কারিগরি শিক্ষা গ্রহণকারীদের ৮১ শতাংশের বেতন ১০ হাজার টাকার নিচে
দেশে কারিগরি শিক্ষা গ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় ৮১ শতাংশের বেতন ১০ হাজার টাকার নিচে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সাম্প্রতিক এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে জানানো হয়েছে, সরকারি কারিগরি প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ শেষে দ্রুত চাকরি মিললেও বেতন অনেক কম পাওয়া যায়। কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিদের সামাজিকভাবে অনেক সময় হেয় ও বৈষম্যের শিকার হতে হয়।
সরকারি কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ নিয়ে জরিপটি করেছে সিপিডি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ, ইকো-সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) এতে সহযোগিতা করেছে। সুনামগঞ্জ জেলায় চলতি বছরের মার্চ ও এপ্রিল মাসে জরিপটি পরিচালনা করা হয়।
এর আগে সাতক্ষীরা ও গাইবান্ধায় করা জরিপেও একই ধরনের তথ্য উঠে আসে। বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জে অংশীজনদের নিয়ে মতবিনিময় সভায় জরিপে প্রাপ্ত তথ্য তুলে ধরা হয়। সভায় কারিগরি শিক্ষা খাতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, এ জেলায় ভারী শিল্পকারখানা গড়ে ওঠেনি। ফলে অনেক বিষয়ে কারিগরি প্রশিক্ষণ নিলেও কাজের সুযোগ পাওয়া যায় না।
সভায় সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, সরকার কারিগরি শিক্ষায় গুরুত্ব দিলেও মাঠপর্যায়ে পিছিয়ে রয়েছে। যা শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে, তার উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই।
গবেষকেরা জানান, কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ এ জেলার তরুণদের চাকরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কারিগরি শিক্ষা সম্পন্ন করা জেলার ৭৮ শতাংশ শিক্ষার্থী ৬ মাসের মধ্যে চাকরি পেয়েছেন। তবে তাদের ৮১ শতাংশই ১০ হাজার টাকার কম বেতন পান। ২৫ হাজার টাকার মধ্যে বেতন পান ১৫ শতাংশ। দেশের অন্যান্য স্থানেও একই ধরনের চিত্র দেখা গেছে।
সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, প্রচলিত সাধারণ শিক্ষার চেয়ে কারিগরি শিক্ষায় চাকরির নিশ্চয়তা বেশি। এ খাতের অর্থনৈতিক স্বীকৃতি মিললেও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা আসেনি। দেশ একটি নতুন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ফলে কারিগরি শিক্ষার মান উন্নয়নে সময়ের সুযোগ নেওয়া উচিত।
আরো পড়ুন: দেশের এক-চতুর্থাংশ ইংরেজি শিক্ষকেরই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নেই
সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দেশে অনেক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট করা হলেও ভালো মানের শিক্ষা মিলছে না। কারিগরি শিক্ষার বিষয়ে আর্থসামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিরও বিষয় রয়েছে।
বিভিন্ন অঞ্চলের অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় কারিগরি পাঠ্যক্রম তৈরি করা প্রয়োজন উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, সুনামগঞ্জের জন্য কৃষি, মৎস্য ও পর্যটনকেন্দ্রিক পাঠ্য প্রয়োজন। এটি করা না গেলে কারিগরি শিক্ষা টেকসই হবে না।
উন্মুক্ত আলোচনায় বক্তারা কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ হালনাগাদ করার সুপারিশ করেন। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় চাহিদা, সম্পদ ও সম্ভাবনাও বিবেচনায় নেওয়ার অনুরোধ জানান তারা। বক্তারা বলেন, দেশে বেসরকারি কারিগরি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও মান ভালো নয়। ভর্তি হয়ে প্রতারিত হচ্ছেন অনেকে।