জাতীয়করণ আন্দোলন: শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে যেসব আলোচনা হলো
জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সাথে সভা শেষ করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার। দুপুর দেড়টার একটু আগে শুরু হওয়া এ সভা শেষ হয় পৌনে ৩টার দিকে। সভায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব (মাধ্যমিক-২) সাইয়েদ এ জেড মোরশেদ আলী উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে ব্রিফ করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে।
সভা সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সর্বজনীন বদলি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি বাড়ি ভাড়ার ইস্যুর বিষয়টিও আছে। এটা কীভাবে বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রস্তাবনা চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়; যা আলোচনা করে শিক্ষকরা মন্ত্রণালয়ে দেবেন। অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, বাড়ি ভাড়া টাকা বৃদ্ধিসহ অন্যান্য বিষয়গুলো কীভাবে সমাধান করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হবে। একটি সূত্র জানায়, সভায় শিক্ষকদের দাবিগুলো মেনে নেওয়া জন্য প্রাথমিক পাওয়া গেছে। ধীরে ধীরা তা বাস্তবায়ন হবে বলে জানায় ওই সূত্রটি।
সভায় জাতীয়করণের দাবি নাকচ করেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার। তবে জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের অন্যান্য দাবির প্রতি প্রাথমিকভাবে একমত প্রকাশ করেছেন তিনি। শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, জাতীয়করণ অন্তর্বর্তী সরকার করতে পারবে না। কারণ, জাতীয়করণ একটি কঠিন বিষয়। এটি ইন্টেরিম গভমেন্ট করতে পারবে না। জাতীয়করণ নির্বাচিত সরকার করবে। তাছাড়া শিক্ষকদের অন্যান্য যে দাবিগুলো রয়েছে সেগুলে সরকার বিবেচনা করবে। এ সময় শিক্ষকদের দাবিগুলো যৌক্তিক দাবি করে ধাপে ধাপে এগুলো বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন তিনি। বুধবার (১৩ আগস্ট) শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠককালে এসব কথা বলেন উপদেষ্টা।
সভায় বদলি নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ইতোমধ্যে সর্বজনীন বদলির বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। এ ছাড়াও শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ও অন্যান্য দাবির বিষয়ে সরকার বিবেচনা করবে। সূত্রের তথ্য, ইতোমধ্যে বদলি ইস্যুতে ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে মন্ত্রণালয়।
জাতীয়করণে দাবিতে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে সভা করা প্রতিনিধি দলের মধ্যে ছিলেন—ঢাকা মহিলা কলেজের মো. মাইনুদ্দিন, ময়মনসিংহের কাতলাসেন কাদেরিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের হায়দর নগর কলাকান্দি আছমাতুন্নেসা উচ্চ বিদ্যালয়ের সরকারি শিক্ষক মো. আবু তালেব সোহাগ, বরিশালের আনোয়ারা ফাজিল মাদ্রাসার শান্ত ইসলাম, শামসুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের আবুল বাশার, বাগাদি গনী উচ্চ বিদ্যালয়ের জাহাঙ্গীর হোসেন, পাবনার সুজানগরের খলিলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও বিটিএফ সভাপতি হাবিবুল্লাহ রাজু, নরসিংদীর সরদার আসমত আলী মহিলা কলেজের জহিরুল ইসলাম, গেন্ডারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম এবং কুমিল্লার দেবিদ্বার ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলাউদ্দিন।
এর আগে বুধবার সকাল ৯টা থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশের এক পর্যায়ে শিক্ষকদের ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল আলোচনার জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রবেশ করেন।
জানা গেছে, ২০১৮ সালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে টানা ২০ দিন অবস্থান ও অনশন কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের জন্য ৫ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ও ২০ শতাংশ বৈশাখী ভাতার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়। সে সময় সরকার শিক্ষা জাতীয়করণের প্রতিশ্রুতিও দেয়, কিন্তু পরবর্তীকালে তা বাস্তবায়ন হয়নি। সরকার পতনের পর অন্তবর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈষম্য নিরসনের বিষয়ে আলোচনা হয় এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে উৎসব ভাতা ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি ও পরবর্তী বাজেটে বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধিসহ শ্রান্তি বিনোদন ভাতা কার্যকরের ঘোষণা দেন তিনি।
শিক্ষা উপদেষ্টার সুস্পস্ট ঘোষণা সত্ত্বেও ২০২৫-২৬ অর্থ বছর শুরু হলেও সরকারি নিয়মে বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, শতভাগ উৎসব ভাতা ও শ্রান্তি বিনোদন ভাতার প্রজ্ঞাপন এখনও জারি করা হয়নি বলে অভিযোগ শিক্ষকদের। এ অবস্থায় দাবি আদায়ে আবারও রাজপথে নামার ঘোষণা দেন শিক্ষকরা।