০৫ অক্টোবর ২০২৩, ১১:৫২

৩৯ মাস ধরে বেতন বন্ধ পলিটেকনিকের ৭৫০ শিক্ষকের

শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক   © ফাইল ফটো

কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের (ডিটিই) স্কিলস অ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রকল্পের (স্টেপ) অধীনে নিযুক্ত ৪৯টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ৭৫০ জন শিক্ষক টানা ৩৯ মাস ধরে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। দীর্ঘ সময় শিক্ষকরা বেতন-ভাতা না পাওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

জানা গেছে, স্টেপ প্রকল্পটির মেয়াদ ২০১৯ সালের জুনে শেষ হয়। এরপর সরকার এ শিক্ষকদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর ডিসেম্বর পর্যন্ত শিক্ষকরা বেতন ভাতা পেলেও  ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে তাদের বেতন ভাতা বন্ধ রয়েছে।

প্রকল্পের এক শিক্ষক বলেন, প্রকল্প শেষ হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তাদের মৌখিকভাবে কাজ করে যেতে বলা হয়েছে। তারাও ক্লাস নিচ্ছেন। প্রকল্প বন্ধ হওয়ার পর প্রথম ৬ মাস বকেয়া বেতন পেলেও ৩৯ মাসের বেতন-ভাতা বাকি রয়েছে। তারা বর্তমানে আত্মীয়স্বজনের কাছ থকে ধারদেনা করে চলছেন।

শিক্ষকদের বেতনের বিষয়ে জানতে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব কামাল হোসেন এবং কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মহসিনের ব্যবহৃত নাম্বারে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।

তথ্যমতে, কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে সরকারি ৪৯টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মানোন্নয়ন ও শিক্ষকস্বল্পতা দূরীকরণের লক্ষ্যে ২০১০ সালের জুলাই মাসে স্টেপ প্রকল্প গ্রহণ করে এবং দুই ধাপে বাড়িয়ে ধারাবাহিকভাবে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত এই প্রকল্প চালমান থাকে।

এই প্রকল্পের আওতায় নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুই ধাপে ১ হাজার ১৫ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে  ৭৫০ জন স্টেপ প্রকল্পের। ১১ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিক্ষকদের ৪৯টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পদায়ন দেওয়া হয়।

প্রকল্প শেষ হলে কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে এই প্রকল্পের শিক্ষকদের অবদান ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্প শেষে শিক্ষকদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের ২২ মে অনুমোদন করেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত অনুশাসনের আলোকে ২০১৯ সালের ৩০ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ প্রকল্পে নিয়োজিত/কর্মরত শিক্ষকদের সাময়িকভাবে বহাল রেখে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করেন। প্রজ্ঞাপনের আলোকে ৪৯টি পলিটেকনিকের সব কার্যক্রম অদ্যাবধি যথাযথভাবে পালন করে আসছেন তারা।প্রকল্পের মেয়াদ শেষে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সরকারের থোক বরাদ্দ খাত থেকে ৭৮৬ জন শিক্ষকের বেতন-ভাতাও পরিশোধ করা হয়। কিন্তু এরপর থেকে আর বেতন-ভাতা দেওয়া হচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত সারসংক্ষেপ অনুসরণ করে স্টেপ শীর্ষক সমাপ্ত প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে প্রক্রিয়াধীন ৭৫০ জন শিক্ষককে চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তর সম্ভব কি না, সে বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০২২ সালের ১৯ মে  আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আইন মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে ইতিবাচক মতামত দিয়েছে। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এই কাজ চলছে ধীরগতিতে। আর এতেই বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন এই শিক্ষকেরা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, কারিগরি শাখার সভাপতি মো. সুমন হায়দার বলেন, স্টেপ প্রকল্পের শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে বেতন-ভাতা ছাড়াই পাঠদান দিয়ে যাচ্ছেন। তারা চরম মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। শিক্ষক দিবসে সরকারের কাছে এই শিক্ষকদের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবি জানাচ্ছি।