জালিয়াতি করে এসএসসি পাস করানো ১২৮ জনের ফল বাতিল
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে (বিটিইবি) জালিয়াতি করে এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় পাস করানো ১২৮ শিক্ষার্থীর ফল বাতিলের সুপারিশ করেছে এ বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব শিক্ষার্থী নবম শ্রেণিতে লেখাপড়া না করলেও সরাসরি এসএসসি পাস করানোর ব্যবস্থা করে দেয় বোর্ডের একটি প্রভাবশালী চক্র। এতে জড়িত রয়েছেন খোদ বোর্ডের কম্পিউটার সেলের প্রধান। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে প্রতিবেদনটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর ঠিক রেখে শিক্ষার্থী, তার বাবা ও মায়ের নাম রিপ্লেস (একজনকে বাদ দিয়ে অন্যজনকে আনা) করে গাজীপুরের কাপাসিয়া টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাঁচ শিক্ষার্থীর ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া একই প্রক্রিয়ায় টাঙ্গাইলের হাজী শমশের আলী টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড বিএম কলেজের ৫৬ জন, একই জেলার প্রিন্সিপ্যাল জাহাঙ্গীর আলম বিএম কলেজ ৪৮ জন, ইউনিয়ন হাইস্কুলের ১৯ জনের ফল পরিবর্ততন করে এসএসসি ভোকেশনাল পাস করানো হয়েছে। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ শাখা এবং কম্পিউটার সেলে সংরক্ষিত তথ্য পর্যালোচনা করে তদন্ত কমিটি এসব তথ্য বের করেছে।
চার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ইউনিয়ন হাই স্কুল এমপিওভুক্ত নয়। বাকি তিনটি কয়েকদিন আগে এমপিওভুক্ত হয়েছে। তবে এমপিওর চূড়ান্ত তালিকা থেকে এসব প্রতিষ্ঠানকে বাদ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে তবে মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।
প্রতিবেদনে উল্লিখিত অপকর্মে জড়িত থাকার দায়ে কম্পিউটার সেল প্রধান সিস্টেম অ্যানালিস্ট সামসুল আলমকে বরখাস্ত ও বিভাগীয়সহ অন্য আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া তিন সহকারী প্রোগ্রামার- মোহাম্মদ হাসান ইমাম, মোহাম্মদ শামীম রেজা ও ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং দুই কম্পিউটার অপারেটর- মো. আল-আমিন এবং আতিকুর রহমানকে চাকরিচ্যুত করতে বলা হয়েছে। শেষের তিনজন বোর্ডে চুক্তিভিত্তিক ও অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী। এছাড়া জড়িত চার প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এবং এমপিও বাতিলের সুপারিশ করা হয়। এছাড়া জাতীয় সনদ ব্যবস্থা এবং শিক্ষা বোর্ডের ভাবমূর্তি নষ্টের দায়ে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার লক্ষ্যে র্যাবের কাছে হস্তান্তরের সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
এছাড়া পরীক্ষার্থী রিপ্লেস করে ফল জালিয়াতির সত্যতা পাওয়া গেছে। বোর্ডের কম্পিউটার সেলের প্রধান হিসেবে সিস্টেম অ্যানালিস্ট শামসুল আলমের কাছে এসএসসি ভোকেশনাল শিক্ষাক্রমের পাসওয়ার্ড থাকে। তিনি পাসওয়ার্ড সুরক্ষিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ঘটনায় অন্যরা জড়িত থাকলেও পুরো দায়-দায়িত্ব শামসুল আলমের ওপর বর্তায়। তাই তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও অন্যান্য আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। পাশাপাশি অন্য তিন সহকারী প্রোগ্রামারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার কথা বলা হয়। এ চারজন আগে থেকেই পরস্পর বন্ধু বলে জানা গেছে।