কোটা কখনো মেধার বিকল্প হতে পারে না: ইউট্যাব
সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহালে আদালতের রায়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপিপন্থী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)। একইসঙ্গে কোটা প্রথা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছে সংগঠনটি। আজ বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) এক বিবৃতিতে এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদ হাসান খান।
বিবৃতিতে তারা বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৫৩ বছর আগে। এমন একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশে কোটা কখনোই মেধার বিকল্প হতে পারে না। সুতরাং, চাকরিপ্রত্যাশী লাখ লাখ তরুণ শিক্ষার্থী সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে যে আন্দোলন করছে তা শুধু প্রাসঙ্গিক নয়, সেটি অত্যন্ত ন্যায্য এবং যৌক্তিক। আমরা শিক্ষক সমাজ তাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানাই। কেননা, পুনরায় কোটা ফিরে আসা মানে দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থীর দাবি ও আন্দোলনের সঙ্গে প্রহসন।
নেতৃদ্বয় বলেন, ২০১৮ সালে সারাদেশে কোটাবিরোধী আন্দোলন ব্যাপক আকার ধারণ করে। সে সময় ভোট ডাকাতির মাধ্যমে গঠিত ক্ষমতা দখলকারী সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা প্রত্যাহারের আশ্বাস দিয়েছিলেন। এখন আবারও আদালতকে ব্যবহার করে সেই কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল করেছে। এটি স্পষ্টই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা। আওয়ামী লীগ সরকার প্রতারক বলেই বারবার জনগণের সঙ্গে ধোঁকাবাজি করছে।
ইউট্যাবের শীর্ষ দুই নেতা বলেন, আন্দোলনকারীরা জানায়- ২০১৮ সালে সারা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে অন্যায্য ও অযৌক্তিক ৫৬ শতাংশ কোটার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। গণআন্দোলনের প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সরকারি চাকরি (নবম-ত্রয়োদশ গ্রেড) থেকে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের ঘোষণা দিয়ে পরিপত্র জারি করে। কোটা বৈষম্য নিরসন ছিল শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীদের প্রাণের দাবি। গত ৬ বছর ধরে সেই অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে নিয়োগ হচ্ছে এবং একটি মেধাভিত্তিক দক্ষ প্রশাসন তৈরিতে শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রস্তুত করছে।
তারা আরও বলেন, অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, গত ৫ জুন মহামান্য হাইকোর্ট সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল করতে রায় দিয়েছেন এবং ২০১৮ সালে জারিকৃত সরকারের পরিপত্রকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। আমরা মনে করি, হাইকোর্টের রায়ে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি।
এরইমধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় আপাতত বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বিষয়টি নিয়ে আপিল বিভাগে শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। ফলে পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার পর কোটা নিয়ে নিয়মিত আপিল করার নির্দেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত। আমরা এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন।
ইউট্যাবের নেতৃদ্বয় বলেন, আসলে দেশে গণতান্ত্রিক ও জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার না থাকায় যখন যা খুশি তারা নিজেদের স্বার্থে করছে। সরকার দেশের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষকে দমনের লক্ষ্যে বিভিন্ন কালাকানুন করেছে। কিন্তু দেশের তরুণ-যুবকরা এগিয়ে এসে প্রতিরোধ করলে আগামীতে কেউ ভোট চুরি করে ক্ষমতায় যেতে পারবে না। কোনো কালাকানুনে জনগণের দাবিকে আটকিয়ে রাখা যায় না। আমরা শিক্ষক সমাজের পক্ষে চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবি জানাই।