স্থগিত ঘোষণার পরও আন্দোলনে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা

শাহবাগের কর্মসূচিতে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা
শাহবাগের কর্মসূচিতে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা  © সংগৃহীত

৪ দফা দাবি আদায়ের ঘোষণা দিয়ে সড়ক অবরোধসহ আন্দোলন কর্মসূচি থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ পলিটেকনিক ছাত্র পরিষদ। রবিবার (১৭ জানুয়ারি) রাতে সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেরাব হোসেন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় সংগঠনটি।

তবে সোমবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর শাহাবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে রাজধানীর বেশ কয়েকটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন করতে দেখা গেছে। তাছাড়া একই দাবিতে দুপুরে সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মহিপালে সড়ক অবরোধ করেছেন ফেনী সরকারি ও বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। 

পলিটেকনিক ছাত্র পরিষদের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের বর্তমান সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে আমরা সব ধরনের আন্দোলন থেকে সরে এসেছি। কোনও সাধারণ ছাত্রছাত্রী আন্দোলন করলে তার জন্য সংগঠন দায়ী থাকবে না। সংগঠনের সিদ্ধান্ত না মেনে কেউ যদি আন্দোলনে অংশ নেয় তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হবে। সবাইকে বোর্ডের সিদ্ধান্ত মেনে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।

এদিকে, চার দফা দাবিতে সোমবার (১৮ জানুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা যায় রাজধানীর কয়েকটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের। এ সময় সেখানে শিক্ষার্থীরা শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খানের উদ্দেশে বিভিন্ন স্লোগান দেন। তারা আমিনুল ইসলাম খানের পদত্যাগ দাবি করেন।

আন্দোলনকারীদের দাবিগুলো হলো—কোনোভাবেই একবছর লস মানি না। প্রথম, তৃতীয়, পঞ্চম, সপ্তম পর্বের ক্লাস চালু করে শর্ট সিলেবাস পরীক্ষা নিতে হবে। সব অতিরিক্ত ফি প্রত্যাহার করতে হবে। প্রাইভেট পলিটেকনিকে সেমিস্টার ফি অর্ধেক করতে হবে। ২০২১ সালের মধ্যে ডুয়েটসহ অন্যান্য সব প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।

এর আগে রবিবার (১৭ জানুয়ারি) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান তাদের এসব দাবির ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, এসব দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীদের রাজপথে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা মোটেও সমীচীন ও নৈতিক নয়। আমি বিশ্বাস করি তারা ঘরে ফিরে আসবে। তাদের পরীক্ষার সিডিউল হচ্ছে এবং যথা নিয়মে শর্ট সিলেবাসে পরীক্ষায় অংগ্রহণ করবে।

তিনি আরও বলেন, আশা করি তারা ফরে ফিরে আসবে। আর যদি তাদের অপতৎপরতা অব্যাহত রাখে তাহেল ধরে নেব শিক্ষার বাইরেও তাদের অন্যকোন উদ্দেশ্য রয়েছে। একটা অস্থিতিশীলতা, বিভ্রান্তি এগুলো সৃষ্টি করা তাদের একটা অপচেষ্টা রয়েছে।

সচিব বলেন, তাদের ৪ দফা দাবি নিয়ে বলতে গেলে— প্রথমত তারা বলছে, ১ বছরের সেশনজট নিরসন করতে হবে। সেক্ষেত্রে আমরা সিলেবাস রি-ডিজাইন করে ৬ মাসের সেমিস্টার ৪ মাস করেছি। সেটি ৬ সেমিস্টার করে ২ বছরে শেষ হবে। সেক্ষেত্রে ১ বছেরের সেশনজট আর থাকবে না।

দ্বিতীয়ত—  দ্বিতীয়, চতুর্থ ও ৬ষ্ঠ পর্বের তাত্ত্বীক পরীক্ষায় অটোপাস এবং প্রথম, তৃতীয়, পঞ্চম ও সপ্তম পর্বের ক্লাস চালু করে শর্ট সিলেবাসে পরীক্ষা নেওয়া। আমরা আগেই বলেছি এটার অটোপাস দেওয়া সম্ভব নয়। এতে আমরা পরীক্ষার রি-ডিজাইন করেছি।

তৃতীয়ত— অতিরিক্ত ফি প্রত্যাহার ও প্রাইভেট প্রাইভেট পলিটেকনিকের সেমিস্টার ফি প্রত্যাহার। আপনারা জানেন যে, এ নিয়ে আমরা বিজ্ঞপ্তি জারি করেছি— সরকারি পলিটেকনিকে টিউশন-পরীক্ষা ফি ছাড়া বাকিগুলো ওয়েব করেছি। আর প্রাইভেটগুলোকেও অনুরোধ করেছি তারাও এসব ফি যতটুকু পারে মওকুপ করতে। তবে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের ব্যয় একটু বেশি। তারপরও তারা সম্মত হয়েছে কোন ছাত্র যাতে বঞ্চিত না হয় সেটি দেখবে। অতিরিক্ত কোন ফি নেওয়া হবে না।

চতুর্থত— সকল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের জন্য আসন বরাদ্দ করা। গাজীপুরের ডুয়েটে কারিগরি শিক্ষার্থীদের জন্য সেখানে ডিপ্লোমা করা পর ভর্তি সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও আমরা ৪ জেলায় ৪টি সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ করা হবে। সেখানে এসব শিক্ষার্থী থেকে ৫০ শাতংশ এবং বাকি ৫০ সরাসরি ভর্তির সুযোগ পাবে। এসব বুয়েটের তত্ত্বাবধানে এটা করা হবে। এরফলে প্রচুর সংখ্যা ডিপ্লেমা পাস করা শিক্ষার্থী বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ার সুযোগ পারে। সেই বিষয়টিও সরকারের মনোযোগে আছে।

এদিকে, সচিবের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে সোমবার শাহবাগে ওই কর্মসূচির ডাক দেন শিক্ষার্থীরা।


সর্বশেষ সংবাদ