২৬ নভেম্বর ২০২৫, ১০:১৬

টানা রিলস দেখে যে ১০ বিপদ ডেকে আনছেন

টানা রিলস দেখে যেভাবে বিপদ ডেকে আনছেন  © সংগৃহীত

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রিলস বা শর্ট ভিডিওর আসক্তি এখন এক বৈশ্বিক বাস্তবতা। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক, ইউটিউব সব প্ল্যাটফর্মেই ছড়িয়ে আছে অগণিত ক্ষণস্থায়ী ভিডিও, যেগুলো একবার দেখা শুরু করলে থামানো কঠিন। কয়েক সেকেন্ডের ভিডিওগুলোয় যখন একের পর এক মজার, চমকপ্রদ বা আবেগতাড়িত কনটেন্ট দেখা যায়, তখন ঘড়ির কাঁটা কখন যে ঘণ্টা পেরিয়ে যায়, তা টেরই পাওয়া যায় না। অথচ এই অভ্যাসের পেছনে লুকিয়ে রয়েছে একাধিক শারীরিক ও মানসিক ঝুঁকি যেগুলো প্রতিনিয়ত প্রভাব ফেলছে ব্যবহারকারীর মস্তিষ্ক, ঘুম, মনোযোগ ও আবেগে।

গবেষণায় দেখা গেছে, টানা রিলস দেখার ফলে আমাদের মস্তিষ্কে ‘রিওয়ার্ড সিস্টেম’ অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে পড়ে। অর্থাৎ, আমরা প্রতিটি নতুন ভিডিও থেকে এক ধরনের মানসিক পুরস্কার পেতে থাকি। এতে করে মস্তিষ্ক আরও বেশি সময় ধরে এই উদ্দীপনা খুঁজতে থাকে, যার ফল হয়—অসংখ্য রিলস একটানা দেখা। এই অভ্যাস ধীরে ধীরে আমাদের মনোযোগ, আবেগনিয়ন্ত্রণ ও বাস্তবজ্ঞানকে প্রভাবিত করতে শুরু করে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রিলস দেখার সময়ে শরীরের সিম্পেথেটিক নার্ভাস সিস্টেম ক্রমেই সক্রিয় হয়ে ওঠে, ফলে হৃদস্পন্দন ও উত্তেজনা বেড়ে যায়। বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর আগে দীর্ঘ সময় রিলস দেখলে ঘুমের মান কমে যায়, যেটি হাইপারটেনশন, ক্লান্তি ও মেজাজ খিটখিটে হওয়ার অন্যতম কারণ। অনেকেই প্রতিদিন রাতের ঘুমের বদলে একের পর এক ভিডিও দেখেন, যার ফলে মস্তিষ্কের বিশ্রামের সুযোগ থাকে না।

একটি গবেষণায় ৪ হাজারের বেশি মানুষের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে রাতের বেলায় রিলস বা শর্ট ভিডিও দেখার সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপের সম্পর্ক রয়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়ছে তরুণ ও মধ্যবয়সী ব্যবহারকারীরা।

আরও পড়ুন: ফেসবুকে আসা অশ্লীল ভিডিও বন্ধ করবেন যেভাবে

১। রাতে ঘুমানোর আগে টানা রিলস দেখলে হাইপারটেনশনের ঝুঁকি বাড়ে। বিশেষ করে তরুণ ও মধ্যবয়সীদের এই ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। বিভিন্ন বয়সের ৪ হাজার ৩১৮ জনের ওপর চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে এই ফলাফল।

২।  ঈর্ষাকাতর মানুষের রিল বা শর্টসে আসক্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। অনেক সময় তারা নেতিবাচক আবেগ থেকে মনকে ভুলিয়ে রাখতে কিংবা অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করতে বারবার শর্টসের কাছে ফিরে যান।

৩। স্মার্টফোনে সীমাহীন স্ক্রলিং আর অনুভূতি ভোঁতা করে দেওয়া কনটেন্টের প্লাবন নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে অক্সফোর্ড বর্ষসেরা শব্দ নির্বাচিত হয়েছে ‘ব্রেন রট’, যার বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘মস্তিষ্কে পচন।’ ঘণ্টার পর ঘণ্টা রিলস দেখার অর্থ আপনি সম্ভবত ‘ব্রেন রট’-এ আক্রান্ত।

৪।  শর্টস বা রিলসে আসক্ত ব্যক্তিদের মস্তিষ্কে কিছু পরিবর্তন দেখা যায়- এমনটা বলছে গবেষণা। বিশেষ করে মস্তিষ্কের যে অংশগুলো আবেগ নিয়ন্ত্রণ ও সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে, সেই অংশে। তার মানে এই নয় যে শর্টস বা রিল আমাদের মস্তিষ্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে; বরং এই অভ্যাস মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে।

৫। দীর্ঘক্ষণ রিলস দেখার সময় শরীরের সিম্পেথেটিক নার্ভাস সিস্টেম আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে ভিডিও দেখার সময় হৃৎস্পন্দন তুলনামূলক বেড়ে যায়। টানা একই কাজ করলে এর প্রভাব হতে পারে ভয়াবহ।

৬। রাতে ঘুমানোর আগে রিলসে নিয়ে পড়ে থাকলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। এটি দীর্ঘমেয়াদে শারীরিক ক্ষতির কারণ হতে পারে। এছাড়া ঘুম কম হওয়ার কারণে অবসাদ, ক্লান্তি ও মেজাজ খিটখিটে হয়ে যেতে পারে। 

৭। যেসব রিল বা শর্টসে দৃশ্য দ্রুত পরিবর্তন হয় বা যা আমাদের আবেগকে নাড়া দেয়, সেগুলো মস্তিষ্ককে একরকম ‘পুরস্কৃত’ করে। একে বলা যেতে পারে মস্তিষ্কের ‘রিওয়ার্ড সিস্টেম’। মস্তিষ্ক যদি এ ধরনের উদ্দীপনায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তাহলে সে এ রকম ‘পুরস্কার’ আরও চাইতে শুরু করে। ফলে ভিডিও দেখার আসক্তি বাড়ে।

৮। রিলসের প্রতি আসক্তি তৈরি হলে কমে যেতে পারে মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা। মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে ছোট ভিডিও ও খণ্ডিত তথ্যের সঙ্গে মানিয়ে নিতে অভ্যস্ত হয়ে যেতে পারে। এর ফলে দীর্ঘ ও জটিল বিষয়ে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হতে পারে।

৯। আমাদের মস্তিষ্কের ‘প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স’ অংশটি পরিকল্পনা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ছোট ছোট ভিডিও বেশি দেখলে এই অংশের কার্যক্ষমতা কমতে পারে, ফলে ভিডিও দেখা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যায়। ফলে পরিকল্পনা করা কঠিন বলে মনে হয়।

১০। রিলস দেখার অভ্যাস নেতিবাচক আবেগ আরও বাড়িয়ে দেয়।