শিশুদের পর্নোগ্রাফিক কনটেন্ট সুপারিশ করছে টিকটক!
জনপ্রিয় শর্ট ভিডিও প্ল্যাটফর্ম টিকটকের সার্চ অ্যালগরিদম নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, টিকটক তার সার্চ সাজেশন ফিচারের মাধ্যমে অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যবহারকারীদের পর্নোগ্রাফিক কনটেন্টের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যুক্তরাজ্যের অলাভজনক সংস্থা গ্লোবাল উইটনেসের এক অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
সংস্থাটি জানায়, তারা ১৩ বছর বয়সী ব্যবহারকারীর পরিচয়ে সাতটি নতুন টিকটক অ্যাকাউন্ট খুলে পরীক্ষা চালায়। এই ফোনগুলো সম্পূর্ণ ফ্যাক্টরি–রিসেট করা ছিল, যাতে কোনো আগের সার্চ হিস্টোরি না থাকে। তারপরেও সার্চ বারে নির্দিষ্ট শব্দ লিখতেই আসতে থাকে পর্নোগ্রাফিক কনটেন্টের সাজেশন।
প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয় এমন সময়ে, যখন যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিতে নতুন আইন কার্যকর হয়েছে। এর আগেও টিকটকের বিরুদ্ধে কিশোর–কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করার অভিযোগে একাধিক মামলা হয়েছিল।
এ বিষয়ে টিকটকের মুখপাত্র বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়টি জানার পরপরই আমরা তদন্ত শুরু করেছি। নীতিভঙ্গকারী কনটেন্ট সরিয়ে ফেলেছি এবং সার্চ সাজেশন ফিচারে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এনেছি।’ তিনি আরও জানান, কিশোর ব্যবহারকারীদের সুরক্ষার জন্য টিকটকে রয়েছে ‘৫০টিরও বেশি নিরাপত্তা ফিচার।’
তবে গ্লোবাল উইটনেসের দাবি, পরীক্ষামূলক অ্যাকাউন্টগুলো খোলার পর মাত্র কয়েকটি ক্লিকের মধ্যেই প্ল্যাটফর্মটি ওইসব অ্যাকাউন্টে পর্নোগ্রাফিক কনটেন্ট দেখাতে শুরু করে। তাদের মতে, ‘টিকটক শুধু নাবালকদের এমন কনটেন্ট দেখাচ্ছে না, বরং তার অ্যালগরিদম ব্যবহার করে ধীরে ধীরে তাদের সেই দিকেই ঠেলে দিচ্ছে।’
টিকটকের নিজস্ব কমিউনিটি গাইডলাইন অনুযায়ী, নগ্নতা, যৌন কর্মকাণ্ড বা যৌন সেবা সম্পর্কিত যেকোনো কনটেন্ট প্রকাশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবুও চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে প্ল্যাটফর্মটি যে কনটেন্ট নীতিভঙ্গের কারণে সরিয়েছে, তার প্রায় ৩০ শতাংশই ছিল ‘সংবেদনশীল বা প্রাপ্তবয়স্ক থিম’–সংক্রান্ত।
কোম্পানির তথ্য অনুযায়ী, প্রতি মাসে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৬ মিলিয়ন অপ্রাপ্তবয়স্ক অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলা হয়। এসব অ্যাকাউন্ট শনাক্তে ব্যবহার করা হয় বয়স নির্ধারণ প্রযুক্তি ও বিশেষ প্রশিক্ষিত মডারেশন টিম।
এদিকে যুক্তরাজ্যের অনলাইন সেফটি অ্যাক্ট ২০২৩ অনুযায়ী, শিশুদের ক্ষতিকর কনটেন্ট থেকে রক্ষা করতে এখন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর জন্য বয়স যাচাই ব্যবস্থা চালু করা বাধ্যতামূলক।
আইনজীবী মার্ক স্টিফেন্স বলেন, ‘গ্লোবাল উইটনেসের অনুসন্ধান স্পষ্টভাবে অনলাইন সেফটি অ্যাক্টের লঙ্ঘন।’
টিকটক জানায়, তারা যুক্তরাজ্যের নিয়ন্ত্রক সংস্থা অফকম–এর তত্ত্বাবধানে শিশু সুরক্ষায় কঠোরভাবে কাজ করছে এবং কিশোরদের জন্য ‘গাইডেড মেডিটেশন’ ও রাতের নোটিফিকেশন বন্ধ রাখার মতো ফিচার চালু করেছে।