সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রত্যাহারের দাবিতে রুয়েট শিক্ষক সমিতির মৌন মিছিল
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) মৌন মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন শিক্ষকেরা। সে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল ও স্বতন্ত্র সুপারগ্রেড প্রবর্তনের দাবি জানানো হয়েছে।
রবিবার (১৯ মে) সকাল সাড়ে ১০টার সময় এই কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকেরা। সকাল সাড়ে ১০টার সময় রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে থেকে মৌনমিছিল বের করা হয়। পরে সেই মিছিল রুয়েটের প্রধান ফটকের সামনে গিয়ে মানববন্ধন করেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. কামরুজ্জামান রিপন, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. ফারুক হোসেন, শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. রবিউল আওয়াল, যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও শিক্ষক সমিতির সদস্য মো. আবু সাইদ, মানবিক (ইংরেজি) বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আহসান হাবীব প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সরকার গত বছর মার্চে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের নতুন সর্বজনীন পেনশন বাধ্যতামূলক করার ঘোষণা দিয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে শিক্ষকদের প্রতি অবিচার করা হবে। এ ছাড়া আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তও হবো। সরকারের একটি কুচক্রী মহল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উত্তেজিত করতেই এই ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। আমরা খুব ভালো করেই জানি সরকার এটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বাস্তবায়ন করতে পারবে না। আর শিক্ষকরাও এটি বাস্তবায়ন হতে দিবেন না। আমরা রাজপথে ধারাবাহিক আন্দোলনে থাকবেন।
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. কামরুজ্জামান রিপন বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে আগেই এই সর্বজনীন পেনশন নীতিমালা প্রত্যাখান করেছি। আজকে মানববন্ধন থেকে আবারও প্রত্যাখান করলাম। যতদিন পর্যন্ত এই নীতিমালা প্রত্যাহার না হবে, ততদিন পর্যন্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সবাই মাঠে থাকবেন।
এই কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আশা করছি তিনি এ বিষয়ে দ্রুত হস্তক্ষেপ করবেন। আগামী ২৬ মে প্রত্যেকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একসঙ্গে মানববন্ধন হবে। ২৮ মে সারা দেশে ২ ঘণ্টার কর্মবিরতি আছে, আগামী ৬ জুন অর্ধবেলা কর্মবিরতি রয়েছে। পয়লা জুলাই থেকে যদি নীতিমালা প্রত্যাহার না করা হয়, তবে শিক্ষক ফেডারেশনের সিদ্ধান্তে লাগাতার কর্মবিরতি চলবে। তিনি এইসব কর্মসূচিতে সবাইকে অংশ নিতে আহ্বান জানান।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এখানে এই নীতিমালা প্রত্যাহার করতে হবে। বহু আগে থেকেই আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন স্কেল ও স্বতন্ত্র সুপারগ্রেড দেওয়া হবে। সর্বজনীন পেনশন নীতিমালা দ্রুত প্রত্যাহার করে স্বতন্ত্র বেতন স্কেল ও স্বতন্ত্র সুপারগ্রেড ঘোষণা করা হোক।
শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রবিউল আওয়াল বলেন, সরকারের একটি কুচক্রী মহল সুন্দরভাবে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্ত পরিবেশ নষ্ট করার জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কেল চালু করতে চাচ্ছে। এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সকলকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। এটি কোনোভাবে বাস্তবায়ন করতে দেওয়া যাবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলনে থাকা দরকার।
শিক্ষক সমিতির সদস্য মো. আবু সাইদ বলেন, এখানে ভাবার দরকার নেই যে কে কোন দলের। একটা কুচক্রী মহল চাচ্ছে এই দেশের মধ্যে অশান্ত করতে। এদেশে কোনো ঝামেলা নেই। ওই মহল যদি শিক্ষকদের উত্তেজিত করতে পারে, এটা কিন্তু সরকারের জন্যই ক্ষতিকর। তাঁরা সরকারের বিরুদ্ধে নন। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে, সরকারকে বিষয়টা বোঝানো। শিক্ষাকে নষ্ট করে দেওয়া যাবে না।
সহকারী অধ্যাপক আহসান হাবীব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে কড়োজোড়ে অনুরোধ তিনি যেন শিক্ষকদের জন্য নেওয়া সিদ্ধান্ত সর্বজনীন পেনশন নীতিমালা প্রত্যাহার করে নেন। এই দাবি না মানা পর্যন্ত শিক্ষকসমাজ এই আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
উল্লেখ্য, গত বছর সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন-২০২৩ প্রণয়ন করা হয়। গত ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এক প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেখানে বলা হয়, চলতি বছরের ১ জুলাইয়ের পর থেকে স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার চাকরিতে যাঁরা নতুন যোগ দেবেন, তাঁরা বিদ্যমান ব্যবস্থার মতো আর অবসরোত্তর পেনশন-সুবিধা পাবেন না। তার পরিবর্তে নতুনদের বাধ্যতামূলক সর্বজনীন পেনশনের আওতাভুক্ত করা হবে।
চার শ্রেণির জনগোষ্ঠীর জন্য চার ধরনের পেনশন স্কিম রয়েছে। এগুলো হলো প্রগতি, সুরক্ষা, সমতা ও প্রবাসী। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের জন্য ‘প্রগতি’, স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য ‘সুরক্ষা’, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ‘প্রবাসী’ এবং নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য ‘সমতা’। এ ছাড়া স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার চাকরিতে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের প্রত্যয় স্কিম।