দিন তাদের। রুটিন থাকার কারণে অতিরিক্ত সময় ধরে পড়াশোনা করার চিন্তা থাকবে না তাদের মাথায়। ঘন্টার পর ঘন্টা না পড়াশোনা করে মাঝে যদি কিছুক্ষণ ব্রেক নেওয়া যায়, তাহলে পড়াশোনার ব্যাপার নিয়ে একঘেয়েমি কাজ করবে না।

আরও পড়ুন: রাবির ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেসে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ প্রকাশ।

আরামদায়ক পরিবেশ: পড়াশোনা করার জন্য একটি শান্ত অথবা আরামদায়ক জায়গার ব্যবস্থা করে দিন। এমন একটি জায়গায় তার পড়াশোনার ব্যবস্থা করুন যেখানে বারবার বাইরের লোক যাওয়া আসা করবে না এবং কোন মোবইল বা অন্যান্য ডিভাইস থাকবে না। এছাড়া হাতের কাছে পেন্সিল, রাবার, স্কেল, কল ইত্যাদি নিয়ে বসতে হবে যার জন্য বারবার তাকে উঠতে হবে না। যদি খিদে পায় তাহলে হাতের কাছে বিস্কুট চানাচুর টেবিলে রেখে দেওয়া যায়।

নিয়মিত খেলাধুলা: প্রতিদিন অন্তত এক ঘণ্টা ছোটাছুটি করে খেলার জন্য বরাদ্দ করতে হবে। এতে ঘাম ঝরবে। ফলে শরীরে এনডরফিন বেশি পরিমাণে নি:সৃত হতে থাকে। এর পরেই বাচ্চাকে পড়াতে বসালে প্রথম ঘণ্টাখানেকের পড়ায় তার পুরো মনোযোগ থাকবে।

যে বিষয়ে আগ্রহ সেটা করতে দিন: ছোট থেকে শিশুকে মিউজ়িক ইনস্ট্রুমেন্টে তালিম দিতে পারেন অথবা যেসব ক্রিয়েটিভ বিষয়ে তার আগ্রহ বেশি সেটিতে তাকে ব্যস্ত রাখুন।

গল্প বলা : ঘুমানোর আগে কিছুটা সময় শিশুকে গল্প বলুন। অভিনয় করে গল্প বললে তারা আগ্রহী হবে। গল্পের মাঝেই শিশুকে প্রশ্ন করার সুযোগ দিতে হবে। এতে তার ধৈর্য ধরে শোনার প্রবণতাও তৈরি হয়। মনোযোগ বাড়াতে গল্প শোনানোর ভূমিকা বিরাট। সে গল্প শুনছে কি না, তা বুঝতে আপনিও পরে গল্পের মধ্য থেকে প্রশ্ন করে যাচাই করে নিতে পারেন।

ছোট ছোট নির্দেশ : লেখার সময়ে শিশুকে ছোট ছোট নির্দেশ দিন। প্রথমে তিনটে দিয়ে শুরু করুন— যেমন ছবি আঁকার ক্ষেত্রে ‘পয়েন্টগুলোকে জুড়ে দাও, রং দিয়ে আউটলাইন টানো, ভিতরটা রং করো।’ আস্তে আস্তে নির্দেশের সংখ্যা বাড়াতে থাকুন।  বাড়িতে নির্দেশ মতো ঠিকঠাক কাজ করার অভ্যাস গড়ে তুললে স্কুলেও শিক্ষকদের নির্দেশ মানার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে না।

খেলার ছলে শেখানো: সব সময় পড়তে বসিয়ে বা আঁকতে বসিয়ে মনোযোগ বাড়ানো যায় না। সে ক্ষেত্রে ছোট ছোট খেলা খেলতে পারেন। খেলার ছলে শিশুকে গণনা বা ফুল, ফল-প্রাণীর নাম শেখাতে পারেন। 

কৌশল অবলম্বন: এমন কিছু সহজ পন্থা তাকে বলে দিন যার সাহায্যে সে পড়াশোনা খুব তাড়াতাড়ি মুখস্থ করতে পারে। যেমন যদি ছোট বাচ্চা হয়, তাহলে ছবি এঁকে তাকে পড়াশোনা করানোর চেষ্টা করুন। বাচ্চা যদি বড় হয়, তাহলে বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে নোট করে রাখার চেষ্টা করুন।

প্রশংসা করুন: সবসময় প্রশংসা অথবা পুরস্কারের ব্যবস্থা রাখুন। পরীক্ষা নিয়ে যদি ভালো নম্বর পায়, তাহলে তাকে যে কোনোভাবে পুরস্কৃত করুন, তাকে উৎসাহী করুন। কোন খেলনা অথবা খাবার জিনিস পেলে বাচ্চারা পড়াশুনার প্রতি আরও আগ্রহী হয়ে উঠবে।

পড়াশুনায় ভিন্নতা আনুন: পড়ানোর সময় একই পড়া বারবার না পড়িয়ে ভাগ ভাগ করে চ্যাপ্টার পরানোর চেষ্টা করুন। এপারে বাচ্চার নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বাড়ে এবং পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়।