২০ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:০২

বিজ্ঞানীদের ধারণার চেয়ে তিন গুণ দ্রুত গতিতে চলছে সৌরজগৎ: গবেষণা

প্রতীকী ছবি  © সংগৃহীত

মহাবিশ্বের মধ্যে আমাদের সৌরজগৎ বিজ্ঞানীদের ধারণার চেয়েও অনেক দ্রুত ছুটে চলছে—সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য। জার্মানির বিলেফেল্ড ইউনিভার্সিটির জ্যোতিঃপদার্থবিদ লুকাস বোহমের নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, সৌরজগতের গতিবেগ পূর্বের অনুমানের তুলনায় তিন গুণ বেশি। বিষয়টি মহাবিশ্বের কাজ করার ধারণায় নতুন প্রশ্ন তুলছে। গবেষণাটি প্রকাশ হয়েছে ‘ফিজিক্যাল রিভিউ লেটার্স’ জার্নালে।

দীর্ঘদিন ধরেই বিজ্ঞানীরা জানেন, সৌরজগৎ মহাকাশের মধ্যে দিয়ে চলমান। তবে এর সঠিক গতি পরিমাপ করা কঠিন। এ জন্য গবেষকরা শক্তিশালী রেডিও তরঙ্গ ছড়ানো দূরবর্তী রেডিও ছায়াপথ পর্যবেক্ষণ করেন। রেডিও তরঙ্গ মহাজাগতিক ধুলা ভেদ করে বেরিয়ে আসতে পারে, ফলে সাধারণ টেলিস্কোপে দেখা না গেলেও রেডিও টেলিস্কোপে এসব ছায়াপথ ধরা পড়ে।

গবেষকদের মতে, সৌরজগৎ একটি নির্দিষ্ট দিকে চললে সেই দিকটিতে তুলনামূলক বেশি রেডিও ছায়াপথ দেখা যায়—যেমন চলার সময় হালকা বাতাসের প্রতিকূলতা অনুভব হয়। এ প্রভাব বিশ্লেষণ করেই তারা সৌরজগতের গতিবেগ পরিমাপ করেছেন।

ইউরোপজুড়ে বিস্তৃত রেডিও টেলিস্কোপ নেটওয়ার্ক ‘লোফার’-এর ডেটা এবং আরও দুইটি জরিপের পর্যবেক্ষণ মিলিয়ে নতুন পরিসংখ্যান পদ্ধতির সাহায্যে গবেষকরা আরও নির্ভুল ফল পেয়েছেন।

ফলাফলে দেখা যায়, মহাকাশজুড়ে রেডিও ছায়াপথের অসম বণ্টন বা ‘ডাইপল’ বিজ্ঞানীদের পূর্ব ধারণার তুলনায় তিন দশমিক সাত গুণ বেশি শক্তিশালী। সহজভাবে বলতে গেলে, সৌরজগৎ আগের অনুমানের চেয়ে প্রায় তিন গুণ দ্রুত গতিতে চলছে।

গবেষণাটি ‘পাঁচ সিগমা’ মানদণ্ড অতিক্রম করেছে, যা বৈজ্ঞানিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল হিসেবে বিবেচিত হয়। গবেষক বোহম বলেন, “এই ফলাফল বিজ্ঞানীদের প্রত্যাশার সঙ্গে স্পষ্টভাবে সাংঘর্ষিক।”

গবেষকরা বলছেন, সৌরজগৎ এত দ্রুত চললে তা মহাবিশ্বের বৃহৎ কাঠামো সম্পর্কে বড় প্রশ্ন তোলে। সম্ভাবনা রয়েছে—মহাবিশ্ব বিজ্ঞানীদের ধারণার মতো সমানভাবে ছড়ানো নয়; অথবা এখনো মহাজাগতিক গতিবেগ সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়া অসম্পূর্ণ।

এ ধরনের অস্বাভাবিক ফল প্রথম নয়। এর আগেও কোয়াসার পর্যবেক্ষণে একই ধরনের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। দুই ধরনের ভিন্ন মহাজাগতিক বস্তু একই প্যাটার্ন দেখানোয় ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম বলেও গবেষকদের ধারণা।

বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, মহাবিশ্ব নিয়ে এখনও বড় অজানা রহস্য রয়ে গেছে। তবে পর্যবেক্ষণ প্রযুক্তি ও বিশ্লেষণ পদ্ধতি উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মহাবিশ্বে আমাদের অবস্থান সম্পর্কে নতুন তথ্য সামনে আসতে থাকবে। [সূত্র: বিলেফেল্ড ইউনিভার্সিটি]