হাজার কোটি টাকা ব্যয়েও কারিগরি শিক্ষায় গতি আসছে না
দেশে উন্নত প্রযুক্তি ও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে এক দশকে বিনিয়োগ হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী এগোতে পারেনি কারিগরি (টেকনিক্যাল) শিক্ষা। গত বছর দেশের মধ্যে মোট শিক্ষিত জনশক্তির মাত্র শূন্য দশমিক ৮১ শতাংশ এ খাতের ছিল। বাংলাদেশ পরিসংখ্যার ব্যুরোর (বিবিএস) জনসংখ্যা ও গৃহগণনা-২০২২ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এক দশকেরও বেশি সময়ে শিক্ষিত জনশক্তি (৫ বছরের বেশি বয়সী) শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ বেড়ে শূন্য দশমিক ৮১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০১১ সালে ছিল শূন্য দশমিক ৭১ শতাংশ। এটিকে হতাশাজনক বলছেন অর্থনীতিবিদরা। এ খাতে আশানুরূপ অগ্রগতি না আসা দক্ষ জনশক্তি উন্নয়নের ক্ষেত্রে এটি ভালো খবর নয়, বলছেন তারা।
জানা গেছে, দেশে এখনো সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত জনশক্তি সবচেয়ে বেশি ৮৯ দশমিক ২৬ শতাংশ। ২০১১ সালে সাধারণ শিক্ষার হার ছিল ৯৩ দশমিক ৭১ শতাংশ। এ ছাড়া মাদ্রাসায় ৭ দশমিক ১৯ এবং অন্যান্য ২ দশমিক ৭৪ শতাংশ রয়েছে। বিবিএসের প্রতিবেদন বলছে, দেশে পাঁচ বছরের বেশি বয়সের ১০ কোটি ৫৭ লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষ বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা নিয়েছে।
অথচ ২০১৮ থেকে ২০২৪ অর্থবছর পর্যন্ত সাত বছরের সরকার টেকনিক্যাল ও মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে ৫৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় করেছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। চলতি অর্থবছরে ১০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে এ দুই খাতে।
কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে কিছু মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মাধ্যমেও উন্নয়নে বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আইসিটি বিভাগ রয়েছে। সরকারের প্রচেষ্টায় গত ১১ বছরে মাদ্রাসা শিক্ষায় কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। তবে কারিগরি শিক্ষা এখনো দুর্বল অবস্থানে রয়ে গেছে বলে মত সংশ্লিষ্টদের।
সরকারের চেষ্টার পরও কারিগরি শিক্ষার এমন অবস্থাকে উদ্বেগজনক বছলেন বিশেষজ্ঞরা। এ জন্য মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া, মানসম্মত প্রতিষ্ঠানের অভাভ এবং মানুষের সচেতনার অভাবকে দায়ী করছেন তারা। এ পরিস্থিতিতে বুয়েট কিংবা ভারতের আইআইটির মতো অন্তত পাঁচ-ছয়টি আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান এবং বিপুল সংখ্যক কারিগরি স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক মূখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের কারিগরি শিক্ষায় এখনো কর্মসংস্থানের সুযোগ কম। ফলে অনেকে সনদ নেওয়ার জন্য বা সাময়িকভাবে এ শিক্ষায় আসছেন। কিন্তু শিখছেন না কিছুই। এ ছাড়া মান নিয়ে এখনো বড় ধরনের প্রশ্ন রয়েছে। ফলে এ শিক্ষা এখনো সেভাবে এগোতে পারেনি। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানগুলোর মানেও পার্থক্য অনেক।
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০১১ সালে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত জনশক্তি ছিল ৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ। ২০২২ সালে বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ১৯ শতাংশ। অথচ গত ১৫ বছরে কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণে (টিভিইটি) ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশে ১১ হাজার ১১৮টি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত ও সনদভিত্তিক কোর্স, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, ডিপ্লোমা ও উচ্চশিক্ষা নিতে পারছেন শিক্ষার্থীরা। মোট শিক্ষার্থী রয়েছে ১৩ লাখ ৬৮ হাজারের বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের কারিগরি শিক্ষায় এখনো কর্মসংস্থানের সুযোগ কম। ফলে অনেকে সনদ নেওয়ার জন্য বা সাময়িকভাবে এ শিক্ষায় আসছেন। কিন্তু শিখছেন না কিছুই। এ ছাড়া মান নিয়ে এখনো বড় ধরনের প্রশ্ন রয়েছে। ফলে এ শিক্ষা এখনো সেভাবে এগোতে পারেনি। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানগুলোর মানেও পার্থক্য অনেক।
আরো পড়ুন: একযোগে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ শিক্ষকের পদত্যাগ
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, কর্মসংস্থানের সুযোগ কম থাকায় এখনো কারিগরি শিক্ষায় আগ্রহ কম। মান নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়। এ জন্য সবার আগে মান নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার মান কিছুটা ভালো হলেও অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সনদ সর্বস্ব। সে কারণে অনেকে বেকার থেকে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, কারিগরি শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। সেক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের বিষয়টিতে জোর দিতে হবে। শিক্ষার্থী মোটিভেশন আসবে যদি এটি নিশ্চিত করা যায়। মান ও কর্মসংস্থানে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। সনদ সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান তদারকির আওতায় আনলে এ শিক্ষা ভালো অবস্থানে যাবে। এসব বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে পারলে দেশের কারিগরি শিক্ষা ভালো হবে। দেশে-বিদেশে কর্মস্থানও বাড়বে।