বিসিএস যাদের টার্গেট, তাদের জন্যে লোকপ্রশাসন বেস্ট চয়েস
লোক প্রশাসন সাবজেক্টটি সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই তেমন একটা ধারণা নেই। আবার অনেকেই এই তুমুল সম্ভাবনাময়ী সাবজেক্টটি সম্পর্কে অনেক ভুল ধারণা নিয়ে বসে থাকি, সঠিক জিনিসগুলোই জানি না। না জানাটাই স্বাভাবিক।
যেহেতু এটি সবগুলো পাবলিক, প্রাইভেট বা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত কলেজগুলোতে পাঠদান করা হয় না; তাই শুধুমাত্র যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন হয় সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কিংবা অন্যান্য কর্মকর্তা এবং বিষয় সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞরা ছাড়া অন্যদের এই সাবজেক্ট সম্পর্কে ধারনা একদমই কম।
লোকপ্রশাসন সাবজেক্টটি সমাজবিজ্ঞান অনুষদভুক্ত অন্যতম উচ্চ পর্যায়ের সাবজেক্ট হিসেবে গন্য হয়ে থাকে। সরকারের পলিসি প্ল্যানিং থেকে পলিসি ফর্মুলেশন, সরকারি প্রশাসনের রক্ষণাবেক্ষন এবং ম্যানেজমেন্ট, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, আইন ইত্যাদি হচ্ছে লোক প্রশাসনের ফোকাস এরিয়া।
সহজ কথায় বলতে গেলে লোক প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে সরকার এবং সরকারের কার্যক্রমের এমন কোন বিশেষ জায়গা নেই যেটি লোক প্রশাসনের বাইরে। এর পরিধি অনেকটা বিস্তৃত।
চার বছরের অনার্স কোর্সে এই সাবজেক্টে এডমিনিস্ট্রেশনের যাবতীয় খুঁটিনাটি পড়ানো হয়।শাসক হতে হলে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সংবিধান, সমাজব্যবস্থা, আইন, দেশের সাথে অন্যান্য দেশের সম্পর্ক, দেশের প্রশাসনিক ইতিহাস সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকতে হয়।
এজন্যে পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশনের শিক্ষার্থীদের Political Science, Economics, Constitution, Sociology, Constitutional Law, International Relations-এই সাবজেক্টগুলাও পড়তে হয়। একইসাথে কমার্সের কিছু মৌলিক সাবজেক্ট যেমন Banking, Management, Accounting-এই সাবজেক্টগুলাও পড়তে হয়।
বিভিন্ন সাবজেক্টের সমষ্টি নিয়ে লোকপ্রশাসনের সিলেবাস হওয়ায় সিলেবাসটা মোটেও বোরিং বা একঘেয়ে না। এটি মূলত প্র্যাক্টিক্যাল একটা সাবজেক্ট। আর কোর্সভুক্ত টপিকগুলোও অনেক ইন্টারেস্টিং আর সময়োপযোগী।
আরও পড়ুন: ‘উন্নয়ন অধ্যয়ন’ আন্তর্জাতিক মানের বিষয়, বিদেশে ব্যাপক কদর-চাহিদা
কেন পড়বো লোকপ্রশাসন?
লোকপ্রশাসন যারা পড়ে তাদের বলা হয় 'Navigator Of The Nation'. ব্রিটিশ শাসন সেই কবেই লুপ্ত হয়ে গেছে, তবে পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের শাসন লুপ্ত হয় নাই।
এছাড়া আপনার যদি চ্যালেঞ্জ নিতে ভালো লাগে? দেশে ঘটে যাওয়া সমসাময়িক ব্যাপারগুলোতে দারুণ আগ্রহ? সিস্টেমের ভেতরে ঢুকে সিস্টেম পরিবর্তনে আগ্রহী? ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দেওয়ার স্বপ্ন আছে? সেক্ষেত্রে লোকপ্রশাসন বিভাগে এ আপনাকে স্বাগতম।
আরও পড়ুন: অর্থনীতি: পাস করা যেখানে কষ্টের, ফার্স্ট ক্লাস সেখানে বিলাসিতা
লোকপ্রশাসনে চাকরির ক্ষেত্র কেমন?
* প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই রয়েছে এডমিনিস্ট্রেশন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবজেক্টগুলোর মধ্যে একমাত্র পাব্লিক এডমিনিস্ট্রেশন সাবজেক্টের নামেই একটি মন্ত্রনালয় আছে এবং সেই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে (Ministry of Public Administration) পাব্লিক এডমিনিস্ট্রেশন পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে লোভনীয় পদে চাকরির সুযোগ।
* বিশেষ সুযোগ রয়েছে সরকারি কর্ম কমিশনে। বিসিএসে যতগুলো ক্যাডার রয়েছে এর মধ্যে প্রশাসন, পুলিশ, সিভিল সার্ভিস ক্যাডারে চাকরিতে অগ্রাধিকার পান এ বিভাগের শিক্ষার্থী।
* এছাড়া দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, প্রশাসন, প্রশিক্ষণ, গবেষণা ইত্যাদি বিভাগে তারা অগ্রাধিকার পেয়ে থাকেন।
* বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানী, মানবাধিকার সংস্থা, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন, ব্যাংক, বিমা, বিভিন্ন এনজিওতে এ বিভাগের ছেলেমেয়েরা ভালো বেতনে কাজ করছেন।
* অনেকে আবার কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা পেশায় চাকরি করছেন। দেশের বাইরে যেমন যুক্তরাজ্য, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে এ বিভাগের ডিগ্রিধারীরা এখন ভালো বেতনে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন।
এত যে হোমরা-চোমরা সচিব আর প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি আছে সবার কিন্তু চাকরিতে যুক্ত হওয়ার আগে লোক প্রশাসনের উপর কোর্স করতে হয়েছে। তাছাড়া বিসিএস প্রশাসন পাওয়া কেন্ডিডেটরা সরকারিভাবে স্কলারশিপ নিয়ে বাইরে এ লোক প্রশাসনের উপরই পড়তে যায়।
প্রতিটা সেক্টরই মোটামোটিভাবে এই সাব্জেক্টের জন্য উন্মুক্ত। হাসপাতালে জব করবেন? সেখানেও আছে প্রশাসনিক কর্মকর্তা নামে সুন্দর একখান পদ।
* প্রাইভেট ব্যাংকগুলাতে HR বা Human Resource Department নামে একটি শাখা আছে, ওই শাখাতে পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশনের শিক্ষার্থীদেরই রাজত্ব।
* সরকারি বিভিন্ন সংস্থা আর ব্যাংকে চাকরি তো সাথে আছেই।
* চার বছরের একাডেমিক পড়াশোনায় লোকপ্রশাসনের শিক্ষার্থীদের বিসিএসের প্রিপারেশান অনেকটাই হয়ে যায়। কারণ সাবজেক্টটার বেশীরভাগ টপিকই বিসিএসের সিলেবাস রিলেটেড। কাজেই যাদের বিসিএস টার্গেট, লোকপ্রশাসন তাদের জন্যে বেস্ট চয়েস।
পড়াশোনার পাশাপাশি এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড, বিতর্ক, ছাত্র রাজনীতি, সামাজ সেবামূলক কর্মকাণ্ড, ক্যাম্পাস সাংবাদিকতাসহ শিক্ষা সহায়ক সকল কর্মকান্ডে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে এসেছে।
লেখক: শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ, বশেমুরবিপ্রবি