০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৭:৫৮

সরকারকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবি শিক্ষকদের

সংবাদ সম্মেলনে বাকশিস-বিপিসি নেতারা  © সংগৃহীত

শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি বৈষম্য দূর করে শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবি জানিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন শিক্ষকদের দুই সংগঠন বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদ (বিপিসি) ও বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বাকশিস) নেতারা। তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে‘শিক্ষা সার্ভিস কমিশন’ গঠনের দাবি জানিয়েছেন। শিক্ষক নেতারা সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ৯ দফা ও শিক্ষাব্যবস্থার মানোন্নয়নে ৯ দফা দাবি উপস্থাপন করেন। 

শুক্রবার (৪ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি‘র সাগর-রুনি মিলনায়তনে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান দুই সংগঠনের শিক্ষক নেতারা। 

তারা বলেন, সরকারি ও বেসরকারি বৈষম্য দূরীকরণের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ সময়ের দাবি। সুশাসনে বিপ্লব পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারকে সবার সহযোগিতা করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ট্রেজারার অধ্যাপক মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান, অধ্যক্ষ ইসহাক হোসেন, অধ্যক্ষ সাহিদুন নাহার, শিক্ষক নেতা লিয়াকত আলী, অধ্যক্ষ রেজাউল কবির, অধ্যাপক সৈয়দ মুহাম্মদ ইউসুফ, অধ্যাপক ইলিম মোহাম্মদ নাজমুল হোসেন, অধ্যক্ষ রফিকা আফরোজ, অধ্যক্ষ জহিরউদ্দিন আজম, অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন মন্ডল, অধ্যক্ষ এম. এ. মোনায়েম, অধ্যাপক হোসনে জাহান, অধ্যাপক কানিজ সালমা, অধ্যাপক আল মামুনসহ অনেকে।

আরও পড়ুন : দেশের এক-চতুর্থাংশ ইংরেজি শিক্ষকেরই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নেই

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটিগুলো শিক্ষকদের ওপর নির্যাতন করে বলে অভিযোগ তুলে সংগঠন দুটির নেতারা এগুলো প্রতিকারের দাবি জানান। তারা বলেন, আদর্শ শিক্ষকরা এক চরম হতাশার মধ্যে দিনযাপন করছে। ফলে সৃজনশীল চিন্তার উন্মেষ ঘটার কোনো অবকাশ তো নেই, বরং তাদের সাধারণ দায়িত্ব পালন করার স্পৃহাও দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ করার সুস্পষ্ট দাবি জানাচ্ছি, তবে যতদিন জাতীয়করণ করা সম্ভব হচ্ছে না সেই অন্তর্বর্তী সময়কালে কিছু দাবি পূরণ করতে হবে। 

শিক্ষাব্যবস্থার মানোন্নয়নে বাকশিস-বিপিসির পক্ষ থেকে জানানো দাবিগুলোর মধ্যে আছে, সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের অনুরূপে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট এবং অন্যান্য ভাতা যেমন- বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দিতে হবে। 

সরকারি কলেজের অনুরূপ পদ্ধিতিতে সমযোগ্যতা ও সমঅভিজ্ঞতা সম্পন্ন বেসরকারি কলেজের শিক্ষকদের সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপকের পদে পদোন্নতি দিতে হবে এবং উচ্চতর ডিগ্রির জন্য উচ্চতর বেতন স্কেল দিতে হবে। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুরূপ নিয়মে বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থায় বদলি প্রথা চালু করতে হবে। 

সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ন্যায় আনুপাতিক হারে শিক্ষা প্রশাসনের (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষাবোর্ড, নায়েম ও এনসিটিবি ইত্যাদি) গুরুত্বপূর্ণ পদে যোগ্যতাসম্পন্ন বেসরকারি শিক্ষকদের লিয়েন-ডেপুটেশনে নিয়োগদান করতে হবে এবং মানসম্মত শিক্ষা বিস্তারের স্বার্থে বেসরকারি শিক্ষকদেরকে দেশে বিদেশে প্রশিক্ষণ-সেমিনার সিম্পোজিয়াম ও ওয়ার্কশপে যোগদানের ব্যবস্থা করতে হবে। 

আরও পড়ুন : বিশ্ব শিক্ষক দিবস থেকেই এমপিও শিক্ষকদের ইএফটিতে বেতন দেয়া শুরু

শিক্ষকদের মর্যাদা ও অধিকার এবং দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কিত ইউনেস্কো ও আই.এল.ও-এর সনদ ১৯৬৬ বাস্তবায়ন করতে হবে। 

শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের লক্ষ্যে যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক নিয়োগের জন্যে স্বতন্ত্র ‘শিক্ষা সার্ভিস কমিশন’ গঠন করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই স্থানীয়ভাবে নিয়োগ দেয়া যাবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষা কার্যক্রম নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনুমোদন দানকারী বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক নিয়মিতভাবে একাডেমিক পরিদর্শন ব্যবস্থা করতে হবে। 

শিক্ষাঙ্গনে দলাদলি ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা দূর করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ে তোলার লক্ষে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে গভর্নিংবডি-ম্যানেজিং কমিটি প্রথা বিলুপ্ত করে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার অনুরূপ নিয়ম-নীতি প্রবর্তন করতে হবে। 

সরকারি কলেজের অনুরূপে বেসরকারি কলেজের জনবল কাঠামো প্রবর্তন করতে হবে এবং বেসরকারি কলেজে ডিগ্রি (অনার্স) ও মাস্টার্স পাঠদানরত শিক্ষকদেরকে এমপিওভুক্ত করতে হবে।

সরকারি কলেজের অনরূপে বেসরকারি শিক্ষকদেরও পূর্ণাঙ্গ পেনশন চালু করতে হবে।

রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যে অপরিকল্পিতভাবে যত্র-তত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা না করে জরিপের মাধ্যমে কেবল মাত্র
চাহিদার ভিত্তিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি দিতে হবে।

সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ৯ দফা দাবি উপস্থাপন করেন বিকাশিস-বিপিসির নেতারা। সেগুলোর মধ্যে আছে, ভেঙে পড়া আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং বিধ্বস্ত অর্থনীতি স্বাভাবিক করতে হবে।

স্বৈরশাসকের আমলে সরকার প্রভাবিত পক্ষপাতমূলক বিচার ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

দলীয় প্রশাসন ও দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি থেকে জাতিকে রক্ষায় সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

ভোটাধিকারবিহীন নির্বাচনে যারা জড়িত তদন্ত সাপেক্ষে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

বিতর্কিত শিক্ষা কারিকুলামসহ নানাভাবে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া শিক্ষাব্যবস্থা রক্ষার জন্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ
করতে হবে।

গণমাধ্যমের কন্ঠরোধ করে রাখার এবং সাংবাদিক ও গণমাধ্যমসেবীদের ওপর নির্যাতনের অবসান ঘটিয়ে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতে হবে এবং সাংবাদিক ও গণমাধ্যমসেবীদের স্বাধীনভাবে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে দেওয়ার জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

আকাশছোঁয়া দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কঠোর ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে।

সমাজ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র চাঁদাবাজিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। এর থেকে পরিত্রাণের জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ
করতে হবে।

ছাত্র-জনতার এ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে শহীদ ও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে প্রয়োজনীয় সাহায্য ও সহযোগিতা দান করতে হবে।