১৩ আগস্ট ২০২৪, ২২:২৮

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দল নিরপেক্ষ ভিসি-প্রোভিসি চায় শিক্ষক নেটওয়ার্ক

  © লোগো

শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ বিভিন্ন প্রশাসক পদত্যাগ করেছেন। সেই জায়গায় সৎ, বিদ্বান ও দল-নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়োগের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।

মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীনের পাঠানো এক বিবৃতি এ দাবি জানায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠনটি।

বিবৃতি বলা হয়, একটি দক্ষ জাতি গঠনে শিক্ষার বিকল্প নেই। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষাব্যবস্থা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসন ও উপকরণ সংকট, ক্ষমতাসীনদের দলভুক্ত করার চাপ ও নির্যাতন যেমন আছে, তেমনই আছে শিক্ষক ও প্রশাসনের জবাবদিহি এবং স্বায়ত্তশাসনকে ধ্বংস করে দেওয়ার নানামুখী পদক্ষেপ। এছাড়াও শিক্ষাক্ষেত্রে অপ্রতুল বাজেট বরাদ্দ, গবেষণার অভাব, শিক্ষক নিয়োগে নানা অনিয়ম, প্রশাসক নিয়োগে দলীয়করণসহ বিভিন্ন সমস্যায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আষ্টেপৃষ্ঠে বাধা পড়েছে। এ ধরণের সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নেতৃত্বে পরিবর্তন, যা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা লক্ষ করছি, ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসকেরা একযোগে পদত্যাগ শুরু করেছেন। এতে করে ক্যাম্পাসগুলোতে প্রশাসনিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এ শূন্যতার মধ্যে বিভিন্ন দলীয় শিক্ষকদের সেই পদ পূরণে প্রচুর দৌড়-ঝাঁপ করতে দেখা যাচ্ছে। অথচ তাদের অনেকেরই শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অধিকারের পক্ষে থাকার, নিপীড়নের বিরুদ্ধে, বিগত সরকারের ফ্যাসিবাদী উন্নয়ন রেটোরিকের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান থাকার নজির নেই। শিক্ষক ও ছাত্ররাজনীতির যে অগ্রহণযোগ্য পুরোনো ধরন, পুরো জাতিই তার বদল চায়। আর কোনও দলীয় ব্যক্তিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষপদে নিয়োগ না দেওয়াই হতে পারে তার অন্যতম পূর্বশর্ত।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিজ দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত থাকেন তাদের পক্ষে বিশ্ববিদায়লয়গুলোকে বৈশ্বিক মানে উন্নীত বা এগুলোর গণতন্ত্রায়ণ করা সম্ভব না। এ জন্য প্রয়োজন এমন শিক্ষকদের যারা সৎ, গুণী, ন্যায়-নীতিবান, যাদের দলীয় লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি নয় বরং শিক্ষার্থীবান্ধব, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অধিকার প্রশ্নে উচ্চকণ্ঠ ও প্রতিবাদী হওয়ার নজির আছে।

দলীয় শিক্ষক রাজনীতির বাইরে, অনেক শিক্ষক স্বাধীনভাবে গত দেড় দশক ধরে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ভাবছেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ অনিয়ম প্রতিরোধে দমন-পীড়ন সব তুচ্ছ করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অধিকারের প্রশ্নে সব সময় হাজির থেকেছেন কিংবা চুপ করে ক্ষমতাসীনদের পক্ষাবলম্বন বা ছায়া হিসেবে সুবিধা ভোগ করেননি। এমন শিক্ষকদের মূল্যায়ন হওয়া প্রয়োজন জানিয়ে সংগঠনটি আরও বলে, এ প্রক্রিয়ায় আন্দোলনকারী নির্দলীয় শিক্ষার্থীদের ভূমিকাও বিবেচনা করা যেতে পারে। পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন এবং শিক্ষা কমিশন গঠন করাও জরুরি বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনসহ বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রয়োজনীয় গণতান্ত্রিক সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকারকে মনোযোগী ও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক বলে, কেবল দলনিরপেক্ষ নামি একাডেমিকই নন, রুগ্ন বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে যারা বরাবরই ভাবেন এবং সেই পরিবর্তনগুলো আনতেও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এমন প্রশাসক নির্বাচন করার দাবি জানাচ্ছি।