শিক্ষক নির্যাতন এখন মামুলি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে: বাকবিশিস

  © লোগো

রাজশাহীর গোদাগাড়ি উপজেলার রাজবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী কর্তৃক মারধর ও লাঞ্ছিত করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (বাকবিশিস)। এ ঘটনার নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্তপূর্বক দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

বাকবিশিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. নুর আহমদ তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, কয়েকবছর ধরে দেশে শিক্ষকদের ওপর হামলা, নির্যাতন, লাঞ্ছনা, অবমাননার একের পর এক ঘটনা ন্যক্কারজনকভাবে ঘটে চলেছে। এমনকি দুর্ভাগ্যজনকভাবে একজন শিক্ষককে খুনের শিকারও হতে হয়েছে। ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জে একজন সম্মানিত শিক্ষককে একজন সংসদ সদস্য কর্তৃক কান ধরে উঠবস করানোর মধ্য দিয়ে শিক্ষকদের নিপীড়ন-অবমাননার যে কলুষিত সংস্কৃতি এদেশে চালু হয়েছে, ক্রমাগতভাবে সেই সংস্কৃতি এখন পুরো শিক্ষক সমাজকে আঘাত করছে। শিক্ষক নির্যাতন এখন মামুলি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে শিক্ষকদের নির্যাতন করা হচ্ছে।

কয়েক মাসে ধর্মীয় উসকানি ছড়িয়ে মুন্সীগঞ্জে স্কুলশিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে গ্রেফতার করা, নড়াইলে কলেজের একজন অধ্যক্ষকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছনা, সাভারের একজন কলেজ শিক্ষককে নির্মমভাবে খুন, ঢাকায় অধ্যাপক রতন সিদ্দিকীর ওপর মৌলবাদী হামলার ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ রাজশাহীতে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী নিজ কার্যালয়ে ডেকে একজন কলেজ শিক্ষককে নির্মমভাবে পেটানোর যে বর্ণনা আমরা গণমাধ্যমে পেয়েছি, তাতে আমরা বিস্মিত, স্তম্ভিত। একজন আইন প্রণেতা হয়ে আইন লঙ্ঘনের এ ঘটনার ধিক্কার জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। সর্বোপরি একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে সমাজের সম্মানজনক পেশা শিক্ষকতায় নিয়োজিতদের সম্পর্কে যে ঘৃণ্য অবমাননাকর মনোভাব তার মধ্যে ফুটে উঠেছে, তাতে তিনি সংসদ সদস্য পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন বলে আমরা মনে করি।

আমরা সরকার উদ্দেশে বলতে চাই, কিছু জনপ্রতিনিধি ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন। এই মুহূর্তে তাদের লাগাম টেনে না ধরলে জনগণের মধ্যে অসহায়ত্ব এবং এর পরিণতিতে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হবে। রাজশাহীর ঘটনায় দেশের আপামর শিক্ষক সমাজের মধ্যে চরম ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। বাকবিশিস মনে করে, সংসদ সদস্য এই পরিচয়ে ওমর ফারুককে যেন তার কৃতকর্মের দায় থেকে পার পাইয়ে দেওয়া না হয়। শিক্ষককে পেটানোর যে অভিযোগ তার বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে এসেছে, এর বিচার বিভাগীয় তদন্ত হোক। তদন্তে দোষী প্রমাণ হলে তার বিরুদ্ধে যেন দেশের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বাকবিশিস শিক্ষক নির্যাতনকারী সংসদ সদস্যের সর্বোচ্চ শাস্তি দেখতে চায়।


সর্বশেষ সংবাদ