আট মাসে ৭ ভাগ ইশতেহার বাস্তবায়ন করেছে শিক্ষক সমিতি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (জবিশিস) কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচন-২০২২ অনুষ্ঠিত হয় গত বছরের ১০ নভেম্বর। নির্বাচনে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে তিন সদস্য পদ বাদে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ১২ পদে সংখ্যাগরিষ্ঠভাবে জয়ী হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নীলদলের (একাংশ) প্যানেল।
ওই নির্বাচনের আগে বিভিন্ন ধরনের অঙ্গীকার করেছিলেন শিক্ষক সমিতির বর্তমান সভাপতি ড. আবুল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ড. লুৎফর রহমানের প্যানেল। তবে নির্বাচনে জেতার পর ৮ মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও মাত্র সাত শতাংশ অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে পেরেছে শিক্ষক সমিতি।
যেসব ইশতেহার এখনো বাস্তবায়ন হয়নি
বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ চালু, উচ্চপদে নিয়োগের ক্ষেত্রে শর্ত পূরণ হওয়ার তারিখ থেকেই কার্যকরণ, অধ্যাপক হওয়ার ক্ষেত্রে পিএইচডি এবং সহযোগী অধ্যাপক হওয়ার ক্ষেত্রে প্রার্থীকে কমপক্ষে ২য় মাস্টার্স ডিগ্রি (বিদেশি)/ এমফিল/পিএইচ.ডি. ডিগ্রি বাতিলকরণ (বাতিলের পরিবর্তে আরো যুক্ত হয়েছে এবং শিক্ষক সমিতিও এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে), অস্থায়ী ও শিক্ষাছুটির বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের জন্য ইউজিসির মাধ্যমে নতুন পদ সৃষ্টি,
উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার জন্য সুদবিহীন ঋণ প্রদান এবং তহবিল গঠনসহ বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা, শিক্ষকদের গবেষনায় উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে মাসিক গবেষণা ভাতা প্রদান, গবেষণার স্বীকৃতিস্বরূপ পুরস্কার ও পদক প্রবর্তন, গবেষণা সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন জার্নালে (ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর জার্নাল) প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণ, চৌর্যবৃত্তি চেক করার জন্য Turnitin Software-এ সকল শিক্ষকের প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণ।
আরও পড়ুন: জবি শিক্ষক সমিতির নেতৃত্বে হোসেন-কালাম
এছাড়া কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে শিক্ষকদের গবেষণার পরিবেশ নিশ্চিতকরণ, শিক্ষা কার্যক্রমের গতিশীলতার লক্ষ্যে প্রত্যেক শিক্ষকের জন্য কম্পিউটার/ল্যাপটপ প্রদান নিশ্চিতকরণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ব্যবস্থা যুগোপযোগীকরণসহ সক্ষমতা ও গতি বৃদ্ধিকরণ, সরকারি বিধি অনুযায়ী সাধারণ ভবিষ্যত (জিপিএফ) এর লভ্যাংশ নির্ধারণ ও প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ, শ্রান্তি ও বিনোদন ভাতা প্রাপ্যতার তারিখ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকরকরণ, শিক্ষকদের স্বাস্থ্যবীমা পুনঃচালুকরণ, সান্ধ্যকালীন কোর্সসমূহ পুনরায় চালু,
শিক্ষকদের জন্য আধুনিক মানসম্মত ক্লাব প্রতিষ্ঠা, চাকুরি স্থায়ীকরণের ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিলকরণ (প্রভাষক পদে নিয়োগে পুলিশ ভেরিফিকেশন চালু রয়েছে), সকল রুটে পূর্ণাঙ্গ দ্বিতীয় শিফট এবং সান্ধ্যকালীন পরিবহণ সুবিধা পুনঃচালুকরণ এবং শিক্ষার্থীদেরও পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান ক্যাম্পাসের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধিকরণসহ নতুন ও দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের উন্নয়ন কাজকে ত্বরান্বিত করা ও আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন।
যেসব ইশতেহার বাস্তবায়ন হয়েছে
শিক্ষকদের সবেতনে পিএইচডি শিক্ষাছুটির মেয়াদ ৫ বছরে উত্তীর্ণকরণ, একাডেমিক কাউন্সিলে প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক স্তরে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতকরণ, সকল পদে পিএইচডি ডিগ্রির জন্য অতিরিক্ত তিনটি স্থায়ী ইনক্রিমেন্ট সুবিধা নিশ্চিতকরণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে পরিচালিত গবেষণা প্রকল্পসমূহে সর্বাধিক সংখ্যক গবেষককে প্রাধান্য দেওয়া এবং স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার বিষয়টি নিশ্চিতকরণ এবং প্রতি দুই মাস অন্তর সিন্ডিকেট সভা আয়োজন (তবে ভিসি যোগদানের প্রথমদিনই দুই মাসে সিন্ডিকেট সভা করার কথা বলেন যা ইশতেহার ঘোষার ৬ মাস আগে)।
যেসব ইশতেহার এখনো প্রক্রিয়াধীন
শিক্ষকদের ক্যান্টিন পুনরায় চালুকরণ ও লাউঞ্জ আধুনিকায়নে ৫০ লাখ টাকা অনুদান, প্রতি বিভাগে দু-জন শিক্ষককে সম্মানীসহ ছাত্র উপদেষ্টা নিয়োগকরণ, শিক্ষক ডরমিটরি আধুনিকায়ন ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিকরণ। প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য যোগদানের প্রথমদিনেই ছাত্র উপদেষ্টা নিয়োগের বিষয়ে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। যা ইশতেহার ঘোষণার ৬ মাস পূর্বে। পাশাপাশি ডরমিটরি ভবন আধুনিকায়নের কাজ অনেক আগে থেকেই চলমান।
এদিকে, ইশতেহার ঘোষণার সময় নির্বাচনে জয়যুক্ত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পদ এমনকি ডীন ও বিভাগীয় চেয়ারম্যান পদ না নেয়ার অঙ্গীকার করা হয়। তবে এটির ব্যত্যয় ঘটিয়ে খোদ শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আবুল হোসেন গত ১৭ জুলাই সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীন হিসেবে যোগদান করেন। এতে অনেক শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
ইশতেহার বাস্তবায়নের বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আবুল কালাম মো. লুৎফর রহমান বলেন, আমরা যেসব ইশতেহার দিয়েছিলাম সেগুলোর মধ্যে বেশকিছু বাস্তবায়ন হয়েছে, কিছু হয়নি, কিছু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। শিক্ষকদের জন্য শিক্ষা ছুটির মেয়াদ ৫ বছর করেছি। শিক্ষক ক্যান্টিন চালু ও শিক্ষক লাউঞ্জ আধুনিকায়নে ৫০ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে অনুদান পেয়েছি। সামনেই কাজ হবে। পাশাপাশি ছাত্র উপদেষ্টা নিয়োগের কাজ চলমান রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আগে ধাপে ধাপে পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগতো তবে এখন শুধু প্রভাষক পদে চালু রয়েছে৷ সান্ধ্যকালীন কোর্সের বিকল্প হিসেবে প্রফেশনাল কোর্স চালু করা হয়েছে। টেলিফোন ভাতা ও শিক্ষকদের জন্য গবেষণার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বাইরের দেশের সাথে আমাদের চুক্তি করার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এছাড়াও শিক্ষকদের জন্য সুদমুক্ত ঋণ,বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ চালু, পদ প্রবর্তন,আইসিটির সক্ষমতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যবীমা চালু, পরিবহন সেবার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে আমরা বারবার তাগিদ দিচ্ছি। নির্বাচনের আগে অনেক বাস্তবায়ন হবে।