জোরালো হচ্ছে পলিটেকনিক আন্দোলন, পাশে ছাত্র সংগঠনগুলো

৪ দাবিতে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
৪ দাবিতে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ  © ফাইল ফটো

বেশকিছু দিন ধরে ৪ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছে দেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। রাজধানী ঢাকাসহ প্রায় সব জেলা এবং প্রতিটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাসে এ বিক্ষোভ হয়েছে। এদিকে তাদের এ আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছে বেশ কয়েকটি ছাত্র সংগঠনও। তবে তাদের এ আন্দোলনকে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা বলে উল্লেখ করেছে কর্তৃপক্ষ।

সর্বশেষ গত রবিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ তাদেরকে উঠে যেতে বললে পুলিশের সঙ্গে তাদের বাক-বিতণ্ডা বেধে যায়। এসময় পুলিশ তাদের উপর লাঠিচার্জ করে এবং মুখপাত্র লিমনসহ আন্দোলনকারী ৫ শিক্ষার্থীকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাদের সবাইকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

পলিটেকনিক ও কারিগরি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাগ্রহণসহ চলমান একাডেমিক সংকট সমাধানের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন। সংগঠনটির সভাপতি গোলাম মোস্তফা ও সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন বলেন, পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের এই রকম দিশাহীন পরিস্থিতি চলতে পারে না। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন চরম অনিশ্চয়তার মুখে রেখে কোনভাবেই সামনে আগানো সম্ভব নয়।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ও ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর। তিনি বলেছেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ৪ দফা দাবি আমরা বিশ্লেষণ করেছি। তাদের সবগুলো দাবি অত্যান্ত প্রাসঙ্গিক। কর্তৃপক্ষ তাদের দাবির যৌক্তিকতা বিচার না করে উল্টো হয়রানিমূলক ট্যাগ দিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে ভিপি নুর ও তার সংগঠন সব সময় পাশে আছে।

পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হল- সেশনজট নিরসন করা; প্রথম, তৃতীয়, পঞ্চম ও সপ্তম পর্বের ক্লাস চালু করে শর্ট সিলেবাসে পরীক্ষা নেওয়া; অতিরিক্ত ফি প্রত্যাহার এবং প্রাইভেট পলিটেকনিকে সেমিস্টার ফি অর্ধেক করা এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের জন্য আসন বরাদ্দ করা।

তবে শিক্ষার্থীদের ৪ দফা দাবির ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে জানিয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, শিক্ষার্থীদের সব দাবির স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। এরপরেও যদি তারা তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখে তাহলে ধরে নেব শিক্ষার বাইরেও তাদের অন্যকোন উদ্দেশ্য রয়েছে। একটা অস্থিতিশীলতা, বিভ্রান্তি এগুলো সৃষ্টি করা তাদের একটা অপচেষ্টা রয়েছে।

কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, সম্প্রতি পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা নানান বিশৃঙ্খলা কার্যকলাপে লিপ্ত হয়েছে। এটা অযৌক্ত এবং সাধারণ জনগণকে তারা বিভ্রান্ত করছে। যা আমাদের কাছে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শিক্ষার্থীদের সব দাবির স্পষ্ট ব্যাখ্যা জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

শাহবাগ আন্দোলন থেকে এক আন্দোলনকারীকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ

কর্তৃপক্ষের এ ব্যাখ্যাকে মুখরোচক উল্লেখ করে তাদের চলমান আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির ছাত্র ফখরুল আমল চৌধুরী বলেন, তাদের এ ব্যাখ্যায় কোন সমাধানের কথা উল্লেখ নেই। আমরা তাদের কাছে আমাদের দাবির বিষয়ে লিখিত দেয়ার জন্যে বলেছি। তারা আমাদের কথায় কোন গুরুত্ব দিচ্ছে না।

এদিকে ৪ দফা দাবি আদায়ে আগামীকাল ১৪ ফেব্রুয়ারি (রবিবার) বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আন্দোলনরত পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। কুড়িগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের মুখপাত্র মেহেদী হাসান লিমন বলেন, ৪ দফা দাবি আদায়ের ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসাবে আগামীকাল রবিবার কারিগরি বোর্ড ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলমান থাকবে।


সর্বশেষ সংবাদ