মাথা ব্যথার যত কারণ, জেনে নিন করণীয়
মাথা ব্যাথা প্রায় সকলেরই হয়। প্রতি একশ’ জন মানুষের মধ্যে গড়ে ৭৮ জন এ মাথাব্যথায় ভোগেন জীবনের কোন না কোন সময়। এই ব্যাথা ভয়ানক এক সমস্যা। যখন মাথা ব্যথা হয় তখন কোন কিছুই ভালো লাগে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাথা ব্যথার পিছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। আবার অনেক সময় মাথা ব্যথা নিজেও একটি রোগ হতে পারে। তাই প্রতিটি মানুষকে এই বিষয়টি নিয়ে হতে হবে সচেতন।
অনেক সময় দুঃশ্চিন্তা থেকে মাথ্যাব্যাথা হয়। আবার অনেক সময় গোটা মাথাতেই ব্যাথা হয়। এবার মাথার কোথায় ব্যথা হচ্ছে, এই বিষয়টি থেকেও অনেক বিষয় পরিষ্কার হয়।
যে ধরনের মাথা ব্যথার রোগী সচরাচর বেশি দেখা যায় সেগুলো হলো-
মাইগ্রেন
পুরুষের চেয়ে নারীরা মাইগ্রেনে বেশি ভোগেন। সাধারণত ১৫-৪০ বছরে এটি বেশি দেখা যায়। এই ব্যথা মাথার একটি নির্দিষ্ট অংশে হতে পারে। আবার সেই ব্যথা মাথা ছাড়িয়ে চোখেও চলে আসতে পারে। এই ব্যথার প্রতিঘাত মানুষ ভেদে আলাদা হয়। এবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাইগ্রেনের ব্যথার পিছনে কিছু ট্রিগার ফ্যাকটর থাকতে পারে। এক্ষেত্রে আলো, শব্দ, গন্ধ সহ বিভিন্ন কারণে মাথায় এমন ব্যথা হয়। তাই সতর্ক থাকতে হবে। মাইগ্রেনে মাথা ব্যথার লক্ষণগুলো হলো—
* মাথার যেকোনো একপাশে ব্যথা হয়। একবার একপাশে ব্যথা হলে পরেরবার অন্য পাশেও হতে পারে।
* চার ঘণ্টা থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যথা স্থায়ী হতে পারে
* মাথার দুই পাশের রক্তনালি বা রগ টন টন করছে বলে মনে হয়
* আলো বা শব্দে ব্যথার তীব্রতা বেড়ে যায়
* ব্যথা শুরুর আগে চোখের সামনে আলোর নাচানাচি, আঁকাবাঁকা লাইন ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে
* অন্ধকারে শুয়ে থাকলে ব্যথার তীব্রতা কমে
কোন বেলার খাবার না খাওয়া
খাওয়া-দাওয়া অনিয়ম করলে বা এক বেলা খাবার না খেলে মাথাব্যথা করতে পারে। আমরা যা খাই, সে খাবার থেকে শরীর এক প্রকার চিনি তৈরী করে। যেটা ব্রেনের খাদ্য। আপনি না খেলে রক্তের সাথে এই চিনির পরিমাণ কমে যায়। আর সেই কারণে মাথাব্যথা দেখা দিতে পারে। যে চিনির কথা বললাম সেটা আর চা বানানোর চিনি কিন্তু এক না। কোন বেলার খাবার বাদ দেওয়া যাবে না। মাথাব্যথা হলেও সময়মতো খাবার খেয়ে নিতে হবে
টেনশন টাইপ হেডেক
মাথার পিছনের দিকে হয় টেনশন হেডেক। মাথার মাংসপেশির সংকোচনের কারণে এ মাথা ব্যথা হয়। এক্ষেত্রে ঘাড়ের সামান্য উপরে ব্যথা হয়। এ ধরনের মাথা ব্যথার উপসর্গগুলো হলো—
* মাথাজুড়ে ব্যথা হয়
* মাথা চেপে ধরে আছে এমন অনুভূতি হয়
* মাইগ্রেনের মতো ততটা তীব্র ব্যথা হয় না
* এ ধরনের মাথা ব্যথা কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে
* দুশ্চিন্তা, পারিবারিক বা পেশাগত কিংবা মানসিক চাপের সঙ্গে এই ব্যথার সম্পর্ক আছে।
ঘুম কম হলেও মাথা ব্যথা হতে পারে
অনেকের ঘুম কম হলে মস্তিষ্কে ব্যথা অনুভব করার ক্ষমতা বেড়ে যায়। অল্পতেই মাথাব্যথা অনুভব করে। তখন মাথাব্যথা দেখা দিতে পারে। আর ঘুম কম হলে মাথাব্যথা বারবার দেখা দিতে পারে। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে।
পানি কম খাওয়া
যতটুকু পানি খাচ্ছেন তার চেয়ে বেশি পরিমাণ পানি শরীর থেকে বের হয়ে গেলে মাথা ব্যথা হতে পারে। আমরা অনেকেই বুঝতে পরিনা কখন শরীরের পানি সল্পতা দেখা দিচ্ছে। শুধু বমি বা ডায়রিয়া নয়। অতিরিক্ত ঘামলে বা পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করলেও পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। দিনে অন্তত দুই লিটার পানি পান করতে হবে। মাথাব্যথা শুরু হলেও যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করার চেষ্টা করবেন।
মানসিক চাপ
এটা খুবই সাধারণ একটা কারণ। কোন কিছু নিয়ে মানসিক চাপে থাকলে মাথাব্যথা হতে পারে। তাই যা নিয়ে মানসিক চাপে আছেন তার সমাধান করে নিতে হবে।
মেনিনজাইটিস, এনকেফালাইটিস
এ রোগে সাধারণত জ্বর ও মাথা ব্যথা থাকে। রোগী অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে। প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি করতে হতে পারে। মাথা ব্যথা হতে পারে কোনো ব্রেইন টিউমার বা মারাত্মক কোনো রোগের লক্ষণ।
কখন সন্দেহ করবেন মারাত্মক কোনো রোগ আছে কি না?
* হঠাৎ করে ব্যথা শুরু হলে
* এর সঙ্গে কোনো পাশে দুর্বলতা বা কথা জড়িয়ে এলে
* ওজন কমে গেলে
* জ্বর থাকলে
* দুর্বলতা থাকলে
* এর সঙ্গে বমি হলে
* বয়স ৬০ বছরের বেশি হলে
চোখের জন্য মাথা ব্যথা
চোখের সমস্যা এখন ছোট বয়স থেকেই দেখা যায়। একদম খুদে বাচ্চার চোখেও এখন ঝোলে চশমা। এর থেকেই বোঝা যায়, ঠিক কতটা চোখের সমস্যা বাড়ছে। তবে চোখের সমস্যা হলে সেই উপসর্গ কেবল চোখেই আটকে থাকে না। চোখের পাশাপাশি মাথা ব্যথাও হতে পারে অন্যতম কারণ। এক্ষেত্রে মাথার সামনের দিকে, আরও নির্দিষ্ট করে বললে কপালে ব্যথা হয়। একটু রেস্ট নিলে বা ম্যাসাজ করলে এই ব্যথা কমে যায়
করণীয়
মাথা ব্যথা থেকে তাৎক্ষণিক পরিত্রাণ পেতে বিভিন্ন ব্যথানাশক ওষুধ যেমন—প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে। তবে খুব প্রয়োজন না হলে অতিরিক্ত ব্যথার ওষুধ না খাওয়াই ভালো। মাথা ব্যথা চলে গেলে এ ওষুধ খাবেন না। আপনার যদি অন্য কোন রোগ থাকে তাহলে চিকিৎসকের পমামর্শ অনুযায়ী ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করবেন।